গৌতম চক্রবর্তী: ব্লগারকে দেখা গেল সুন্দরবনের জঙ্গলে নেমে শুটিং করতে।
রীতিমতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে কাদা মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি সেই শুটিং করছেন। এমনটাই ভিডিওতে জানান তিনি। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতেও আপলোড করেছেন ওই ব্লগার। সেখানে নিজের মুখে জানিয়েছেন তিনি কতটা বিপদের মধ্যে আছেন। আর এই ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় সুন্দরবন। প্রশ্ন উঠেছে, কোনও ব্লগার সুন্দরবনে পর্যটক হিসেবে এসে এভাবে জঙ্গলের মধ্যে নেমে শুট করতে পারেন কিনা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা। বন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এক ইউটিউবার সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে ভিডিও করেছেন। সেখানে তিনি বলছেন, ‘যে–কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে। বাঘের আক্রমণ হতে পারে। তিনি বাঘের ডেরায় রয়েছেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি ওই ভিডিও করেছেন।’
নদীর চরে টাঙানো ফেন্সিংয়ের জাল কেটে কীভাবে বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়ে এবং সেই এলাকাটি কেমন ভিডিওতে তারও বর্ণনা দেন তিনি। আর তাতেই সুন্দরবনের জঙ্গলে এভাবে ব্লগারদের প্রবেশ করা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই বন দপ্তর এবং ব্যাঘ্র প্রকল্পের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে। খতিয়ে দেখছেন বন দপ্তরের আধিকারিকরা। সাধারণত ট্যুরিস্টদের জঙ্গলে নামার কোনও অনুমতি থাকে না। ভ্রমণের শুরুতেই বারবার বন দপ্তরের তরফ থেকে তার নির্দেশিকাও জারি করা হয়। গাছের পাতায় হাত দেওয়া, প্রাণীদেরকে উত্ত্যক্ত করা, এমনকী জঙ্গলে নামার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। তারপরও সেই সমস্ত নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে বন দপ্তরের নজরদারি এড়িয়ে কী করে এই সব ব্লগার জঙ্গলে ঢুকছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বন আধিকারিক মিলন মণ্ডল বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন বন দপ্তর ও ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা।
অন্যদিকে, ওই ব্লগারের কথায়, তিনি বাঘের জঙ্গলে নামেননি। হোটেলের সামনে লোকালয়ে নেমেছিলেন। তাহলে তিনি যে ব্লগ পরিবেশন করলেন দর্শকদের সামনে, সেটা সঠিক নয়? প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি তিনি। ব্যাঘ্র সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, এই সব ব্লগারের জঙ্গলে ঢোকা একেবারে বন্ধ হওয়া উচিত। এটা ট্যুরিজমের পরিপন্থী। এর ফলে শুধু সুন্দরবনের ট্যুরিজম নয়, সমস্ত জঙ্গল ট্যুরিজমের ক্ষতি হবে। শুধু তাই নয়, সুন্দরবন সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছাবে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ ও পরিবেশবিদের কাছে। ট্যুরিজমকে বিপথে পরিচালনা করবে। ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জাস্টিনস জোন্স বলেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে লোকালয় সংলগ্ন কোনও জঙ্গল থেকে এই ছবি তোলা হয়েছে।