• ইঁদুর-গিনিপিগ নয়, ওষুধ তৈরিতে মলি মাছের উপর গবেষণা করে সফল বাঙালি গবেষক
    আজকাল | ৩০ জুলাই ২০২৩
  • মিল্টন সেন, হুগলি: সফল গবেষণা।

    চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা ক্ষেত্রে খুলল নতুন দিক। পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আর ইঁদুর বা গিনিপিক নয়। এবার মলি মাছে পরীক্ষা চালিয়ে মিলল সাফল্য। সারে ছয় বছর ধরে গবেষণা চালানোর পর মিলল স্বীকৃতি। ইঁদুর, গিনিপিগ না, মলি মাছকে মডেল করে গবেষণায় সফল শ্রীরামপুরের বাঙালি গবেষক ডক্টর মৃত্যুঞ্জয় মজুমদার। সম্প্রতি পেটেন্ট জার্নালে প্রকাশিত হল তাঁর গবেষণার বিষয়। মৃত্যুঞ্জয় বাবুর দাবি গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর মলি মাছের এই মডেল বিশ্বে প্রথম। তিনি মনে করেন, এর ফলে কম করে ৯০ শতাংশ কমবে গবেষণার খরচ। পাশাপাশি মলি মাছ বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় বাড়বে গবেষণার পরিসর। পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর পর প্রাণীর মৃত্যুর কোনও সম্ভাবনা থাকবে না। একইসঙ্গে তৈরি হবে ভবিষ্যতে বাজারে কম দামে ওষুধ মেলার সম্ভাবনা। 

    শ্রীরামপুর হাউজিং স্টেটের বাসিন্দা, মৃত্যুঞ্জয় বাবু হরিণঘাটার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মোকলজিতে পিএইচডি করেন। বর্তমানে নদিয়ার চকদা নেতাজী সুভাষ বোস ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাসিতে ফার্মাকোলজির বিভাগীয় প্রধান। ছোটো থেকেই তিনি পশু পাখি পছন্দ করেন। তাঁর বাড়িতে রয়েছে বিভিন্ন বিদেশি পাখি ও পায়রা, রং বেরঙের মাছে ভরা অ্যাকোয়ারিয়াম। তাদের নিয়েও যেখানে তিনি চালান নানা গবেষণা। দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর আগে সেই কলেজেরই কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিনের উপর গবেষণা শুরু করেন মৃত্যুঞ্জয় বাবু। টানা গবেষণার পর আসে সাফল্য। চলতি বছরের ২৬ মে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অ্যাক্ট ইন্ডিয়া জার্নালে প্রকাশিত হয় সেই বিষয়। এই বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে গবেষণা চালিয়েছেন ডক্টর অর্নব সামন্ত। সহকারী ছিলেন সৌরভ রায়, প্রদীপ রায় এবং নিলেন্দু শেখর সরকার, ঐন্দ্রিলা বৈশ্য এবং ওই বিভাগের পড়ুয়ারা। 

    মলি মাছের উপর গবেষণা কেন? এই প্রসঙ্গে মৃত্যুঞ্জয় বাবু বলেছেন, প্রথমত পরীক্ষার জন্য ইঁদুর, হ্যামস্টার, বা গিনিপিগের মডেল খুঁজে পাওয়া একটা সমস্যা। পরবর্তী সমস্যা যে প্রাণীর উপর গবেষণা করা হয় সেই প্রাণীর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। প্রাণী মৃত্যুর এই বিষয়টা কোনও কালেই তাঁর পছন্দ ছিল না। তাছাড়া এই সব প্রাণীকে মডেল করে গবেষণা করাটাও খুবই খরচ সাপেক্ষ। মলি মাছের ক্ষেত্রে খরচ দশ ভাগের এক ভাগ, আর প্রাণী মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই। মলি মাছের বৈজ্ঞানিক নাম পোয়ে সিলিয়া স্পিনক্স। এই মাছ ভিভিপোরাস প্রজাতির এই মাছ ডিম নয় বাচ্চা পারে। তাছাড়া সহজলভ্য হওয়ায় এই মাছে গবেষণা করা যায় অনায়াসে। একটি অ্যাকোয়ারিয়ামে মেল ফিমেল মলিকে মিট করানোর পর তাদের পৃথক করে রাখা হয়। ১৯ দিনের মাথায় ফিমেল মলি মাছকে খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে ওষুধ দেওয়া হয়। মৃত্যুঞ্জয় বাবুর মতে এই গবেষণা থেকে যে ওষুধ বাজারে আসবে তার দামও হবে অনেক কম।

    ছবি: পার্থ রাহা

     
  • Link to this news (আজকাল)