• ঠাঁই হারানোর আশঙ্কা আদিবাসী পরিবারের
    আনন্দবাজার | ৩০ জুলাই ২০২৩
  • ডাইন অপবাদে প্রায় তিন বছর ঘরছাড়া থাকার পরে বোলপুরের আদিবাসী পরিবারের ঠাঁই হয়েছিল পুরসভার কমিউনিটি হলে। কিন্তু, এ বার ওয়ার্ড কমিটি কমিউনিটি হল কয়েক দিনের মধ্যে খালি করে দিতে বলায় বিপাকে পড়েছে ওই পরিবার। বর্ষার সময় ছোট সদস্যদের নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবারটি।

    পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে বোলপুর থানার সিয়ান মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মণিকুণ্ডুডাঙা গ্রামে হঠাৎ করে বেশ কিছু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন ও গ্রামের মোড়লের দু’টি ছাগল ও এক প্রতিবেশী যুবকের চারটি হাঁস মারা যায়। ওই পরিবারের অভিযোগ, গ্রামের মোড়ল সালিশি সভা বসিয়ে ওই আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের গ্রামছাড়া করা নিদান দেন। এর পরেই গ্রামবাসীদের একাংশ ওই পরিবারের উপরে চড়াও হয়ে তাঁদের ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধর করে শিশু-সহ ১৪ সদস্যকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। সেই থেকে আও তাঁরা ফিরতে পারেননি নিজেদের ভিটেয়।

    পরিবারটি কখনও আত্মীয় বাড়িতে, কখনও খোলা আকাশের নীচে, কখনও বা প্রতীক্ষালয়ে দিন কাটিয়েছে। বাড়ি ফিরতে চেয়ে বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও সুরাহা মেলেনি বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। গত এপ্রিলে গ্রামে ফিরতে চেয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে ধর্নায় বসেন ওই পরিবারের সদস্য এবং তফসিলি জাতি-জনজাতি অন্যান্য অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের সদস্যেরা। এর পরেই বোলপুরের জামবুনি বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি হলে ওই পরিবারের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

    সেই থেকে ঘরছাড়া পরিবারটির ঠিকানা ছিল এই কমিউনিটি হল। কিন্তু, তিন মাস ধরে কমিউনিটি হলে তাঁরা থাকায় ওয়ার্ডের তরফে ছোটখাটো উৎসব, অনুষ্ঠান, বৈঠক কোনও কিছুই করা যাচ্ছে না বলে ওয়ার্ড কমিটির দাবি। ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা কিছু জন কমিউনিটি হলটি খালি করে দিতে বলেছেন ওই পরিবারকে। ৫ নম্বর ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর রাজেশ শর্মা বলেন, “প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছিল ওই পরিবারকে কিছুদিন রাখা হবেয় কিন্তু, তিন মাস ধরে তারা ওখানেই রয়েছে। ফলে কমিউনিটি হল আর কাউকে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। সে কারণেই আমরা ওই পরিবারকে খালি করে দিতে বলেছি।”

    এতে চিন্তায় পড়েছে ঘরছাড়া পরিবার। তাদের এক পুরুষ সদস্য বলেন, “প্রশাসনের তরফে আমাদের এখানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু, এ মাসের মধ্যেই হল খালি করে দিতে বলা হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা কোথায় যাব?’’ প্রশাসনের কাছে দ্রুত ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েথে পরিবারটি।তফসিলি জাতি-জনজাতি অন্যান্য অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের সভাপতি বৈদ্যনাথ সাহা বলেন, “আমরা আগেও বলছি, এখনও বলছি, সরকারকেই ওই পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে।” এ বিষয়ে মহকুমাশাসক (বোলপুর ) অয়ন নাথ বলেন, “পুরপ্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। ওই পরিবারকে কী ভাবে ঘরে ফেরানো যায়, তা নিয়ে আগামী সপ্তাহে আমরা বৈঠকে বসব।”

  • Link to this news (আনন্দবাজার)