• মণিপুরে হিংসা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গেলেন ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদরা
    আজকাল | ৩০ জুলাই ২০২৩
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: শনিবার উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরের হিংসা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে রওনা দিলেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ২০ জন সংসদ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

    ১৬টি রাজনৈতিক দলের ২০ জন সাংসদের ওই দলে আছেন কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরী, গৌরব গগৈ, ফুলো দেবী নেতাম, কে সুরেশ; তৃণমূল কংগ্রেসের সুস্মিতা দেব; আম আদমি পার্টির সুশীল গুপ্তা; শিবসেনা’র (ইউবিটি) অরবিন্দ সাবন্ত; ডিএমকে’র কানিমোঝি করুনানিধি; জনতা দল ইউনাইটেড’র রাজিব রঞ্জন সিং ও অনিল প্রসাদ হেগড়ে; সিপিআই’র সন্দোশ কুমার; সিপিআইএমের এ এ রহিম, আরজেডির মনোজ কুমার ঝা; সমাজবাদী পার্টির জাবেদ আলী খান; ঝাড়খান্ড মুক্তি মোর্চার মহুয়া মাঝি; এনসিপির পি পি পি মোহাম্মদ ফাইজল; আরএলডির জয়ন্ত সিং; ভিসিকের থিরু থোল থিরুমাভালাবান ও ডি রবিকুমার; আরএসপির এন কে প্রেমাচান্দ্রন; আইইউএমএল’র ইটি মোহাম্মদ বাসির প্রমুখ।

    শনিবার সকালে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে মণিপুরের উদ্দেশে রওনা দেন এই প্রতিনিধির দলের সদস্যরা। আজ দুপুরে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে পৌঁছন তাঁরা।

    ২৯ এবং ৩০ জুলাই-এই দু'দিন তাঁরা মণিপুরের হিংসা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখবেন, নির্যাতিত মহিলা ও দুর্গতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলবেন। রবিবার মণিপুরের রাজ্যপাল অনুসূইয়া উইকে’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পরে দিল্লি ফিরে এসে অনুমতি পেলে সংসদে এই বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। না হলে সংবাদ সম্মেলন করে মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি গোটা ভারতবাসীর সামনে তুলে ধরবেন।

    এই সফর নিয়ে কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানান, 'আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানে রাজনৈতিক ইস্যু নয়, মণিপুরের মানুষের ব্যথা বোঝার জন্য আমাদের এই সফর।' 

    তিনি আরও জানান, 'মণিপুরের উদ্ভূত সংবেদনশীল পরিস্থিতির একটি সমাধান খুঁজে বের করার জন্য আমরা ক্রমাগতভাবে সরকারের কাছে আবেদন করে আসছি। এটা আইন-শৃঙ্খলার অবনতির বিষয় নয়। ওখানে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এটা মণিপুরের প্রতিবেশী রাজ্যগুলোকেও প্রভাবিত করছে। কিন্তু সরকার তার দায়িত্ব পূরণ করেনি। তাই আমরা মণিপুরের মাটিতে বাস্তব পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে যাচ্ছি।' 

    তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব জানান, 'আমরা উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করব। মণিপুরের মানুষের বক্তব্য শোনাটা খুব জরুরি যে তারা কী চায়? রাজ্য সরকারের উচিত আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।' 

    ডিএমকে সংসদ সদস্য কানিমোজি করুণানিধি জানান, 'আমরা মণিপুরের সাথে মণিপুরের মানুষদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। আমরা তাদের জানাতে চাই যে আমরা তাদের পাশে আছি এবং তাঁদের হয়ে লড়াই করব। আমরা মণিপুরের রাজ্যপালের সাথে দেখা করার জন্য অনুমতি চেয়েছি। আমরা আশা করব প্রধানমন্ত্রী সংসদে মণিপুরের বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দিক।' 

    এদিকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সদস্যদের মণিপুর সফর নিয়ে তোপ দেগেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার, যুব কল্যাণ ও ক্রীড়া মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। কলকাতায় গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে অনুরাগ ঠাকুর বলেন, 'যাঁরা আজকে মণিপুর যাওয়ার ঢং করছেন, আমি তাঁদের কাছে এর আগেও জিজ্ঞাসা করেছি, কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধীরা পশ্চিমবঙ্গের যে সমস্ত জায়গায় মহিলাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে এবং নির্বাচনের সময় যাদের হত্যা করা হয়েছে-সে সমস্ত জায়গায় যাবে কি না?' 

    পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সাংসদ ও লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে নিশানা করে তিনি বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় পশ্চিমবঙ্গে হত্যাকাণ্ড চলেছে। ৫৭ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ক্ষমতায় আসার জন্য পশ্চিমবঙ্গে হত্যার খেলা হয়েছে। সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তাই অধীর চৌধুরীর কাছে আমার প্রশ্ন তাঁরা কি বিরোধী জোটের বাকি ১৯টি দলকে মণিপুরের পর পশ্চিমবঙ্গে আনবে? পশ্চিমবঙ্গে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের বাড়িতে কি যাবেন? রাজস্থানে প্রতিদিন মহিলাদের ওপর অত্যাচার করা হয়, তাঁদের ধর্ষণ করা হয়। সেখানকার মহিলাদের সাথে কংগ্রেসের কি কোনো সহানুভূতি নেই?

    উল্লেখ্য, গত ৩ মে থেকে গত কয়েক মাস ধরে মণিপুরে লাগাতার সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে বলে অভিযোগ। মহিলাদের উপর অত্যাচার, বিবস্ত্র করে ঘোরানো, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, বোমা ও গুলির ঘটনা ঘটছে। সহিংসতায় এখনও পর্যন্ত দেশে শতাধিক মানুষের প্রাণ হারানোর খবর মিলেছে।

    সম্প্রতি ২ মহিলাকে বিবস্ত্র করে প্যারেড করানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে যায় গোটা দেশজুড়ে। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে উত্তাল হয়েছে সংসদ। এমন এক পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদদের মণিপুর সফর।
  • Link to this news (আজকাল)