• প্রায় ৬৫ ঘণ্টা পর শিশুর দেহ উদ্ধার হতেই উত্তপ্ত বেনাডিহি
    বর্তমান | ৩০ জুলাই ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: প্রায় ৬৫ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে উদ্ধার হল আট বছরের শিশুর দেহ। যা নিয়ে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাথরা অঞ্চলের বেনাডিহি এলাকা। মৃতের নাম সাইফুল ইসলাম(৭)। তাকে খুনের সন্দেহে সাইফুলের সৎ দাদা ও তার এক আত্মীয় বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিস বাহিনী। কিন্তু, উত্তেজিত জনতার কাছে কার্যত নিরুপায় হয়ে যায় পুলিস। পুলিসের সামনেই একাধিক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। 

    স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে গিয়েছে, গত ২৬জুলাই বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ির ১০০ মিটারের মধ্যে থেকেই সাইফুল নিখোঁজ হয়। পরিবারের দাবি, সাইফুল ও তার বোন পাড়ার দোকানে গিয়েছিল। ফেরার সময় হঠাৎ তার বোন পিছন ফিরে দেখে দাদা নেই। ঘটনার পরই খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। পাড়ার সমস্ত জায়গা তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়ায় পরিবারের লোকজন। কিন্তু, কোনও হদিশ মেলেনি। সন্দেহ গিয়ে পড়ে শিশুটির সৎ দাদা আনিসুর মণ্ডলের উপর। সে সাইদুল মণ্ডলের প্রথম পক্ষের ছেলে। দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান সাইফুল। আনিসুরের সঙ্গে তার বাবার সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। সম্পত্তি থেকে শুরু করে পরিবারের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মাঝেমধ্যেই প্রবল অশান্তি হতো। তা নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভে ফুঁসছিল আনিসুর।

    অভিযোগ, ১৫দিন আগে অশান্তির সময় বাবাকে ব্যাপক মারধর করে আনিসুর। সাইফুলকে সে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছিল। তাই সাইফুল নিখোঁজ হওয়ার পর আনিসুরকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যদিও সে কিছুই জানে না বলে দাবি করে। 

    শনিবার দুপুরে পাড়ার পাশেই কংসবতী নদীতে স্নান করতে গিয়ে কয়েকজন দুর্গন্ধ পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তাঁরা দেখেন, ঝোপের মাঝে একটি ত্রিপল ঢাকা কিছু পড়ে রয়েছে। ত্রিপল টেনে সরাতেই বেরিয়ে আসে ছোট্ট সাইফুলের পচাগলা দেহ। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় পরিবারকে। খবর পৌঁছয় থানাতেও। গ্রামবাসীরা এনিয়ে ফের আনিসুরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তখনই আনিসুর স্বীকার করে, গোকুল গায়েন ও সে খুন করেছে। কে এই গোকুল গায়েন? পুলিস সূত্রে খবর, গোকুল আনিসুরের দূর সম্পর্কের মামা। এরপর গ্রামবাসীরা গোকুলের বাড়িতে চড়াও হয়। উত্তেজিত জনতাকে আসতে দেখে চম্পট দেয় গোকুল। তার বাড়িতে তল্লাশি করতেই মেলে পিস্তল, অ্যাসিড, রক্তমাখা ছুরি। সেইসঙ্গে বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। 

    শিশুর মামা ইয়া খান বলেন, সাইফুলকে নৃশংসভাবে খুন করেছে গোকুল। তার বাড়িতেই দেহ রাখা ছিল। দুর্গন্ধ বেরতেই সে দেহ ঝোপে ফেলে দিয়ে আসে।

    এরপরই উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তদের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পাশাপাশি আরও কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিসকে হিমশিম খেতে হয়। গোকুলকে গ্রামবাসীরা ধাওয়া করলেও সে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। তবে আনিসুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস।

    শিশুর মা সারেতুন বিবির অভিযোগ, আনিসুরই আমার ছেলেকে খুন করেছে। ও অনেকবার বলেছিল তোর ছেলেকে আর পাবি না। তোর কোল শূন্য করে দেব। ওর কথাই সত্যি হল। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।  মৃত শিশুর শোকাহত পরিবার।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)