• Homoeopathic Medical Recruitment Scam : কেন্দ্রীয় হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যালে নিয়োগে গুচ্ছ অনিয়মের অভিযোগ
    এই সময় | ৩০ জুলাই ২০২৩
  • অনির্বাণ ঘোষ কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারি চিকিৎসা-শিক্ষায় যুক্ত অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর কি আর্থিক ভাবে অনগ্রসর হতে পারেন? একটি কেন্দ্রীয় সরকারি হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে সে প্রশ্নই দানা বাঁধছে। শুধু তা-ই নয়, নিয়োগে সংরক্ষণের নিয়ম মানা হয়নি বলেও অভিযোগ। এমনকী, সদ্য শেষ হওয়া সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষার মান নিয়েও ভূরি ভূরি প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকরাই।

    এককথায়, শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির আবহে যখন রাজনৈতিক মহল সরগরম, সেখানে সল্টলেকের কেন্দ্রীয় সংস্থা, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হোমিয়োপ্যাথির (এনআইএইচ) নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও অনিয়ম সংক্রান্ত গুচ্ছ অভিযোগের বন্যা। এ নিয়ে নিরুত্তাপ কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক। ৫ মে চিকিৎসক-অচিকিৎসক মিলিয়ে এনআইএইচ-এর প্রায় ৮৬টি শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরোয়।

    শূন্যপদ ছিল পিয়ন, রাঁধুনি, আয়া, ওয়ার্ড বয়, ক্লার্ক, অ্যাসিস্ট্যান্ট রিসার্চ অফিসার, ডায়েটিশিয়ান, নার্স, আরএমও, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও প্রফেসর পদে। ২২, ২৩ ও ২৪ জুলাই লিখিত পরীক্ষাও হয়। এনআইএইচের আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, কোন অজ্ঞাত কারণে বেসিল নামের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা জানা নেই!

    নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মানা হয়নি ডায়নামিক অ্যাসিওরড কেরিয়ার প্রোগ্রেশন (ডিএসিপি) নীতি । পাশাপাশি নিয়োগের ব্যাপারে বর্তমান কর্মীদেরও কিছুই জানানো হয়নি। এনআইএইচের ফ্যাকাল্টিরা বিস্মিত কোটার নিয়ম লঙ্ঘন নিয়ে। এক শিক্ষক-চিকিৎসক বলেন, 'রেপার্টরি বিভাগে সব শূন্যপদেই তফসিলি জাতির প্রার্থী চাওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্র্যাকটিস অফ মেডিসিনের প্রফেসর পদের জন্য আর্থিক ভাবে অনগ্রসর প্রার্থী চাওয়া হয়েছে। অথচ এই পদের জন্য আবেদনকারীকে ন্যূনতম অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হতে হয়। কোন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর আর্থিক ভাবে অনগ্রসর থাকবেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না কারও!'

    অনেকেরই অভিযোগ, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে। বিভিন্ন চিকিৎসক পদের জন্য আবেদন জমা পড়লেও পরীক্ষার প্রশ্ন ছিল কমন। চিকিৎসকদের পরীক্ষায় রেপার্টরি থেকে কোনও প্রশ্ন আসেনি। আবার অর্গানোন অফ মেডিসিন থেকেই প্রায় ৩০% প্রশ্ন এসেছে।

    দক্ষিণ কলকাতার এক চিকিৎসক আবেদনকারী বলেন, 'পরীক্ষায় পূর্ণমান কত, তা আগাম জানানো হয়নি । পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখলাম, পূর্ণমান ৪৫০। ১৫০টা প্রশ্ন ৩ নম্বর করে। ভুল হলে ১ নম্বর নেগেটিভ মার্কিং। আশ্চর্যের ব্যাপার, হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক বাছাইয়ের প্রশ্নপত্রে অ্যালোপ্যাথি থেকে ৫টা আর জেনারেল নলেজ থেকে ৩টে প্রশ্ন এসেছে! প্রশ্ন এসেছে আয়ুর্বেদ থেকেও!'

    তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না, একাধিক চিকিৎসক পদে তিনি আবেদন করার পরেও একটাই পরীক্ষা দিয়েছেন যেখানে, সেখানে বিভিন্ন পদের মেধাতালিকা কী করে তৈরি হবে! এনআইএইচের কর্মী-আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, রাজারহাটের দু’টি পরীক্ষাকেন্দ্রে দু’জন ভুয়ো পরীক্ষার্থী ধরা পড়লেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু পরীক্ষা না নিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। উঠেছে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগও।

    কার বা কাদের জন্য গুচ্ছ অনিয়ম, সে প্রশ্নে সোচ্চার হয়েছেন এনআইএইচের অনেকেই। তাঁদের প্রশ্ন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক আমলা-আধিকারিকের নিকট আত্মীয় যেখানে পরীক্ষার আবেদনকারী, সেখানে ওই সব আমলা-আধিকারিকরা কেন স্বার্থের সংঘাত এড়াতে সরে দাঁড়ালেন না দায়িত্ব থেকে?

    এনআইএইচের অধিকর্তা সুভাষ সিং অবশ্য মনে করেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাঁদের স্বার্থে ঘা লাগছে, তাঁরাই অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন। তাঁর দাবি, 'পুরো প্রক্রিয়াটাই চালাচ্ছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। আমরা শুধু সিলেবাস ও পদ সম্পর্কে ওঁদের বিস্তারিত জানিয়েছি। সংরক্ষণ কোটা থেকে শুরু করে পরীক্ষা, পূর্ণমান, প্রশ্নের মান, পরীক্ষা পরিচালনা—সবই ওঁদের দায়িত্ব। আমার বিশ্বাস, সব নিয়ম মানা হয়েছে ইউপিএসসি-র স্ট্যান্ডার্ড মেনে।'

    এ ব্যাপারে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি আয়ুষ মন্ত্রকের। আয়ুষ সচিব রাজেশ কোটেচা ফোন ধরেননি, জবাব দেননি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও। আয়ুষ উপদেষ্টা (হোমিয়োপ্যাথি) সঙ্গীতা এ দুগ্গলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি’র বাইরে আর কোনও কথা বলেননি। যদিও মন্ত্রক সূত্রে খবর, এই সব অনিয়মের কথা কানে গিয়েছে তাঁদেরও। তবে কী পদক্ষেপ হবে বা আদৌ হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
  • Link to this news (এই সময়)