• 'না খেতে পেয়ে মরবি...', বহু উপহাস উপেক্ষা করেও সুরের স্বপ্ন বুনছেন বিশ্বজিৎ
    এই সময় | ০২ আগস্ট ২০২৩
  • বাবার চায়ের দোকান, সেই রোজগারেই চলে সংসার। মা গৃহবধূ, পরিবার সামলান। ছাপোষা নিম্নবিত্ত পরিবার। তবে তারই মাঝে বুকে স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এক যুবক। নাম বিশ্বজিৎ কর্মকার। বাড়ি বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের জিড়রা গ্রামে। স্বপ্ন একটাই, গান গেয়ে জীবনে কিছু একটা করার।

    বিশ্বজিৎ বাংলায় স্নাতক। পাশ করেছেন বিএডও। একটা সময় গান গাওয়ার কোনও ভাবনাও ছিল না। এমনকী গানের প্রথাগত কোনও তালিমও নেই। তবে কলেজে পড়ার সময়ই জীবনের মোড় ঘুরে যায় বিশ্বজিতের। কলেজের নবীন বরণের অনুষ্ঠানে প্রথমবার গান করেন তিনি। আর তখনই তাঁর প্রতিভার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় সবার। পান বিপুল উৎসাহ। তারপরেই সংগীত নিয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এখন আর শুধু গানই করেন না বিশ্বজিৎ, সঙ্গে চলে গান লেখা বা সুর বাঁধাও।

    কলেজে গান গাওয়া শুরু বিশ্বজিৎ বলেন, 'আগে গান গাইতাম ন। কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রথম গান করি। ওখানে সবাই বলল, গানের দিকে ফোকাস কর, তোর গান হবে। তারপর থেকে গান গাওয়ার চেষ্টা করি। গ্রামের ছোটখাট মঞ্চে গান করি। তাঁরাও অনেক উৎসাহ দেন। তারপর চেষ্টা করলাম নিজের গানা বানাবো। তারপর নিজে গান বানালাম, লিখলাম, সুর করলাম। সেই গানকে অ্যালবাামে পরিণত করলাম। তারপর আপলোড করলাম ফেসবুক পেজে। তাতে সবই ভাল ভাল কমেন্ট করলেন, উৎসাহ দিলেন। সেই থেকে গানের প্রতি ভালবাসা বেড়েই চলেছে।'

    নিজেই করেন রেকর্ডিং গানের পথে বেশকিছু সহৃদয় মানুষের সহযোগিতাও পেয়েছেন বিশ্বজিৎ। তাঁর এক দাদা তাঁকে গান রেকর্ড করার সেট-আপ উপহার দিয়েছেন। সেখানেই নিজের গান রেকর্ড করেন তিনি। বিশ্বজিৎ বলেন, 'আমাদের মতো পরিবারে অ্যালবাম বানানো স্বপ্ন। আমার গান প্র্যাকটিসের কোনও সরঞ্জাম ছিল না। আমার এক দাদা আমায় ছোটখাট মিউজিক সেট-আপ গিফট করেছেন। গান নিয়েই এগোতে চাই।'

    বিড পাশ করেও এখনও কোনও চাকরি পাননি বিশ্বজিৎ। এই পরিস্থিতিতে তাঁর রোজগারের মাধ্যম বলতে গেলে একমাত্র এই গান। যদিও গান গাইতে গিয়ে কিছু মানুষের উপহাসেরও পাত্র হয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, 'অনেকে বলে তুই গান করছিস, তোর বাবা তো ভিখারি হয়ে যাবে। তাও চ্যালেঞ্জ ছাড়িনি, একদিন ঠিক জয় করবোই।' গান গেয়ে সফল হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বজিতের একটাই লক্ষ্য, বাবা-মা পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো।
  • Link to this news (এই সময়)