‘সঙ্কল্প শপথে’র নামে ব্লক-পঞ্চায়েত স্তরে সরাসরি হস্তক্ষেপ , রাজ্যের শাসনেও দখলদারি মোদির
বর্তমান | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: নামেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। মোদি জমানায় সবটাই আসতে হবে একটি ছাতার তলায়। একটি শাসনের অধীনে। এটাই এখন লাগাতার প্রক্রিয়া। রাজ্য সরকারি এক্তিয়ারকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে তাতেই নয়া সংযোজন ব্লক-পঞ্চায়েতের কর্মী ও আধিকারিকদের জন্য সরাসরি নির্দেশিকা জারি। আর তা করবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। আজ, শনিবার। দেশের ৫০০ ব্লকের আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি ও কর্মীদের নিয়ে ‘সংকল্প শপথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে নির্দেশিকা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। থাকবেন ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরের কৃষকরাও। রাজ্য, জেলা, মহকুমা, ব্লক এবং পঞ্চায়েত—এই প্রতিটি স্তরের প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব রাজ্য সরকার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতিষ্ঠানের। অর্থাৎ প্রশাসনিক বিভাগ ছাড়াও পুরসভা, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত—প্রতিটি ধাপই রাজ্য প্রশাসন দ্বারা চালিত। এই পর্যায়ে কেন্দ্র, বলা ভালো স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের অর্থ রাজ্যের শাসনে দখলদারি চালানো। সেটাই আজ হতে চলেছে।
ব্লকস্তরের উন্নয়ন কীভাবে হবে, সেই পরামর্শ ও নির্দেশিকা আজ সরাসরি দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর আগামী ৩ থেকে ৯ অক্টোবর চলবে সামগ্রিক কর্মশালা। বিরোধীদের প্রশ্ন, এভাবে প্রধানমন্ত্রী আগেও জেলাশাসক, পঞ্চায়েত প্রধানদের নানাবিধ নির্দেশ দিয়েছেন। আবার সেই এক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের অধিকারে বারংবার দখলদারির কারণ কী?
ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তফসিলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার বিভাজন করা হয়েছে নির্দিষ্টভাবে। সেখানেই নির্ধারণ করা রয়েছে তিনটি তালিকা। কেন্দ্রীয়, রাজ্য এবং কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ। অর্থাৎ কোন কোন বিষয়ের অধিকার রাজ্য সরকারের, কোনটা কেন্দ্রের এবং কোনগুলি যৌথ তালিকার অন্তর্ভুক্ত, তা স্পষ্ট এই তিন তালিকায়। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কও চালিত হয় এই সপ্তম তফসিলের মাধ্যমে। বিজেপি বিরোধী দলগুলির দীর্ঘদিনের অভিযোগ, মোদি সরকার বারবার রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয়। এই বিরোধের প্রসঙ্গ নীতি আয়োগের বৈঠকগুলিতেও বারবার উঠে এসেছে। এমনকী উত্তপ্ত হয়েছে জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকও। এই এক অভিযোগ আবার উঠছে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। আজ দিল্লির ভারত মণ্ডপমে আয়োজিত হবে ‘সংকল্প শপথ’। এই কর্মসূচি চালু করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নীতি আয়োগ একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল ‘উচ্চাশী জেলা প্রকল্প’। ৩২৯টি জেলাকে সেই তালিকায় রাখা হয়। এরপর গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী চালু করেন অ্যাসপিরেশনাল ব্লক প্রোগ্রাম অর্থাৎ ‘উচ্চাশী ব্লক প্রকল্প’। সেই প্রকল্পেরই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পে স্বাস্থ্য থেকে স্বচ্ছতা, কৃষি থেকে শিক্ষা, প্রতিটি বিষয়েই ৩ অক্টোবর থেকে পালিত হবে একটি করে দিবস। শেষ দিন, ৯ অক্টোবর সংকল্প শপথ, সমাবেশ সমারোহ অনুষ্ঠান। ভারত মণ্ডপমে মোদির অনুষ্ঠানে হাজির হবেন অন্তত কয়েক হাজার ব্লক ও পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা। ২ লক্ষাধিক কর্মী, আধিকারিক, পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান এবং কৃষক অনলাইনে যোগ দেবেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে শুরু, আর তারপর এক সপ্তাহ ধরে ভারত সরকার ও নীতি আয়োগ নির্ধারিত পরিকল্পনা ও নির্দেশিকা। অর্থাৎ, ব্লকের উপর নিয়ন্ত্রণ আর শুধু রাজ্যের নয়। চলতে হবে মোদি সরকারের কথায়।