• কাঁচামালের জোগান কম, আয় কমছে শোলাশিল্পীদের
    আনন্দবাজার | ০৯ অক্টোবর ২০২৩
  • পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তে মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। এই মুহূর্তে কুমোরপাড়াগুলিতে ব্যস্ততা তুঙ্গে। চরম ব্যস্ততার মধ্যেও মন ভাল নেই পশ্চিম বর্ধমান জেলার শোলা শিল্পীদের। তাঁদের আক্ষেপ, কাঁচামালের জোগান কম থাকায়, লাফিয়ে বাড়ছে তার দাম। এতে পরিশ্রম ও পারিশ্রমিকের মধ্যে অনেকটা ফারাক তৈরি হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শোলা শিল্পীদের জন্য নানা সরকারি প্রকল্প আছে। কিন্তু সে সব বিষয়ে তাঁরা খুব একটা অবহিত নন বলে জানালেন শিল্পীরা।

    দুর্গা প্রতিমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে শোলার সাজের জুড়ি মেলা ভার। শোলার কাজের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা জানালেন, করোনার জেরে তাঁদের কাজে অনেকটাই সমস্যা তৈরি করেছিল। তবে গত বছর থেকে পরিস্থিতি পাল্টালেও, আয় খুব একটা হচ্ছে না বলে জানালেন দুর্গাপুর ও কাঁকসা ব্লকের শিল্পীরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শোলা, চুমকি, জরি, নানা রঙের কাগজ, বাঁশের কাঠির মতো নানা সামগ্রী বাজার থেকে কিনতে হয়। সেগুলির দাম অনেকটাই বেড়েছে। তাঁরা জানান, তিন ফুটের একটি ভাল শোলার দাম পড়ছে ১৫০ টাকার মতো। গত বছর তা মিলেছিল ১০০ টাকার মধ্যে। তেমনই গত বছর চুমকির প্যাকেট ছিল ৭০ টাকা, এক কেজি জরির দাম বিক্রি হয়েছে ৮০০-১২০০ টাকার মধ্যে। চলতি বছরে এই দুই জিনিসের দাম যথাক্রমে ৯০ টাকা ও ৯০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আবার রঙিন কাগজের দাম পাঁচ টাকা থেকে বেড়ে সাত টাকা হয়েছে। প্রতিমার চুলের দাম ১২ থেকে বেড়ে ১৫ টাকা হয়েছে।তা ছাড়া বেড়েছে বাঁশ, আঠার দামও।

    কিন্তু এই সব কাঁচামালের দাম বাড়লেও, মজুরি খুব একটা বাড়েনি বলে দাবি শিল্পীদের। দুর্গাপুরের শিল্পী হারু মালাকার জানান, এ বছর ১০টি প্রতিমার বরাত পেয়েছেন তিনি। প্রতিমা সাজানোর জন্য তিন থেকে ছ’হাজার টাকা পর্যন্ত মিলবে। কিন্তু সেই অর্থ, তাঁদের কাজের জন্য খুব বেশি নয় বলে দাবি তাঁর। হারু বলেন, “পরিশ্রমের তুলনায় যে পারিশ্রমিক মেলে, তাতে খুব একটা লাভ হয় না। কারণ, যে হারে কাঁচামালের দাম বাড়ছে, অনেক সময়বাজারে দেনাও হয়ে যাচ্ছে।” পুজোর সময়ে তাঁর কাজে সহযোগিতা করেন কলেজ ছাত্রী মেয়ে কৃষ্ণা। তাঁর কথায়, “আয় কম হওয়ায়, নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই কাজে আসতে চাইছেন না। সরকারেরএ বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করার দরকার রয়েছে।” একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন কাঁকসার শিল্পী কবিতা কর্মকার, লক্ষ্মীকান্ত সূত্রধরেরা। তবে তাঁরা বলেন, “আমাদের জন্য কী ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা জানা নেই।”

    জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য বিভিন্ন রকম প্রকল্প রয়েছে। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সমীর বিশ্বাস ও কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য বলেন, “এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনদের জন্য নানা সরকারি সুযোগ-সুবিধা আছে। শিল্পীদের সে সব বিষয়ে অবহিত করতে প্রচারও করা হয়। তার পরেও যদি কেউ না জানেন, তা হলে ব্লক, পঞ্চায়েত-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে যোগাযোগ করতে পারেন তাঁরা।”

  • Link to this news (আনন্দবাজার)