• দুর্গাপুজো করবে বিজেপি, জোর প্রস্তুতি সদরে
    আনন্দবাজার | ০৯ অক্টোবর ২০২৩
  • লোকসভা নির্বাচনের আগে বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজোর সঙ্গে জুড়তে চায় বিজেপি। জেলায় এর সাড়া কতটা মিলেছে এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট না হলেও, প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি, এ বারই প্রথম সিউড়ির দলীয় কার্যালয়ের সামনেই দুর্গাপুজোর আয়োজন করতে চলেছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই মণ্ডপ তৈরির জন্য বাঁশ বাঁধার কাজ শুরু হয়েছে। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।

    বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বাবন দাস বলেন, ‘‘কলকাতায় দলের পক্ষ থেকে দুর্গাপুজো হয়েছে। জেলা বিজেপিও করছে। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক কার্যকর্তার জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেখানেই পুজো হবে।’’ তিনি জানান, কে উদ্বোধন করবেন, স্থির হয়নি। তবে কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা নেতার হাতেই পুজোর উদ্বোধন হবে।

    কিছু দিন আগে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছিল, বিজেপির শীর্ষ নেতারা পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে জুড়তে দলের কার্যকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিছু শর্ত মানলে রাজ্য সরকারের অনুদানের মতো ইচ্ছুক পুজো উদ্যোক্তাদের ‘আর্থিক সাহায্য’ করতে প্রস্তুত আছে গেরুয়া শিবির এমন বলা হয়েছিল। উদ্দেশ্য একটাই, লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী সরকারের সাফল্যকে জনসমক্ষে তুলে ধরা।

    জেলার বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল বিজেপি নেতাদের। আর্থিক সহায়তার অঙ্ক স্পষ্ট করা না হলেও, বলা হয়েছিল, বড় পুজোকমিটিগুলি যেখানে প্রচুর জনসমাগম হয়, সেখানে মোদী সরকারের সাফল্যের খতিয়ান লেখা ফ্লেক্স, ব্যানার পুজোমণ্ডপে রাখতে কারা ইচ্ছুক, সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে। সঙ্গে বলা হয়েছিল, বিজেপির কোনও কার্যকর্তা সেই পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারলে ভাল হয়।

    বিজেপি সূত্রেই খবর, মোদীর সাফল্য প্রচারে ফ্লেস্ক, বা ব্যানার ছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা দলের বড় মাপের নেতা (সেই তালিকায় সেলিব্রিটিরাও আছেন) তাঁদের দিয়ে পুজো উদ্বোধন করানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল জেলার একাধিক পুজো কমিটির কাছে। বিনিময়ে বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য ব্লক, পুরসভা পিছু অন্তত একটি পুজোর সঙ্গে যু্ক্ত থাকা। তবে জেলার কোন কোন পুজো কমিটি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে, সেটা স্পষ্ট নয়। তবে দলের নেতারা জানাচ্ছেন, যোগাযোগ চলছে।

    সিউড়ির একটি বড় পুজো কমিটির কর্মকর্তা বলেন, ‘‘বিজেপির তরফে এমন প্রস্তাব এসেছিল। আর্থিক সহায়তারও আশ্বাস ছিল। তবে সবিনয়ে সেটা প্রত্যাখান করা হয়েছে। কারণ, রাজ্য সরকারের আর্থিক অনুদান ছাড়াও প্রশাসনিক সাহায্য সবই পেয়ে থাকি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দিয়ে পুজো উদ্বোধন করিয়ে সমস্যায় জড়াতে রাজি নই।’’ দুবরাজপুর ও রামপুরহাট মহকুমার অন্য একটি পুজো কমিটিও একই দাবি করেছে। জেলা বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘ব্লক ও পুরসভা পিছু অন্তত একটি দুর্গাপুজোর সঙ্গে জোড়া এখনও লক্ষ্য। সঙ্গে গ্রামীণ এলাকায় বড় পুজোও রয়েছে।’’

    বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমার সাংগঠনিক জেলায় ১২টি পুজোর সঙ্গে জুড়তে পারব বলে আশাবাদী।’’ অন্য দিকে, বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘অসুরের বিনাশ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুর্গাপুজোর আয়োজন। জেলার ৫০টি পুজোর সঙ্গে আমরা যুক্ত থাকব।’’ কিন্তু লক্ষ্য পৌঁছতে না পারলেও যাতে মানুষের সঙ্গে জুড়ো থাকা যায়, সেই লক্ষ্য নিয়েই জেলা সদরের বুকে এই প্রথম বিজেপির দুর্গাপুজোর আয়োজন। যেখানে কোনও বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সঙ্গে একটি মেলাও বসানোর কথা রয়েছে।

    বিজেপির এক রাজ্য নেতার দাবি, ‘‘এটা ঠিক বিজেপি দুর্গাপুজোর সঙ্গে জুড়তে চায়। মোদী সরকারের সাফল্য, চন্দ্রবিজয়, জি-২০-এর সাফল্য, জনমুখী নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুফল মানুষের সামনে তুলে ধারার জন্য পুজোমণ্ডপ আদর্শ। তবে আর্থিক সহায়তা নিয়ে যে খবর রটেছে সেটা ঠিক নয়।’’ ওই নেতার সংযোজন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা নেতাকে দিয়ে উদ্বোধন করালে তার তো একটা খরচ আছে সে ব্যাপারে পুজো কমিটিকে সহায়তা করা হবে, এটুকুই।’’

    তবে তৃণমূলের সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘কেষ্ট-কালী নিয়ে নানা কথা হত। এখন দেখছি ধ্রুব–দুর্গা হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে সবটাই নাটক।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)