• আদালতের রায়ে খুশি আক্রান্ত পরিবার
    আনন্দবাজার | ০৯ অক্টোবর ২০২৩
  • বছর নয়েক আগে জঙ্গেল কাঁকড়া ধরতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল গোসাবার আমলামেথি গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণপদ মণ্ডলের। স্বামীর মৃত্যুতে তিন সন্তানকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন কৃষ্ণপদর স্ত্রী রিনা। শেষ পর্যন্ত সংসার চালাতে অবশ্য সেই জঙ্গলের পথই বেছে নেন তিনি। এখনও জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরে দিন গুজরান হয় বছর সাতচল্লিশের রিনার।

    জঙ্গলে গিয়ে বাঘের আক্রমণে গোসাবার সাতজেলিয়ার বাসিন্দা নিমাই বিজলির মৃত্যু হয়েছিল বছর কুড়ি আগে। দুই সন্তানকে নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন নিমাইয়ের স্ত্রী পার্বতী। বাঘের হানায় মৃত বালি বিরাজনগরের বাসিন্দা সাদাদ গাজির স্ত্রী সইদা গাজি, লাহিড়িপুরের বাসিন্দা শুকদেব মণ্ডলের স্ত্রী নমিতা মণ্ডলেরাও স্বামীর মৃত্যুর পরে একই ভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

    বাঘের হানায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে সরকারি ভাবে ক্ষতিপূরণের নিয়ম থাকলেও এঁরা কেউই তা পাননি। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে ঘুরেও সামান্য সরকারি সাহায্য জোটেনি কারওর।

    সম্প্রতি বাঘের হামলায় মৃত কুলতলির কৈখালির বাসিন্দা লখিন্দর নস্করের স্ত্রী শান্তিবালা সরকারি ক্ষতিপূরণ না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক দ্রুত শান্তিবালাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের পদক্ষেপে খুশি রিনা, পার্বতীরা।

    রিনা বলেন, “শান্তিবালা যে ভাবে আইনি লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছেন, তা আমাদের সকলের কাছে খুবই আনন্দের। পেটের টানে জঙ্গলে মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ যায় অনেকের। ক্ষতিপূরণ পেলে অন্তত পরিবারগুলি কিছুটা হলেও বাঁচার রসদ পাবে।”

    ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা বাঘের আক্রমণে আহতদেরও। কিন্তু অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে তা মেলে না। বছর দু’য়েক আগে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়েন ঝড়খালির বিবেকানন্দপল্লির বাসিন্দা মিহির সর্দার। বাঘের মুখ থেকে তাঁকে কোনও রকমে উদ্ধার করে আনেন সঙ্গীরা। প্রাণে বেঁচে গেলেও একটা চোখ, কান নষ্ট হয়ে যায়। চোয়ালও ভেঙে যায়। মিহির বলেন, “আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই। আমার মতো যারা শারীরিক ভাবে পঙ্গু হয়ে গিয়েছেন, তাঁদেরও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।”

    রবিবার বাসন্তীর শিবগঞ্জে বাঘ বিধবা এবং বাঘে আক্রান্ত পরিবারদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল এক সংস্থা। পুজোর আগে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন জামা-কাপড়। দীর্ঘ দিন ধরেই বাঘে আক্রান্ত পরিবারগুলিকে নিয়ে কাজ করছে ওই সংস্থা। সংস্থার তরফে অমল নায়েক বলেন, “বাঘে আক্রান্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াক সরকার। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটা বাঘের পেটে চলে গেলে কী ভাবে পরিবারটা ছারখার হয়ে যায়, সেটা সামনে থেকে দেখেছি। তাই কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই অসহায় পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। আদালতের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি।”

  • Link to this news (আনন্দবাজার)