• Israeli Palestinian Conflict : মেয়েদের কিডন্যাপ! হাজার ছুঁল যুদ্ধের বলি
    এই সময় | ০৯ অক্টোবর ২০২৩
  • সকালেও সংখ্যাটা ছিল ৩০০। বিকেলের মধ্যেই হয়ে গেল ৬০০! হামাসের হামলায় ইজ়রায়েলে এভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে মৃত্যুমিছিল বাড়ছে বলে দাবি সে দেশের মিডিয়ার। সরকারি ভাবে অভিযোগ, ইজ়রায়েল থেকে অন্তত ১০০ জনকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে হামাস জঙ্গিরা। এরা কারা? ইজ়রায়েল ওয়াররুম নামের একটি অলাভজনক সংস্থা যে ৬৫ জনের নাম-ছবি প্রকাশ করেছে, তাঁরা প্রায় সবাই সাধারণ নাগরিক—বেশিরভাগই মেয়ে!হাত গুটিয়ে বসে নেই ইজ়রায়েলও। শনিবারই হামাসকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ইজ়রায়েলি প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এ দিন তাঁর হুঙ্কার— ‘মাটিতে মিশিয়ে দেব গাজাকে।’ ২০০৭-এ রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতায় এসে প্যালেস্তাইনের গাজা স্ট্রিপের দখল নেয় হামাস জঙ্গিরা। গাজায় তাদের সব ঘাঁটিই গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিল ইজ়রায়েল। কিন্তু সেখানে থাকা সাধারণ মানুষের কী হবে?সেই হিসেবের মধ্যে না-গিয়েই ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স দাবি করল, গাজায় তারা অন্তত ৪০০ হামাস জঙ্গিকে মেরেছে। অর্থাৎ দু’পক্ষ মিলিয়ে যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনেই হাজার ছাড়াল নিহতের সংখ্যা। হামাস বেছে বেছে ইজ়রায়েলি মেয়েদের টার্গেট করছে বলে দাবি একাধিক ইজ়রায়েলি ও পশ্চিমি মিডিয়ার। শুধু অপহরণ নয়, দেদার চলছে ধর্ষণ-খুন। এমনকী, বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সামনেই! ওদিকে আবার ইজ়রায়েলের পাল্টা হামলায় সিঁটিয়ে রয়েছে গাজাও। ট্রমায় সবচেয়ে বেশি শিশু আর মেয়েরাই।সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একাধিক ভিডিয়ো-ছবিতে দেখা গিয়েছে, গাজায় একের পর আবাসন গুঁড়িয়ে যাচ্ছে ইজ়রায়েলি এয়ার স্ট্রাইকে। সবই কি জঙ্গিদের ঘাঁটি? প্রশ্নটা উঠেই গেল। দু’পক্ষকেই অস্ত্রত্যাগের আর্জি জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকান থেকে তাঁর বার্তা— ‘যুদ্ধ মানে হেরে যাওয়া। শুধুই পরাজয়। আসুন আমরা ইজ়রায়েল-প্যালেস্তাইনের জন্য শান্তি প্রার্থনা করি।’ কিন্তু তা শুনছে কে?শনিবার সাতসকালে গাজা থেকে ২০ মিনিটে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল হামাস। ইজ়রায়েলের মূল ভূখণ্ডে ঢুকে অন্তত ২২টি জায়গায় শনিবার দিনভর তাণ্ডব চালায় জঙ্গিরা। তড়িঘড়ি ক্যাবিনেট বৈঠক ডেকে ‘স্টেট ওফ ওয়ার’ ঘোষণা করেছিলেন নেতানিয়াহু। গাজায় পাল্টা হামলাও শুরু করে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স। আর এ দিন দেশের দণ্ডবিধির ৪০ নম্বর অনুচ্ছেদ জারি করে সরসারি ভাবে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল নেতানিয়াহুর সরকার।৫০ বছর আগে ১৯৭৩-এ ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের সময় শেষবার এই অনুচ্ছেদ জারি করা হয়েছিল ইজ়রায়েলে। এবার টার্গেট হামাস! ভারত-সহ বিশ্বের একটা বড় অংশ হামাসের হামলার নিন্দা করে পাশে দাঁড়িয়েছে ইজ়রায়েলের। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এ দিন ফোন করে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন নেতানিয়াহুকে। গোড়া থেকেই পাশে ইউএসএ। মিলেছে অস্ত্রসাহায্যের ইঙ্গিতও। তাই চিন-রাশিয়া কিংবা ইরানকে আদৌ পাত্তা দিতে নারাজ নেতানিয়াহুর দেশ।রুশ বিদেশমন্ত্রক এ দিনই যুদ্ধবিরতির আর্জি রাখে দু’পক্ষের কাছে। যা কার্যত উড়িয়ে দিয়েই ইজ়রায়েল বলল— ‘লাশ গুনতে গুনতে আর যা-ই হোক, যুদ্ধ থামানো যায় না। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।’ আর তার পর-পরই গাজাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি। শুধু মৌখিক হুমকি নয়, উত্তর ইজ়রায়েলে সে দেশের সেনা এ দিন প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে। গাজায় এ দিন হামাসের অন্তত তিনটি কম্যান্ড সেন্টারে এয়ার স্ট্রাইক করেছে নেতানিয়াহুর সেনা। তাদের দাবি, হামাসের ইন্টেলিজেন্স-চিফের দপ্তরও গুঁড়িয়ে গিয়েছে তাদের হামলায়। হামাসকে ‘শিক্ষা দিতে’ যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন ইজ়রায়েলের প্রাক্তন পিএম নাফতালি বেনেটও।হামাসের হাত শক্ত করতে লেবাননের দুর্ধর্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবোল্লা যোগ দিতে পারে বলে শনিবারই সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এ দিন ঠিক তাই হলো। হেজবোল্লার পলিটিক্যাল উইংয়ের এক শীর্ষ আধিকারিক হামাসকে উদ্দেশ করে সাফ বললেন— ‘আমাদের বন্দুক আর রকেট এখন তোমাদের হাতে। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে আমরা সর্বস্ব দিয়ে পাশে থাকছি হামাসের।’শুধু মৌখিক আশ্বাস নয়, ইজ়রায়েলকে টার্গেট করে এ দিন হেজবোল্লা বেশ কিছু রকেট ছুড়েছে বলে খবর। রাস্তায় নেমে হামাসের কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে এলোপাথাড়ি গুলিও ছুড়ছে তারা। চলছে লাশ নিয়ে উল্লাসও! এর ইনপুটও কি ছিল না ইজ়রায়েলের দুর্ধর্ষ গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ-এর কাছে? আবারও উঠল প্রশ্ন। একইসঙ্গে অন্তর্ঘাতের তত্ত্বও।আচমকা শুরু হওয়া যুদ্ধে কিন্তু সেই অর্থে কোনও মুসলিম দেশেরই সমর্থন পায়নি ইজ়রায়েল। উল্টে, এ দিন যুদ্ধের আঁচ ইজিপ্টেও গিয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা ওয়াকিবহাল মহলের। সে দেশের এক পুলিশকর্মীর গুলিতে প্রাণ গিয়েছে দুই ইজ়রায়েলি পর্যটকের। একজন আহত। মনে করা হচ্ছে, নির্ঘাত এর পিছনে প্যালেস্তাইন-ইজ়রায়েল যুদ্ধের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। সূত্রের খবর, মিশরের আলেকজ়ান্দ্রিয়ায় ঘুরতে গিয়েছিল ইজ়রায়েলি পর্যটকদের দলটি। রবিবার তাঁরা ছিলেন পম্পেই পিলার পরিদর্শনে। অভিযোগ, আচমকাই তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করেন ওখানে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী। কেন? সরকারি ভাবে কেউ মুখ খোলেনি।বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, শনিবার (৬ অক্টোবর) হামাসের হামলা একেবারেই আচমকা নয়। বরং পূর্বপরিকল্পিত। প্রথমত, শনিবার ছিল ‘সিমচাট তোরাহ’। ইহুদি ধর্মে অন্যতম পবিত্র দিন। উৎসবের মেজাজে কিছুটা হলেও হাল্কা মেজাজে ছিল ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স। ঝোপ বুঝে কোপ মারতে সময় নেয়নি হামাস। ১৯৭৩-এ এই ৬ অক্টোবরই প্যালেস্টাইনের ইজ়রায়েল-অধিকৃত অঞ্চলগুলিতে আকস্মিক আক্রমণ শুরু করেছিল আরব দেশগুলির জোট।সপ্তাদুয়েক চলেছিল আরব-ইজ়রায়েলের মধ্যে সেই ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ। ইজ়রায়েল জিতেছিল সেবার। একই দিনে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাই এ বার আরও মরিয়া হামাস। ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইজ়রায়েল যে হেতু সম্প্রতিই সৌদি আরবের সঙ্গে একটা দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছেছে , ‘ক্ষুব্ধ’ হামাস সেই কারণেই এমন মরিয়া হয়ে ইজ়রায়েলকে টার্গেট করেছে বলেও মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।https://whatsapp.com/channel/0029Va9zh58Gk1Fko2WtDl1A
  • Link to this news (এই সময়)