• যোধপুর পার্ক-সেলিমপুর: বাংলার আলপনা, চক্ষুদানে জমছে থিমের লড়াই
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৩
  • সায়নদীপ ঘোষ, কলকাতা: লক্ষ্মীপুজোর দিন। ঠাকুরঘরের সামনে আলপনা দিতে ব্যস্ত ঠাকুমা। ছোট্ট বাটিতে গোলা খড়িমাটি। তা দিয়েই তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের বিমূর্ত রেখাচিত্র। ঠাকুমাকে সঙ্গ দিতে এল নাতনি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম... আলপনা শিল্পের শিল্পী। এবার পল্লিমঙ্গল সমিতির (তালতলা) পুজো মণ্ডপ সেজে উঠছে আলপনার মাধ্যমেই। বর্তমান যুবসমাজকে এই সনাতন রীতি বিষয় সচেতন করতেই শিল্পী পূর্ণেন্দু দের এই পরিকল্পনা।  মাতৃমূর্তিও সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর থিমের নাম? ‘এসো আলপনা দিই’। 

    পল্লিমঙ্গলের শারদোৎসব দেখে এগলেই নজর কাড়বে একাধিক চোখ। না, এই চোখগুলি কারও উপর নজর রাখছে না। বরং চুপিসারে দিয়ে চলেছে মরণোত্তর চক্ষুদান অঙ্গীকারের বার্তা। ৭১ বছরে এভাবেই অন্ধত্বকে দূর করার আর্জি জানাচ্ছে যোধপুর পার্ক সর্বজনীন। চক্ষুদান মানে ‘পুনর্জন্ম’। মৃত ব্যক্তির কর্নিয়া প্রতিস্থাপিত হচ্ছে আরেকজনের চোখে। মুহূর্তে পৃথিবীর আলো উপভোগ করছে সে। এভাবেই মৃত্যুর পরেও যেন বেঁচে থাকছে চোখ দু’টি। পরিকল্পনায় শিল্পী বাপাই সেনের এই ভাবনা। মাতৃমূর্তি সৃজনে সনাতন পাল।

    ব্যবহার ফুরিয়ে গেলে শহরের নানান প্রান্তে থাকা ফ্লেক্সগুলির কী হয়? সেগুলি কি শুধুই আবর্জনা? মোটেই নয়। ব্যবহৃত এই ব্যানারই হয়ে উঠতে পারে শিল্পের সামগ্ৰী। তাই বাতিল করা এই ফ্লেক্স দিয়েই এবার ৯৫ পল্লির মণ্ডপ সাজিয়েছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার। প্যান্ডেলের প্রত্যেকটি কারুকার্যে রয়েছে পুরনো ফ্লেক্সের ব্যবহার। ব্যানার কেটেই তৈরি হয়েছে নকশা। ৭৪ তম বর্ষে দর্শনার্থীদের ‘বাতিল নয় ব্যবহার’-এর বার্তা দিতেই অভিনব পন্থা বেছে নিয়েছেন শিল্পী। তাঁর কথায়, ‘কাজ শেষে রাস্তায় পড়ে থাকে ফ্লেক্সগুলি। কেউ ফিরেও তাকায় না। সেগুলি দিয়েই তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ।’

    যোধপুর পার্ক থেকে রাস্তা পেরলেই সেলিমপুর পল্লি সর্বজনীন। এবছরের বিষয় ভাবনা ‘অনন্তদৃষ্টি’। প্রতিমার ঠিক উপরে থাকছে বিশালাকার একটি চোখ। তাকে ফাঁকি দিয়ে আপনি কিছুই করতে পারবেন‌ না। সব তাঁর নজরে রয়েছে। ৮৬ তম বর্ষে এভাবেই সেজে উঠেছে প্যান্ডেল। থিম শিল্পী অনিমেষ দাসের কথায়, ‘কোনও কাজ লুকিয়ে করা যায় না। উপর থেকে একজন খেয়াল রাখছেন। সেই দৃষ্টির ব্যাপ্তি লক্ষ লক্ষ চোখের থেকেও বেশি।’ সেলিমপুরের প্রতিমা রূপদানে শিল্পী সৌমেন পাল।

    খানিক এগলেই দেখা যাবে ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন। সঙ্গে সবুজের সমাহার। সৌরশক্তির সাহায্যে জ্বলবে আলো। এ যেন এক দূষণমুক্ত পৃথিবী। দেখা যাবে দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও নিউটাউনের আইকনিক বিশ্ববাংলা গেট। তারাই এই দীর্ঘ যাত্রাপথের সাক্ষী। বৃহৎ কর্মকাণ্ডের মধ্যেই অধিষ্ঠিতা দেবী দুর্গা। ৬২ তম বর্ষে এভাবেই ‘আগামীর বাংলা’-র রূপরেখা তৈরি করেছে বাবুবাগান সর্বজনীন। ভাবনায় প্রফেসর ডাঃ সুজাতা গুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘আগামীর বাংলা হবে সবুজ, দূষণমুক্ত। তা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতেই এই পরিকল্পনা।’ সবমিলিয়ে এবার যোধপুর পার্ক ও সেলিমপুরে জমজমাট থিমের লড়াই।
  • Link to this news (বর্তমান)