• সাধুখাঁ বাড়িতে ষাঁড়ের পিঠে দুর্গা কোলে মহাদেব, রুদ্র-চণ্ডী রূপে লাহাদের ঠাকুর
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৩
  • বিশ্বজিৎ মাইতি, চুঁচুড়া: শিব আসেন ষাঁড়ের পিঠে চেপে। কোলে বসে দুর্গা। তাঁর পরনে আটপৌরে শাড়ি। হাতে কোনও অস্ত্রটস্ত্রও থাকে না। অসুরও থাকেন না। রিষড়ায় সাধুখাঁ পরিবারের প্রায় ১০০ বছরের এই পুজোকে সম্ভ্রমের চোখে দেখে মানুষ। এর পাশাপাশি রিষড়ার আর একটি অভিজাত পুজো ঘিরেও উন্মাদনা রয়েছে। সেটি লাহাদের বাড়ির পুজো। প্রায় ২০৪ বছর আগে এই পুজোর সূত্রপাত। এখানে দেবীর রণংদেহী মূর্তি। আসেন মা চণ্ডী রূপে। অশুভ শক্তির বিনাশের বার্তা দেন। এই দু’টি পুজো আজও রিষড়ায় সম্ভ্রম ও আভিজাত্যের প্রতীক। সময়ের সঙ্গে জৌলুস কমেছে তবে প্রথা ও রীতিনীতির অন্যথা হয়নি। 

    রিষড়ার এক জমিদার অক্রুর লাহা পুজো শুরু করেছিলেন। এখনও সে বাড়ির ঠাকুর দালানে তৈরি হয় একচালার প্রতিমা। এখানে দেবীর উগ্রচণ্ডী রূপ। আগে সপ্তমীতে সাত, অষ্টমীতে আট ও নবমীতে ন’টি ছাগবলি হতো। ১৯৫৬ সালে বলিদানে বাধা পড়ে। তারপর এই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। ঠাকুরদালানের সামনে হাড়িকাঠ এখনও বলির সাক্ষী দেয়। একটি বিশালাকার থালায় চার মন চালের নৈবিদ্য দেওয়া হতো একসময়। সন্ধিপুজোয় দেওয়া হতো দু’মন চালের নৈবিদ্য। ১৯৭০ সালে সরকারি বিধিনিষেধের জেরে চালের জোগান কমে যায়। তারপর চালের পরিমাণ কমানো হয়। বর্তমানে ৮০কেজি চালের নৈবিদ্য দেওয়া হয়। এখানে কুমারী পুজো হয় নবমীতে। সন্ধি পুজোয় জ্বলে ১০৮ প্রদীপ। পরিবারের বর্তমান সদস্য পীযুষকান্তি লাহা বলেন, ‘আমরা তো নিমিত্ত মাত্র। মা পুজো করান। আগের জৌলুস ও প্রাচুর্য কমেছে। তবে নিয়মনিষ্ঠায় কোনও বদল আসেনি।’

    রিষড়া শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন বটকৃষ্ণ সাধুখাঁ। গঙ্গার ধারে অট্টালিকা তৈরি করেছিলেন। ১৯২৬ সালে সেখানে দুর্গা আরাধনার সূচনা করেন। এখানে দুর্গা আটপৌরে সেজে মেয়ে হিসেবে আসেন। ষাঁড়ের পিঠে থাকেন মহাদেব। দুর্গা দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেন। 

    মায়ের সঙ্গে একচালাতে থাকেন কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী। এখানে ষষ্ঠীতে বোধন। আজও ১৫০কেজি চাল ধুয়ে নৈবিদ্য হয়। বলি প্রথা নেই। মহালয়ার পরেরদিন থেকে ভোগ প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে যায়। মুড়কি, মোয়া, নাড়ু, ছানা, সন্দেশ ছাড়াও নানান ধরনের মিষ্টি তৈরি হয়। দই বসানো হয়। বাড়ি তৈরি ভোগই দেওয়া হয় দুর্গা-মহাদেব ও তাঁদের সন্তানদের। এই পরিবারের জয়ন্ত সাধুখাঁ বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে সপরিবারে মা আসেন কন্যা রূপে। ভোগের যাবতীয় রান্না বাড়িতেই হয়। দশমীতে বিসর্জনের পর মৎস্যমুখ করেন পরিবারের সদস্যরা।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)