• Wedding Destination : বাঙালির ওয়েডিং 'ডেস্টিনেশন' এখন পুরী-শুশুনিয়াও
    এই সময় | ১০ অক্টোবর ২০২৩
  • ইউরোপে ইতালির টাসকানির কয়েক সেঞ্চুরি পুরোনো ভিলা তো অনেক দূরের ব্যাপার। রাজস্থানের প্রাসাদও নয়। কিন্তু ঘরের কাছে মন্দারমণি বা ডুয়ার্সের কোনও কটেজে সমস্যা কী! সময়, খরচ সবই বাঁচে। আবার ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’-এর ‘ডিজ়ায়ার’ও পূরণ হয়। বাঙালি এখন তাই সেলেবদের মতো ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’-এ মাতলেও সেটা অনেক ক্ষেত্রেই ঘরের কাছেই।বিরাট কোহলি আর অনুষ্কা শর্মা বিয়ে সেরেছিলেন ইতালির টাসকানিতে ৮০০ বছরের পুরোনো এক ভিলায়। কিছু বছর বাদে লেক কোমো-তে চার হাত এক হয়েছিল দীপিকা পাড়ুকোন আর রণবীর সিংয়ের। হালে অবশ্য সেলিব্রিটিরাও দেশের চৌহদ্দিকেই ‘ওয়েডিং ডেস্টিনেশন’ করেছেন। যেমন রাজস্থানের একটি প্যালেসে সম্প্রতি বিয়ে সেরেছেন পরিনীতি চোপড়া ও রাঘব চাড্ডা।কিন্তু মধ্যমগ্রামের রাজেশ আর শ্রীতমা? তাঁদের বিয়ে সামনেই। বিরুষ্কাদের মতো ‘রাজশ্রী’ও অন্য ভাবে বিয়েটা করতে চান। শহরের ভিড়ভাট্টা থেকে দূরে কোথাও, একটু নিরিবিলিতে। রাজেশ আইটি সেক্টরের কর্মী আর শ্রীতমা স্কুল শিক্ষিকা। দল বেঁধে বিদেশে ছোটার সাধ্য তাঁদের নেই। কিন্তু আল্পসের কোলে না হোক, এ রাজ্যেই হিমালয়ের পাদদেশের কোনও ছোট্ট গ্রামের ছোট্ট কটেজ কী দোষ করল! তাতেও সমস্যা হলে পুরুলিয়ার শুশুনিয়া পাহাড় আছে।মোদ্দা কথা তো শহর থেকে দূরে কোথাও একান্তে নতুন ভাবে পথচলার সূত্রপাত। তাতে প্যারিস আর পুরুলিয়ার ফারাক কোথায় কী! আর একটু দূরে গেলে পুরী বা গোপালপুরও অনেকের পছন্দ। ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’-এর পরিকল্পনা পার্থ আর কণিকারও। তাঁদের গন্তব্য মন্দারমণি। নিমন্ত্রিতের সংখ্যা হাতে গোনা। ঘনিষ্ঠ ক’জন আত্মীয়-বন্ধুই ডাক পাচ্ছেন মন্দারমণিতে।লেকটাউনের অর্ক ঘোষ এবং সায়ন্তনী চক্রবর্তী গত বছর নভেম্বরে বিয়ে করেছেন। ওঁরা গিয়েছিলেন দার্জিলিংয়ে। বাজেটের কথা ভেবে ঘনিষ্ঠ ক’জন আত্মীয়কেই নিয়েছিলেন সঙ্গে। খরচ কাটছাঁট করতে সকলে মিলে হইহই করতে করতে দার্জিলিং মেলের স্লিপারে চড়ে গিয়েছিলেন বিয়ে বাড়ি। বাঙালির দী-পু-দা (দিঘা-পুরী-দার্জিলিং)-এর ‘কুইন অফ হিলস’ তাঁদের নিরাশ করেনি।বারাসতের বাসিন্দা, আইটি-কর্মী কাশ্মীরা গুহ আবার কাজের সূত্রে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। পাত্র বিক্রম দাসও তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। দু’জনেই রবীন্দ্রপ্রেমী। তাই ‘ডেস্টিনেশন’ শান্তিনিকেতন। রতনপল্লি, পূর্বপল্লি, কোপাইয়ে ঘেরা রবীন্দ্র-তীর্থ তাঁদের হতাশ করতেই পারে না। আর এ কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে জীবনানন্দ, বিভূতিভূষণ, মানিক, তারাশঙ্করের চোখ দিয়ে বাংলাকে দেখেছে, চিনেছে বঙ্গবাসী। সেখানে কাশ ফুল, বসন্তবৌরি, শিশির, ট্রেনের কালো ধোঁয়ার হাত ধরে কাহিনির সঙ্গে পাঠকের রসায়ন।জীবনসঙ্গীর হাত ধরতে তাই সেই বাংলা বা তার আশপাশের কোনও এলাকাই হালের ‘রাজশ্রী’, পার্থ-কণিকাদের পছন্দ। ইউএসএ-র সংস্থা ‘ডিডব্লিউপি’-র সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গত তিন বছরে বিশ্বে ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’-এর প্রবণতা বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। সমীক্ষায় পৃথিবীর তিন হাজার পেশাদার ‘ওয়েডিং প্ল্যানার’-এর সঙ্গে কথা বলেছে সংস্থাটি। রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, মূলত তিনটি কারণে ইউএসএ এবং ইউরোপের সাধারণ মানুষও ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’-এর দিকে ঝুঁকছেন।প্রথমত, করোনা-পরবর্তী সময়ে অনেকেই চাইছেন কিছুটা নিরিবিলিতে সামাজিক অনুষ্ঠান সারতে। যেখানে নিকটাত্মীয় এবং বন্ধু ছাড়া বেশি মানুষের ভিড় হবে না। দ্বিতীয়ত, দূরে কোথাও গিয়ে বিয়ে করলে ‘হানিমুন’ও একবারে সেরে আসা যায়। তৃতীয়ত, নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনাটা একটু রোমাঞ্চকর ভাবে করতে চাইছেন। ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ তাঁদের সব শর্তই পূরণ করছে।কলকাতার ‘ওয়েডিং প্ল্যানার’-দের অফিসে ঢুঁ মারলেও বোঝা যাবে যে ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ এখন মহানগরেও বেশ ট্রেন্ডিং। বছর পাঁচেক আগে টলিউডের চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী এবং অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় তো শহর থেকে একটু দূরে বজবজের কাছে বাওয়ালি রাজবাড়ি ভাড়া করে বিয়ে সেরেছিলেন। সেটাও ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’।কলকাতার ওয়েডিং প্ল্যানার সংস্থা ‘র‍্যাম্পেজ’-এর কর্ণধার রাজেশ দত্তর কথায়, ‘কলকাতায় ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের চল আরও বাড়বে। বিদেশে গিয়ে বিয়ের প্রবণতা এখনও বাঙালির অতটা নেই। যে বাঙালিরা ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের কথা ভাবছেন, তাঁরা দেশেই কোনও গন্তব্য খুঁজে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে পুরী এবং গোপালপুরই ফেভারিট।’ তবে তাঁর সংযোজন, ‘কলকাতার অবাঙালি ব্যবসায়ী পরিবারের অনেকেই বিয়ে করতে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন।’ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ‘স্টারলাইট’-এর কর্ণধার পার্থ মিত্রর পর্যবেক্ষণ, ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং অবশ্যই নতুন ট্রেন্ড। চার-পাঁচ বছর আগেও রাজস্থানের দুর্গ বা কলকাতার কাছে-দূরে কোনও প্রাচীন রাজবাড়িতে গিয়ে বিয়ের তোড়জোড় করার কথা ভাবতে পারতাম না আমরা। বাংলার ঘরে ঘরে ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের হিড়িক না পড়লেও ধনী এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই বিরুষ্কা, দীপিকা পাড়ুকোনদের অনুসরণ করছেন। ইউরোপে না গেলেও গোয়া, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার বালিতে কিন্তু কলকাতার অনেকেই বিয়ে করতে ছুটছেন।’https://whatsapp.com/channel/0029Va9zh58Gk1Fko2WtDl1A
  • Link to this news (এই সময়)