• Gaza−Israel Conflict : জল-খাদ্য ইলেকট্রিক: গাজায় সব ইসরায়েলি সাপ্লাই বন্ধ
    এই সময় | ১০ অক্টোবর ২০২৩
  • হামাসকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে শনিবার থেকেই গাজায় এয়ার স্ট্রাইক শুরু করেছে ইজ়রায়েল। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা ভূখণ্ডকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন খোদ ইজ়রায়েলি পিএম বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গাজায় এবার একধাক্কায় খাদ্য-জল-জ্বালানি-আলো সব বন্ধ করে দিল ইজ়রায়েল। হামাস যোদ্ধাদের ‘হিউম্যান অ্যানিম্যাল’ বলে উল্লেখ করে সোমবার তাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গাজা ভূখণ্ডকে সম্পূর্ণ ভাবে অবরুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল ইজ়রায়েল।ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, ‘গাজাকে আমরা পুরোপুরি অবরুদ্ধ করতে চলেছি। বিদ্যুৎ, পানীয় জল, রান্নার গ্যাস, খাবার- সব বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ মন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই গাজায় জল সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেয় ইজ়রায়েল। বন্ধ হয়ে গেল গ্যাস পাইপলাইনও! তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এ দিনই প্যালেস্তাইনের জন্য পূর্বঘোষিত প্রায় ৭৩ কোটি ডলারের বরাদ্দ আপাতত ফ্রিজ় করার কথা ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।আপাতত বন্ধ প্যালেস্তাইনের সঙ্গে বাণিজ্যও! তাদের এই সিদ্ধান্ত হামাসের ‘ঘৃণ্য’ হামলার জেরেই বলে জানাল ইইউ। আজ, মঙ্গলবার ইজ়রায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধ নিয়ে বিশেষ বৈঠক ডেকেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশমন্ত্রীরা। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আর্জি জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠন। সূত্রের খবর, দু’দেশের বন্দি বিনিময় নিয়ে মধ্যস্থতা করে সমাধানসূত্র বের করার চেষ্টা করছে কাতার।হামাসের ‘জঙ্গি হামলার’ তীব্র নিন্দা করে ইজ়রায়েলের পাশে থাকারই বার্তা দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও আর্জি রাখল- অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ হোক। তবে তারা যে প্যালেস্তিনীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি স্বশাসন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণেরই পক্ষে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি।শনিবার থেকেই হামাসকে ‘সবক শেখাতে’ গাজায় তীব্র বিমান হানা শুরু করেছে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। যার জেরে প্যালেস্তাইনের হামাস-নিয়ন্ত্রিত ওই ভূখণ্ডে কমপক্ষে ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ইতিমধ্যেই। গুঁড়িয়ে গিয়েছে সেখানকার অসংখ্য বহুতল, মসজিদ, হাসপাতাল, স্থাপত্য, হামাসের মিলিটারি ইউনিট। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এর আগে গাজায় এত ভয়ঙ্কর হামলা কখনও চালায়নি আইডিএফ।রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি, ইজ়রায়েল হামলা শুরু করার পর থেকে গাজায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ১ লক্ষ ২৩ হাজার মানুষ। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে প্যালেস্তিনীয় সরকার এখনও ইজ়রায়েলি অবরোধের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি। ২১ লক্ষ জনবসতির ঘিঞ্জি গাজা ভূখণ্ড অর্থনৈতিক ভাবে এমনিতেই রুগ্ণ। বেকারত্বের হার ভয়াবহ— প্রায় ৪৫ শতাংশ। খাদ্য নিরাপত্তা নেই ৬৪ শতাংশ পরিবারের। ইউনিসেফের দাবি, গাজায় যে জল যায়, তার ৯৬ শতাংশই পানের অযোগ্য।রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট ১৩ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না সেখানে। চালু হওয়ার তিন বছরের মধ্যেই ২০০১-এ গাজার একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গুঁড়িয়ে দিয়েছিলন ইজ়রায়েলি এয়ার স্ট্রাইক। তাই এই পরিস্থিতিতে ইজ়রায়েলের ‘কমপ্লিট ব্লকেড’ সিদ্ধান্তে গাজার দুর্দশা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রশাসনের দাবি, হামাসের হামলায় কমপক্ষে ৭০০ ইজ়রায়েলির মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, যুদ্ধের তৃতীয় দিনে দু’পক্ষ মিলিয়ে প্রাণহানির সংখ্যা ১৩০০ ছাড়াল।ইজ়রায়েল যে ভাবে গাজাকে লাগাতার ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’-এর হুমকি দিচ্ছে, তাতে গাজা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ২০০৭-এ রাজনৈতিক ভাবেই গাজার দখল নেয় হামাসের পলিটিক্যাল উইং। তারপর এই গত ১৬ বছরে অন্তত ৫ বার সেখানে সেনা-হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। ২০১৪-য় টানা ৫০ দিন রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল গাজা। এবার কতদিন?সূত্রের খবর, এ দিন গাজার দু’টি শরণার্থী শিবিরেও এয়ার স্ট্রাইক করেছে ইজ়রায়েল। স্থানীয়দের দাবি, গাজায় লাগাতার বোমা-ক্ষেপণাস্ত্র মেরেই চলেছে আইডিএফ। ওয়াকিবহাল মহলের একটা অংশের দাবি, হামাসকে প্রথমে আক্রমণ করতে দিয়ে প্রত্যাঘাতে গাজাকে নিশ্চিহ্ন করাটাই আসল প্ল্যান ইজ়রায়েলের। হামাস যে হেতু আগে হামলা করেছে, তাই বিশ্বের একটা বড় অংশের সমর্থনও আদায় করে ফেলেছে ইজ়রায়েল। চলতি বছরের গোড়া থেকেই হামাস এবং আরও একটি প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ধারাবাহিক সংঘর্ষ চলছে ইজরায়েলি সেনার।তখন থেকেই মেন এন্ট্রি সব বন্ধ করে গাজাকে কার্যত অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ। ইজ়রায়েলের টাটকা অবরোধ সিদ্ধান্তকে তাই গোদের উপর বিষফোড়া বলেই মনে করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে গাজার একমাত্র ভরসায় জায়গা ইউএন-এর স্কুল ও আশ্রয়শিবির বলে দাবি ওয়াকবিহাল মহলের। রাষ্ট্রপুঞ্জও জানিয়েছে, গাজায় দেড় লক্ষ উদ্বাস্তুকে আশ্রয় ও খাবার দেওয়ার সামর্থ রয়েছে তাদের।এদিকে ‘এনাফ ইজ় এনাফ’ বলে হামলা শুরু করা হামাসও পিছু হটতে নারাজ। তাদের যোদ্ধারা গাজা থেকে বেরিয়ে ইজ়রায়েলি ভূখণ্ডে সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন হামাসের মুখপাত্র আব্দেল-লতিফ আল-কুনোওয়া। ইজ়রায়েলের অভিযোগ, ‘অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম’ শুরু করার পর সেনা-নাগরিক মিলিয়ে তাদের শতাধিক নাগরিককে পণবন্দি করেছে হামাস। সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি বলে দাবি করেছে হামাস।নেতানিয়াহু প্রশাসনের দাবি, মাথার উপর ইরানের হাত রয়েছে বলেই এতখানি দুঃসাহস দেখাচ্ছে হামাস। ইরান অবশ্য এ দিন সেই অভিযোগ সরাসরি খারিজ করেছে। হামাসের এই অপারেশনে হেজবোল্লা শরিক হওয়ার কথা স্বীকার করলেও, লেবানন সরকারও তার দায় নিতে চাইছে না।https://whatsapp.com/channel/0029Va9zh58Gk1Fko2WtDl1A
  • Link to this news (এই সময়)