• কোচবিহার রাজবাড়ির পুজো ঘিরে একাধিক উপকাহিনি, লাল বর্ণা দুর্গা আরাধনায় আজও লাগে নররক্ত
    এই সময় | ১১ অক্টোবর ২০২৩
  • স্বপ্নাদেশ পেয়েই শুরু হয়েছিল কোচবিহারের রাজবাড়ির পুজো। কোচবিহারের রাজাদের শুরু করা এই পুজো এখন হাত ঘুরে রাজ্য সরকারের অধীনে কোচবিহার দেবত্র ত্রাস্টের অধীনে। কয়েকশো বছর আগে মহারাজ বিশ্ব সিংহের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজোর। রাজবাড়ীতে দুর্গাপুজোর প্রচলন নিয়েও ছড়িয়ে আছে কাহিনি, উপকাহিনি।রাজা না থাকলেও আজও বড়দেবীর পুজো হয়ে আসছে কোচবিহারে। রাজ্য সরকারের অধীনে কোচবিহার দেবত্র ত্রাস্টের এই পুজোতে ভিড় জমায় কোচবিহারের পাশাপাশি নিম্ন অসমের বাসিন্দারাও। কোচবিহার শহরে দেবীবাড়িতে বড়দেবীর মন্দিরে হয় এই পুজো। কোচবিহার রাজবাড়ির এই পুজোয় রয়েছে একাধিক আচার অনুষ্ঠান যা আর পাঁচ জায়গার দুর্গাপুজোর থেকে আলাদা।লোকগাথায় যা বলে...কোচবিহার রাজবাড়ির এই পুজোকে ঘিরে প্রচলিত একাধিক কাহিনি ও উপকাহিনি। কী ভাবে শুরু এই পুজোর তা নিয়ে ছিল ভিন্ন মত। কোচবিহারের লোকগাথা অনুসারে জানা যায়, কোচবিহার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা বিশ্বসিংহ এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। আবার অপর কাহিনী অনুসারে জানা যায়, মহারাজা বিশ্বসিংহের পুত্র কোচবিহারের দ্বিতীয় মহারাজা নরনারায়ণ স্বপ্নাদেশে স্ববংশে দশভূজা দুর্গা মূর্তির পুজোর প্রচলন করেন। কোচবিহারের ইতিহাস মতে, মহারাজা নরনারায়ণের ভাই সেনাপতি চিলা রায় নিজেকে সংসারের সেরা বীর মনে করতেন। তাই তাঁর মনে বিশ্বাস জন্মায় সিংহাসন তার জন্যই তৈরি। সিংহাসন হাতাতে ভ্রাতৃহত্যার ছক কষেন তিনি।একদিন তিনি দাদা নরনারায়ণকে হত্যা করবার উদ্দেশ্য নিয়ে রাজসভায় যান সেনাপতি চিলা রায়। কিন্তু হামলার ঠিক আগেই তিনি দেখতে পান স্বয়ং ভগবতী দুর্গা দশ হাত দিয়ে ঘিরে রক্ষা করছেন রাজা নরনারায়ণকে। চিলা রায় এই অলৌকিক দৃশ্য দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে লজ্জায় দাদার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।ঘটনার বিরূপ প্রতিক্রিয়াশোনা যায় এই ঘটনায় মহারাজা নরনারায়ণ রেগে ওঠার বদলে দুঃখিত হয়ে পড়েন। এই ঘটনায় নরনারায়ণ নিজেকে ভাগ্যহীন মনে করেন এবং চিলা রায়কে ভাগ্যবান মনে করেন।নিজের ভাগ্যে দেবী দর্শন না ঘটায় মনের দুঃখে অন্ন জল ত্যাগ করে নির্জনবাস করতে আরম্ভ করেন নরনারায়ণ। জনশ্রুতি আছে যে এই ঘটনার ৩ দিন পর গভীর রাতে দেবী দুর্গা নরনারায়ণকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বলেন, ‘‌বৎস ওঠ, জগৎ সংসার আমার যে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পুজো করে তা প্রত্যক্ষ করো। শরৎকালে তুমি এই মূর্তি নির্মাণ করে যথাবিধি মেনে পুজো করবে, বলেও আদেশ দেন দেবী । এরপরই, মহারাজা নরনারায়ণ চোখ খুলে ভগবতীকে দর্শন করে প্রণাম ও স্তুতি করে বলেন, ‘‌মা, মহিষাসুরের ডান হাত সিংহ দন্তাঘাত করে আছে, কিন্তু তাঁর বাম হাত শূন্য রয়েছে।’‌ দেবী দুর্গা তখন বললেন-‘ওই স্থানে একটি বাঘ দিও।’‌ রাজা নরনারায়ণ দেবীর অতসী কুসুমাকার বর্ণ দেখে মনে করলেন ভগবতী দেবী দুর্গার লাল রং হলে ভালো হয়। মহারাজা নরনারায়ণ তাঁর স্বপ্নে দেখা সেই রূপেই দেবীর মূর্তি স্থাপন করে শারদীয়া দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন ।কোচবিহার রাজবাড়ির পুজোর বৈশিষ্ট্যমহারাজা নরনারায়ণের শুরু করা দেবী মূর্তির ধাঁচ মেনেই এখনও চলে পুজো। এখানে দেবীর গায়ের রঙ লাল, তাঁর দ্বারা দলিত অসুরের গায়ের রঙ সবুজ। দেবীর বাহন সিংহ অসুরের পায়ে কামড়ে ধরে রয়েছে। আর অসুরের হাতে কামড় বসিয়েছে একটি বাঘ। দেবীর দুপাশে অবস্থান করছেন, দেবীর দুই সখী— জয়া ও বিজয়া। বলাই বাহুল্য এই মূর্তিই মহারাজা নর নারায়ণের স্বপ্নে দেখা দেবী দুর্গার রক্তবর্ণ রূপের প্রকাশ।পুজোর বিশেষ আচারএই পুজোয় আগে নরবলি হলেও এখন হয় না। তবে এখনও লাগে নররক্ত। এই পুজোতে প্রচলিত রয়েছে বলি প্রথা। কাল প্রবাহিত হয়ে চলেছে। সেদিনের রাজতন্ত্র থেকে আজ কয়েক যোজন দূরে অবস্থান করছে কোচবিহার। কিন্তু আজও বন্ধ হয়নি বড়দেবী দুর্গা পুজো। আজও ঐতিহ্য বহন করে চলেছে সেই পুজো। কোচবিহারে রাজবংশের নিজস্ব পুজো এটি। তবে এখন দেবোত্তর ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানেই এই পুজো হয়।দুর্গাপুজোর অজানা কাহিনি ও পুজো সংক্রান্ত যে কোনও খবরের জন্য ফলো করুন এই সময় ডিজিটাল চ্যানেল। ক্লিক করুন: https://whatsapp.com/channel/0029Va9zh58Gk1Fko2WtDl1A
  • Link to this news (এই সময়)