সিকিমের সিংতামের বালুটারে
তিস্তা-৫ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছিলেন দাওয়া। তাঁর উপস্থিত বুদ্ধিতে শুধু
সিকিম বা কালিম্পং নয়, উত্তরবঙ্গের একটি বড় অংশও ক্ষতির হাত থেকে পার পেয়েছে। নিজের
প্রাণ দিয়ে শতাধিক গ্রামকে রক্ষা করে গিয়েছেন যে দাওয়া, তাঁর ভূয়সী প্রশংসায়
সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীও।
গত মঙ্গলবার রাতে লোনাক লেকের জল
বাঁধ ভেঙে উন্মত্ত গতিতে আশপাশের সব ধ্বংস করে নীচে নামছিল। তিস্তার জলের প্রবল
দাপটে নিমেষে ধ্বংস হয়ে যায় লাচেন, লাচুং, চুংথান, সিংথামের মতো এলাকা। প্রবল জলোচ্ছ্বাসের শব্দে তাঁর বুক
কেঁপে ওঠে। বাঁধের উপর থেকে জলের স্রোত দেখেই বুঝে যান যে, প্রলয় আসছে। পরিস্থিতি
বেগতিক দেখেও ভয় পাননি অসমসাহসী দাওয়া। এক এক করে লক গেট খুলতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু, ৪ নম্বর গেট খুলতে গিয়েই হাইভোল্টেজ তার ওই বিদ্যুৎকর্মীর উপর
ছিঁড়ে পড়ে। সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে দাওয়ার নিথর
দেহ উদ্ধার হয়েছে।
কিন্তু তত ক্ষণে কোনও বাধা না-পেয়ে
তিস্তার জল নীচে নামতে শুরু করেছে। রক্ষা পায় আশপাশের শতাধিক গ্রাম। পরিস্থিতি
একটু স্বাভাবিক হতেই গ্রামের ঘরে ঘরে বীর দাওয়ার গল্প শুরু হয়েছে। কী ভাবে নিজের প্রাণ দিয়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে গেলেন
তিনি, সে কথা এখন শিশুদেরও ঠোঁটস্থ। সবাই দাওয়ার কথা বলছেন। অন্য দিকে, দাওয়ার
মৃত্যুর পর অকূলপাথারে পড়েছে তাঁর স্ত্রী। কী ভাবে সংসার চালাবেন, সেই চিন্তা
করছেন তাঁরা।
তবে পরিবারকে সব রকম সহযোগিতার
আশ্বাস দিয়েছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং। রবিবার দাওয়ার পরিবারকে
সমবেদনা জানাতে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি
জানান, তিস্তার প্রবল জলোচ্ছ্বাসে কয়েক হাজার প্রাণহানি হত। নিজের জীবন দিয়ে
তাঁদের সবাইকে বাঁচিয়েছেন দাওয়া। মৃতের ভাই রঞ্জন লেপচা বলেন, ‘‘দাদার
মৃত্যুতে পরিবারটা ভেসে গেল। কিন্তু, দাদা যে ভাবে নিজের প্রাণ দিয়ে হাজার হাজার
প্রাণ বাঁচিয়েছে, তার জন্য আমরা গর্বিত।’’