• টেট পাশের নথি দেখাতে পারেননি ৯৬-র মধ্যে ৯৪ জনই, নতুন করে চাকরি বাতিল করল হাই কোর্ট
    আনন্দবাজার | ১১ অক্টোবর ২০২৩
  • বিচারপতির নির্দেশে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নতুন করে বাতিল হল ৯৪ জনের চাকরিও। আদালতের নির্দেশেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কোর্টে জানায় যে, ৯৬ জনকে নথি যাচাইয়ের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে ৯৪ জন টেট পাশের প্রমাণ দেখাতে পারেননি। বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশ, ওই ৯৪ জনের চাকরি বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে যোগ্যদের নিয়োগ করতে হবে। তাঁর আরও নির্দেশ, ২০১৬ এবং ২০২০ সালের নিয়োগের নম্বর বিভাজন-সহ মেধা তালিকা ৩ নভেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি ৩০ নভেম্বর।

    প্রাথমিকে নিয়োগে দুই চাকরিপ্রার্থী রমেশ মালিক এবং সৌমেন নন্দীর মামলাতেই এ দিন মেধা তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রমেশের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘ওই পুরো মেধা তালিকা সামনে এলেই প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের নামে আদতে কী হয়েছে, তা বোঝা যাবে।’’ সৌমেনের আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের মন্তব্য, ‘‘গোড়া থেকেই অপরিসীম দুর্নীতির কথা আমরা বারবার বলেছি। ইতিমধ্যেই ৯৪ জনের বেআইনি নিয়োগের কথা পর্ষদ স্বীকার করেছে। মেধা তালিকা বেরোলে, আরও এমন অবৈধ নিয়োগ সামনে আসবে।’’

    এ দিন শুনানিতে নজর ছিল অভিষেকের নথি জমার দিকেও। ইডি-র কাছে নথি জমা দেওয়ার জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। নির্দেশ ছিল, যে ভাবে হোক এই দিনের মধ্যেই নিজের এবং দুর্নীতিতে নাম জড়ানো বেসরকারি সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের লেনদেন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও নথি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির কাছে জমা দিতে হবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে ইডি-র আইনজীবী দাবি করেন, নথির কোনও প্রতিলিপি (হার্ড কপি) তাঁরা পাননি। তবে ই-মেল মারফত নথি (সফ্‌ট কপি) পাঠানো হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। উল্টো দিকে, অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বসুর দাবি, এ দিন সন্ধ্যাতেই রিপোর্ট জমা পড়েছে ইডি-র কাছে।

    নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর সূত্রে এই মামলায় নাম জড়ায় বেসরকারি সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের। ইডি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে, এই সংস্থা মারফত বহু সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে এবং অভিষেকই এই সংস্থার সিইও। সেই সূত্রেই অভিষেককে বিভিন্ন নথি জমা দিতে বলেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। এ দিন অভিষেকের আইনজীবী রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা জানানোর আগে আদালতে ইডি-র কৌঁসুলিরা জানতে চান, অভিষেক নথি জমা না দিলে তদন্তকারীরা কী করবেন? তখন বিচারপতি সিংহ জানিয়েছিলেন, আদালতের নির্দেশ না মানলে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবে ইডি।

    এই মামলায় এর আগে তদন্তে ঢিলেমির জন্য ইডি-কে তিরস্কার করেছিলেন বিচারপতি সিংহ। তদন্তকারী অফিসারকেও সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। ইডি-র রিপোর্টের অস্পষ্টতা নিয়েও তদন্তকারী সংস্থাকে তুলোধোনা করেছিলেন বিচারপতি সিংহ। তার পরেই ৩ অক্টোবর অভিষেককে তলব করেছিল ইডি। কিন্তু দিল্লিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকার কারণ দেখিয়ে অভিষেক সে দিন হাজিরা দেননি। বরং বিচারপতি সিংহের নির্দেশ এবং ই়ডি-র তলবের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানান। ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি সিংহের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করেনি।

    তবে জানিয়েছিল যে, ইডি অফিসে আপাতত হাজিরার বদলে নথি পাঠাবেন অভিষেক। সেই নথি দেখার পরে প্রয়োজনে ইডি তলব করতে পারবে। সেই সূত্রেই ১০ অক্টোবরের মধ্যে নথি জমা দেওয়ার সময়সীমা দিয়েছিল বেঞ্চ এবং এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, এ জন্য একদিনও বাড়তি দেওয়া যাবে না।

    এ দিন ইডি এবং সিবিআই, দুই তদন্তকারী সংস্থাই মুখবন্ধ খামে বিচারপতি সিংহের কাছে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তার পরে ইডির কৌঁসুলি জানান, নতুন তদন্তকারী অফিসার দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে এ দিন বিকেল পর্যন্ত অভিষেকের তথ্য জমা পড়েনি। তখন বিচারপতি সিংহ জানতে চান, বেঞ্চ হার্ড কপি নাকি সফট কপি, কী ভাবে নথি জমা দিতে বলেছিল? ইডির কৌঁসুলি দাবি করেন, বেঞ্চ হার্ড কপির কথাই বলেছিল। তবে সফট কপি জমা পড়েছে কি না, তা এখনও তাঁর জানা নেই। পরে অবশ্য রিপোর্ট জমা দেওয়ার দাবি করেন সঞ্জয়।

    এ দিন প্রাথমিক স্কুলের শূন্যপদ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিকে মোট শূন্যপদ কত, তা পর্ষদের কাছে জানতে চান বিচারপতি। তখনই মোট কত বেআইনি নিয়োগ হয়েছে, তা জানতে চান তিনি। চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দাবি, মোট বেআইনি নিয়োগ, কত সে ব্যাপারে পর্ষদ কোর্টে রিপোর্ট জমা দিক।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)