• সেরা ১০-এ পৌঁছেও স্বপ্নভঙ্গ! শ্ৰেষ্ঠ শিক্ষকতার পুরস্কার হাতছাড়া ‘রাস্তার মাস্টার’-এর
    এই সময় | ১০ নভেম্বর ২০২৩
  • হাতের নাগালে এসেও হাতছাড়া! আন্তর্জাতিক সম্মান 'গ্লোবাল টিচার অ্যাওয়ার্ড' প্রতিযোগিতার শেষ ল্যাপে এসে পিছিয়ে পড়লেন আসানসোলের শিক্ষক দীপনারায়ন নায়ক। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকতার পুরস্কার পেলেন পাকিস্তানের শিক্ষিকা তথা সমাজকর্মী সঙ্গে সিস্টার জেফ।ইউনেস্কো, ভারকি ফাউন্ডেশন ও দুবাই কেয়ারের যৌথ উদ্যোগে এই গ্লোবাল টিচার অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতা হয়। প্রতি বছর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। চলতি বছর ৮ নভেম্বর প্যারিসে এই প্রতিযোগিতার আসর বসে। ভারতের হয়ে আসানসোলের শিক্ষক দীপনারায়ন নায়ক এই প্রতিযোগিতায় সুযোগ পান। প্রাথমিকভাবে প্রথম ৫০ জনের মধ্যে দীপ নারায়ন জায়গা করেন। পরবর্তী বাছাইয়ে সেরা দশের মধ্যে উঠে আসেন দীপ নারায়ন।সেখানেই, আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠে বঙ্গবাসীর। আসানসোলের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি ফোটানো 'দীপ স্যার' হয়তো ছিনিয়ে আনবেন সেরার সেরা পুরস্কার। তবে শেষ মুহূর্তে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকতার পুরস্কার জিতে নেন সিস্টার জেফ। পাকিস্তানের পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার আলো দেখিয়েছেন তিনি।জামুড়িয়ার তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেন দীপ নারায়ন নায়ক। নিজের শিক্ষকতার পাশাপাশি, প্রত্যন্ত গ্রামে ঘুরে ঘুরে বাচ্চাদের পড়াশোনার ভার হাতে তুলে নেন দীপ নারায়ন। বিশেষত কোভিড কালে তাঁর কাজ তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সকলকে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে জোগাড় করেন তাঁর পড়ুয়াদের। রাস্তায় চাটাই বিছিয়ে বানিয়ে নেন ক্লাসরুম। মাটির বাড়ির দেওয়ালকেই বানিয়ে নেন ব্ল্যাকবোর্ড হিসেবে। ব্যাস, শুরু হয়ে শিক্ষার আলোয় প্রান্তিক ওই ছেলেমেয়েগুলিকে প্রবেশ করানো। এরপর থেকে তাঁকে সকলে চেনে ' রাস্তার মাস্টার' বলে।কোভিড কালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শুরু করে দেন স্কুল। নিজের তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী গ্রামে প্রথমে কাজ শুরু করেন। এরপর আরও দূরবর্তী গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম। জামডোবা, পাণ্ডবেশ্বর, পুরুলিয়ায় বিভিন্ন জায়গায় তিনি একই কায়দায় বাচ্চাদের পড়ানো শুরু করেন। এই মুহূর্তে পঞ্চাশটির বেশি এরকম 'পথ বিদ্যালয়' চালাচ্ছেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি, দুধসহ পুষ্টিকর খাবার বিতরণ, পোশাক বিতরণ এবং পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের মায়েদের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কিত সচেতনতা প্রচারেরও কাজ করেন তিনি। তবে একটি পুরস্কার হয়তো তাঁর কর্মকাণ্ডের মানদণ্ড হতে পারে না। পিছিয়ে পড়া সমাজের ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে পেরে আগামী দিনে তিনি আরও এই ধরনের সামাজিক কাজে অগ্রগণ্য ভূমিকা নেবেন বলেই মনে করা হয়।
  • Link to this news (এই সময়)