আসামি ধরতে পুলিস গ্রামে ঢুকতেই উত্তপ্ত রেজিনগর, ব্যাপক বোমাবাজি, গাড়ি লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৩
অভিষেক পাল, রেজিনগর: রাতে অভিযুক্তকে পাকড়াও করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ল পুলিস। গাড়ি লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি ও বোমাবাজির অভিযোগ উঠল। রবিবার রাতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রেজিনগর থানার নাজিরপুর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত ১১টা নাগাদ রেজিনগর থানার পুলিস নাজিরপুরের বাসিন্দা শেখ ইউসুফের বাড়িতে গিয়েছিল। তাকে বাড়িতে না পেয়ে মহিলাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিস। সেই সময় বাড়ির মহিলারা পুলিসের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ইট ছুড়ে পুলিসের গাড়ির কাচ ভেঙে দেয়। মহিলাদের পাল্টা অভিযোগ, পুলিস তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধায়ক রবিউল আলমের অনুগামী ইউসুফের সঙ্গে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আতাউর রহমানের অনুগামীদের বিবাদ দীর্ঘদিনের। কয়েকদিন আগে ইউসুফকে মারধরের অভিযোগ ওঠে জয়নগর এলাকার কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে। তারা সবাই ব্লক সভাপতির অনুগামী বলে পরিচিত। সেই ঘটনার অভিযোগ জানতে গেলে পুলিস কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। রবিবার জয়নগর এলাকার এক যুবক ট্রাক্টর নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেইসময় বিধায়ক অনুগামী ইউসুফ তাঁর উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। আক্রান্ত যুবক রেজিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর রাতে পুলিস তদন্ত করতে ইউসুফের বাড়িতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।
ইউসুফ বলেন, আমি বিধায়কের সঙ্গে দল করি বলে ব্লক সভাপতির রাগ। তার জেরে আমার উপর হামলা চালানো হয়। আমি থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম। অভিযোগ নেওয়া হয়নি। থানার পুলিস ব্লক সভাপতির হয়ে কাজ করেন। তাই কোর্টে কেস করেছি। পুলিস রাতে এসে এনিয়ে হুমকি দিয়েছে। বাড়ির মহিলাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। গোটা গ্রাম থানার বড়বাবুর উপর ক্ষুব্ধ। পুলিস জয়নগর থেকে লোক নিয়ে এসে গ্রামে ঢুকেছিল। তাই সবাই বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
যদিও ব্লক তৃণমূল সভাপতি বলেন, পুলিস কারও নির্দেশে চলে না। এক ব্যক্তির সঙ্গে ঝামেলার জন্য একজনের নামে এফআইআর হয়েছিল। সেই অভিযোগ পেয়ে পুলিস গ্রামে গিয়েছিল। পুলিসের সঙ্গে আমার কোনও লোকজন যায়নি। আমরা ওইদিন বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। পুলিসের বিরুদ্ধে কারও ব্যক্তিগত অভিযোগ থাকতে পারে। সেটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।
বিধায়ক বলেন, ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। রাত ১১টা নাগাদ পুলিস রেড করতে যায়। তখন এলাকাবাসী ক্ষেপে গিয়ে পুলিসকে ঘিরে ধরে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এলাকায় একটি খুন হয়েছিল। সেই ঘটনায় পুলিস ঠিকঠাক পদক্ষেপ করেনি। অথচ সামান্য একটি মারপিটের ঘটনায় পুলিস তদন্ত করতে আসায় সবাই ক্ষোভে ফেটে পড়ে। পুলিস যদি কারও কথা শুনে কিছু করবে ভাবে, তাহলে মানুষ প্রতিবাদ করবেই। পুলিসকে যদি কেউ মারধর বা গাড়ি ভাঙচুর করে, সেটার বিরোধিতা করি। রেজিনগরের ওসির ভূমিকা অত্যন্ত নিন্দাজনক। ওঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ আমরা কেউ মানি না।
পুলিস জানিয়েছে, একটি অভিযোগ পেয়ে ওই গ্রামে যাওয়া হয়েছিল। তারপর বিক্ষোভ হয়। একটি ঢিল এসে গাড়িতে লেগেছে। গাড়ির কাচে দাগ হয়েছে। কোনও পুলিসকর্মী জখম হয়নি।