• আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে নেই আলাদা ওয়ার্ড, মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ অন্যান্য রোগীরা
    বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড নেই। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের পাশের বারান্দায় রেখে তাঁদের চিকিৎসা চলে। মানসিক রোগীদের খামখেয়ালিপনায় নার্স, চিকিৎসা কর্মী থেকে অন্য রোগীরা জেরবার। এই ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

    আরমবাগ মেডিক্যাল কলেজ মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয় এখানে। কিন্তু হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পৃথক বিভাগ নেই। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের পাশের বারান্দায় মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের রাখা হয়েছে। মানসিক রোগীরা মাঝে মধ্যেই ওয়ার্ডের ভিতর ঢুকে পড়েন। চিকিৎসা করতে আসা অন্য রোগীদের দিকে মারমুখী হয়ে তেড়ে যান। এই ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নার্স থেকে চিকিৎসা কর্মীরা পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন। হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের তরফেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রাজ্যের অন্য মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে এদের স্থানান্তর করার চেষ্টা চলছে। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ইতিমধ্যেই মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য উৎকর্ষ চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। মানসিক রোগের সমস্যা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। জেলাভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে আত্মহত্যা প্রতিরোধ পরিষেবা ব্যবস্থাপনা, জীবনে দক্ষতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং স্কুল-কলেজে পরামর্শ দেওয়ার জন্য উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সাইকিয়াট্রিক্ট বিভাগ গড়ে নিউরোসাইকিয়াট্রি, নিউরোলজি, সাইকোলজি, বিহেভিয়ারাল নিউরোলজি, নিউরোসাইকোলজি, এপিলেপ্টোলজি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রেখে পরিষেবা দেওয়ার নির্দেশিকাও রয়েছে। যদিও আরমবাগ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য এখনও পর্যন্ত সেভাবে কোনও পরিককাঠামো নেই। এই মুহূর্তে হাসপাতালের দুইজন চিকিৎসক মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করছেন। কিন্তু এইসব রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠছে। মানসিক রোগের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। হাসপাতালের এক চিকিৎসা কর্মী বলেন, চারজন মানসিক রোগী ভর্তি আছেন। তাঁদের সামলানো যাচ্ছে না। একটু নজর না দিলেই ওয়ার্ডের বাইরে চলে যাচ্ছে। অন্য রোগীদের মারতে যাচ্ছে। ওয়ার্ডের ভিতর যততত্র মলমূত্র ত্যাগ করছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি এক ব্যক্তি বলেন, ওয়ার্ডের ভিতর মানসিক রোগীদের চিৎকার চেঁচামেচি লেগেই আছে। বারান্দা থেকে ওয়ার্ডের ভিতর ঢুকে পড়ছে। ওদের মারমুখী আচরণে আতঙ্কগ্ৰস্ত হয়ে পড়ছি। চিকিৎসক ও নার্সদের বিষয়টি দেখার জন্য বলেছি। নামী এই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে মনে হচ্ছে ভুল করেছি। মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি ইন্দিরা দত্ত বলেন, মানসিক রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো এখানে নেই। মাত্র দুইজন চিকিৎসক রোগীদের দেখভাল করছেন। মানসিক রোগীদের জন্য পৃথক বিভাগ না থাকায় পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের পাশের করিডরে রাখতে হয়েছে। এইসব রোগীদের কলকাতার পাভলভ হাসপাতালে স্থানান্তর করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যেই মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)