• একাধিক নতুন নীতি ঘোষণা করার সম্ভাবনা
    আনন্দবাজার | ২১ নভেম্বর ২০২৩
  • ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) থেকে উৎপাদন, পরিকাঠামো থেকে পরিষেবা—আজ, মঙ্গলবার শুরু হতে চলা বিশ্ববাংলা শিল্প সম্মেলনে (বিজিবিএস) এই সব ক্ষেত্রে একাধিক নতুন নীতি ঘোষণা হতে পারে বলে সরকারি সূত্রের খবর।

    সরকারি তরফে দাবি করা হচ্ছে, গত বছরের সম্মেলনে ১৩৭টি সমঝোতা এবং আগ্রহপত্র স্বাক্ষর হয়েছিল। প্রায় ৩.৪২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব ছিল। যাতে অন্তত ৪০ লক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সংখ্যা এ বারের সম্মেলন ছাপিয়ে যেতে পারে কি না, সে দিকে কৌতূহল রয়েছে পর্যবেক্ষক শিবিরের। বিজিবিএসের অন্যতম জাতীয় শিল্প সহযোগী সিআইআই। তাদের আশা, বহু লগ্নি প্রস্তাবের চুক্তি যেমন হবে, তেমনই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগ্রহপত্রও সাক্ষরিত হবে। যেমন শুধু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেই ২৬টি মউ (প্রায় ৭৫০০ কোটি টাকার লগ্নির সম্ভাবনা) সই হওয়ার কথা। শিক্ষা ক্ষেত্রে হবে ৫৯টি চুক্তি।

    ইতিমধ্যেই তাজপুরের গভীর সমুদ্র বন্দর এবং ডেউচা পাঁচামির কয়লা খনি প্রকল্প নিয়ে পদক্ষেপ করেছে রাজ্য। পাশাপাশি, কেন্দ্র এবং রাজ্য মিলিয়ে একাধিক আর্থিক করিডর তৈরি করছে। সাম্প্রতিক মন্ত্রিসভার বৈঠকে পর্যটনকে শিল্পের তকমাও দিয়েছে নবান্ন। ফলে বিনিয়োগ টানতে এই সবগুলিকেই তুলে ধরা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

    প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই রিলায়্যান্স-কর্তা মুকেশ অম্বানির সম্মেলনে আসা নিশ্চিত হয়েছে। আদানী গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি এবং তাঁর পুত্র কর্ণকেও আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। আমন্ত্রিত হীরানন্দানি গোষ্ঠীর কর্ণধার নিরঞ্জন হীরানন্দানিও। উইপ্রোর অন্যতম কর্তা রিশাদ প্রেমজি, টিভিএস-কর্তা আর দীনেশ ইতিমধ্যেই সম্মতি দিয়েছেন। থাকবেন ২৮টি দেশের প্রায় আড়াইশো জন প্রতিনিধি।

    এই সম্মেলনে এমএসএমই-কে অগ্রাধিকারে রেখেছে রাজ্য। দফতর সূত্রের দাবি, এখন রাজ্যে প্রায় ৯০ লক্ষ এমএসএমই ইউনিট রয়েছে, যা দেশের ১৪%। এ বারের সম্মেলনে বস্ত্র শিল্পে উৎসাহ ভাতা-নীতি (টেক্সটাইল ইনসেনটিভ পলিসি) সংশোধিত রূপে তুলে ধরা হবে। তাতে জোর থাকছে হস্তচালিত তাঁত শিল্পে। কারখানার সম্প্রসারণেও এই নীতির সুবিধা মিলবে।

    এমএসএমই দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, সংশোধিত নীতিতে কাপাস থেকে কাপড়—পুরো কর্মকাণ্ডকেই আনা হয়েছে উৎসাহ নীতির আওতায়। বিদ্যুৎচালিত তাঁতশিল্পেরও সুনির্দিষ্ট নীতি তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। এক কর্তার কথায়, “এখন রাজ্যে প্রয়োজনীয় কাপড়ের মধ্যে ২ কোটি মিটার তৈরি করা যাচ্ছে। আগামী বছর পুরো ৫ কোটি মিটার কাপড়ই তৈরি করা সম্ভব হবে।”

    এ বারের সম্মেলনে পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি সংক্রান্ত নীতিও পেশ করা হবে বলে খবর। রাজ্য সরকার যে ক্লাস্টারভিত্তিতে এই শিল্প চালাতে চাইছে, তাতে এই নীতি সহযোগী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তা ছাড়া শিল্পতালুক নীতি ইতিমধ্যেই গৃহীত হয়েছে। ছোট শিল্পের পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং উদ্যোগপতিদের সহায়তায় প্রায় ১৮ হাজার ‘ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড’-এর ঋণ দেওয়া হয়েছে। ঋণ এবং ভর্তুকি মিলিয়ে তার আর্থিক পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকা।

    এমএসএমই দফতর সূত্রের খবর, চামড়া রফতানির প্রশ্নে দেশের মধ্যে ১২% অবদান এ রাজ্যের। এই ক্ষেত্রেও নতুন বিনিয়োগের আশা করা হচ্ছে। বানতলায় এখন প্রায় ছ’শোটি চর্ম-কারখানা রয়েছে। গোটা পরিকাঠামো দূষণমুক্ত রাখতে বিশেষ ধরনের পরিশোধন কেন্দ্র তৈরির কথা ছিল। তার চারটি আগেই হয়েছে। আরও চারটি কেন্দ্র উন্নত করার কাজ চলছে। রাজ্য এই খাতে ব্যয় করেছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।

    দফতরের দাবি, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এমএসএমই ক্ষেত্রে ঋণদানের পরিমাণ ১.০২ লক্ষ কোটি টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ১.২৭ লক্ষ কোটি টাকা। আগামী বছর এই খাতে ১.৫০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণদানের লক্ষ্য রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই ঋণের ৫০-৬০% প্রকৃত বিনিয়োগ হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। ফলে সেই দিক থেকে আগামী দিনে অন্তত ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে। এক কর্তা বলেন, “শিল্পসাথীর আওতায় অন্তত ১০৮ ধরনের পরিষেবাপ্রদান করা হচ্ছে। যা শিল্পমহলকে বাড়তি উৎসাহ যোগাবে।”

    সিআইআইয়ের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান শিব সিদ্ধান্ত কল বলেছেন, ‘‘অর্থনীতির পাশাপাশি, সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্যে উৎপাদনশীল কর্মসংষ্কৃতি গড়ে তুলেছে। রাজনৈতিক স্থিরতা ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি ও লগ্নির বাস্তবায়নকে সফল করে তোলে।’’ সিআইআইয়ের পশ্চিমবঙ্গের চেয়ারম্যান সুচরিতা বসুর দাবি, এই রাজ্য দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় বাজার। এক দিকে, নিউ টাউনের মতো পরিবেশবান্ধব এলাকায় ব্যবসাও বিস্তৃত হচ্ছে। প্রথাগত ব্যবসার পাশাপাশি স্টার্ট-আপের মতো ক্ষেত্রও অন্য দিকে বিস্তৃতিলাভ করছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)