• বিশ্বাস তাঁর উড়ানে, জনপ্রিয়তার জোয়ারে ভেসে টঙ্ক শুধু শচীনময়
    বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৩
  • সন্দীপ স্বর্ণকার, টঙ্ক: ‘ইয়ে স্রিফ টঙ্ক কা নেহি। রাষ্ট্র কা নেতা। ইসে হারায়ে গা কওন?’ শচীন পাইলট সম্পর্কে জানতে চাওয়ার আগেই উচ্ছ্বসিত মান সিং গুর্জর। সোপরি গ্রামের বছর তেইশের যুবক। আত্মবিশ্বাীসর এক সুর মীনারাম ঝাখরের স্বরেও। শাঁখনা গ্রামের বছর ষাট বয়সি। এক নিশ্বাসে বললেন, ‘আরে ভাইয়া, আপ হি বোলিয়ে টঙ্ক কো শচীন সে পহলে ইতনা জানতে থে?’ 

    তরুণ, বৃদ্ধ, মহিলা—সবার মনেই জনপ্রিয়তার শিখরে বসে আছেন কংগ্রেস নেতা রাজেশ পাইলটের পুত্র। শচীন পাইলট। ইন্দিরা চক পেরিয়ে টঙ্ক বাসস্ট্যান্ডে জয়পুর যাওয়ার বাস ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সামসুন্নিসা, ফরিদা, দীপশ্রীর মতো কয়েকজন। ভোটের হাল হকিকৎ কী? প্রশ্ন করতে মৃদু হেসে তিনজনেই প্রায় একসঙ্গে বলতে শুরু করলেন, ‘হিরো হিরো। হামারা হিরো। শচীন পাইলট ছাড়া আর কে জিতবে? স্রেফ জিতবেই না। রেকর্ড মার্জিনে জিতবে। গতবার ৫৪ হাজার ভোটে জিতেছিলেন পাইলট। এবার মার্জিন দেখে নেবেন।’  

    রাজনীতির ময়দানে বাড়তি আত্মবিশ্বাস, আর বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নিয়ে বাজি ধরার মধ্যে ফারাক কিছু নেই। দু’টি বিষয়ই এমন অপ্রত্যাশিত। শচীনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম। তিনি এখানে শুধু কংগ্রেস নেতা নন, মানুষের কাছের লোক। কিন্তু বিজেপির প্রার্থী অজিত সিং মেহতা? তিনি তো এখানকারই প্রাক্তন বিধায়ক? বাস ড্রাইভার মনুরামের সপাট মন্তব্য, ‘উনহে ভূত-পূর্ব বিধায়ক হি রহনে দিজিয়ে।’ যদিও বিজেপির এই প্রার্থী পাইলটকে বহিরাগত বলে প্রচার করছেন। যেহেতু শচীন দিল্লিতে থাকেন। সে কথায় অবশ্য কান পাততে নারাজ মরুরাজ্যের উত্তর-পূর্ব অংশের অধিকাংশ ভোটার। 

    বানশ নদীর পারের এই শহর। রাজস্থান সরকারের ১৩৫ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দিয়ে এখানেই সেতু নির্মাণ করাচ্ছেন পাইলট। কোভিডের সময় পাশে থেকেছেন। মাত্র পাঁচ বছরেই পেয়েছেন আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। দৌসার সাংসদ থাকাকালীনই গতবার প্রথম লড়েছিলেন বিধায়ক পদে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে দিনরাত মেহনতে কংগ্রেসকে এনেছিলেন ক্ষমতায়। হয়েছিলেন উপ-মুখ্যমন্ত্রীও। তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে চেয়েছিল টঙ্কের বাসিন্দারা। হয়নি। তাই গুর্জর সমাজের সিংহভাগ অশোক গেহলটের উপর ক্ষুব্ধ। ‘গুর্জর’ শচীন পাইলটকে রেকর্ড ভোটে জিতিয়ে এবার বার্তা দেব বলেই জোশের সঙ্গে বললেন রাজু গুর্জর। শ্রীজৈনম গেস্ট হাউসের কর্মী। যদিও শচীন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে পাত্তা দিতে নারাজ। প্রচারেও প্রতিনিয়ত রয়েছে সেই বার্তা। বলছেন তিনি। বলছেন তাঁর ভোটাররাও। অনিল জৈন নামে আরনিয়াকেদার গ্রামের অটোচালক জানালেন, ‘শচীন ভাইয়া বলে গেছেন, মাফ করো। আগে বাড়ো।’ টঙ্ক এলাকার প্রতিটি গ্রামে ঘুরছেন পাইলট। ৬৬টি গ্রাম গাড়ি নিয়ে ঘুরেছেন। একসময় আফগান পাখতুন নেতা মহম্মদ আমির খান এই এলাকা ব্রিটিশদের কাছে উদ্ধার করেছিলেন। সেই সূত্রে টঙ্কে মুসলিম জনসংখ্যা অনেক। একইভাবে জাঠ, মালি, গুর্জর সম্প্রদায়ের প্রভাবও রয়েছে। বলিউডের প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খান এখানকারই ছেলে। এলাকা ঘুরে বোঝা গেল, শচীন পাইলট জনপ্রিয় সবার মধ্যে। ক্ষোভ সামান্যই—এতদিনের পুরনো জনপদ হওয়া সত্ত্বেও টঙ্কে কোনও রেলস্টেশন নেই। শচীনের কাছে এটাই দাবি এলাকার। একইসঙ্গে সম্প্রতি স্ত্রী সারার (কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার কন্যা) সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ায় মুসলিমদের একাংশ পাইলট সম্পর্কে সামান্য নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছেন। তবে পাইলট শিবিরের পাল্টা প্রচার, আগে যেখানে টঙ্কে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ লেগেই থাকত। গত পাঁচ বছরে সেসব বন্ধ। শচীনকে সামনে রেখে তাই কংগ্রেসের স্লোগান, ‘টঙ্ক হাত কে সাথ হ্যায়/পাইলট পর বিশ্বাস হ্যায়।’
  • Link to this news (বর্তমান)