ভদ্রেশ্বরে শাড়ি-সিঁদুর পরে দেবী জগদ্ধাত্রীকে বরণ করেন পুরুষরা
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: জগদ্ধাত্রী পুজো ঘিরে এখন জমজমাট চন্দননগর। পুজোকে ঘিরে আবেগ ও উন্মাদনার বাঁধ ভেঙেছে। এই শহরে থিমের জৌলুস শুধু নয় ভক্তিরসের সাগরেও ভেসে যান লক্ষ লক্ষ মানুষ। মানত পূরণ হওয়ার পর ভক্তরা সোনা, রূপোর গয়নার ভরিয়ে দেন দেবীকে। কেউ দেন বেনারসি। কোটিপতি থেকে নিঃস্ব সবাই মহাভোগ পেতে এক লাইনে দাঁড়ান। এগুলি চন্দননগরে গেলে এইসময় চোখে পড়ে।
লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের চাউলপট্টি শ্রী শ্রী জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির ঠাকুর ‘আদি মা’ বা ‘বড় মা’ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়দের বিশ্বাস, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। এখানে ঠাকুরের বাম দিকে মুখ করে থাকে হাতি। বাহন সিংহের রং সাদা। ষষ্ঠীর দিন ২০০ কেজি চালের পায়েস, অষ্টমীতে ৩৫০ কেজি চালের খিচুড়ি ও নবমীতে পোলাও ভোগ হাজার হাজার ভক্তকে বিতরণ করা হয়। এছাড়া ঠাকুরের শাড়ি গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার রীতি। কয়েক কুইন্টাল ফল চন্দননগর হাসপাতাল ও গরীব মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়। দেবীকে রূপো ও সোনার মুকুট পরানো হয়। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সোনার গহনায় সাজিয়ে তোলার রেওয়াজ। এসব গয়না থাকে লকারে। পুজোর সময় বের করা হয়। পুজোর সম্পাদক মানসকুমার সাহা বলেন, ‘রীতি ও নিষ্ঠা মেনে মায়ের পুজো হয় এখনও।’
লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের কাপড়পট্টি জগদ্ধাত্রী পুজো সমিতির পুজো ২৫৮ বছরে পা দিয়েছে। এখানে ঠাকুরের অঙ্গসজ্জায় থাকে ১০০ ভরি সোনার গয়না। প্রত্যেক বছর বহু ভক্ত মানত পূরণ হওয়ায় লক্ষ লক্ষ টাকার গয়না, বেনারসি উপহার দেন। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে মহাভোগ পেতে হাজার কয়েক মানুষের সমাগম হয়। পুজোর কাপড় ও ফল দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার রীতি। পুজোর কোষাধ্যক্ষ সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ভোগ লক্ষ লক্ষ ভক্তদের বিতরণ করি আমরা। খিচুড়ি, পোলাও, পায়েস ও নানা ব্যঞ্জন থাকে। বিসজর্নের পর তিনখানি বেনারসি জলে ভেসে ওঠে। তা সংগ্রহ করে ফের মাঝ গঙ্গায় ডুবিয়ে দেওয়া হয়।’
ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটি তেঁতুলতলা সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির পুজো ২৩১ বছরে পা দিয়েছে। এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অনুচর দাতারাম সুর। আর্থিক অনটনের কারণে এই পুজো পরে বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতিতে পৌঁছয়। তারপর তা সর্বজনীন হয়। এখানে স্থায়ী মণ্ডপে নিত্যপুজো হয়। শনি ও মঙ্গলবার বিশেষ আরতি। পুজোর সময় নবমীর দিন একসঙ্গে হয় সমস্ত পুজো। ভক্তদের দেওয়া প্রায় ২০০ বেনারসি দেবীকে পরানোর রীতি। এছাড়া কয়েকশো ভরির গয়নাও পরেন ঠাকুর। নবমীতে খিচুড়ি, পোলাও সহ নানান ব্যঞ্জনে ভোগ হয়। তা নিতে হাজার হাজার মানুষ আসেন। দশমীর দিন পুরুষরা শাড়ি, শাখা ও সিঁদুর পরে মাকে বরণ করেন। পুজোর সহ সভাপতি দেব সনাতন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ভক্তদের প্রগাঢ় বিশ্বাস মায়ের উপর। জাগ্রত মা সব বিপদে পাশে থাকেন।’