• Nehru's Tribal Wife : 'মালাবদল' করে বিয়ে! নেহরুর 'আদিবাসী বউ' বুধনি মেঝান আসলে কে?
    এই সময় | ২১ নভেম্বর ২০২৩
  • চার দিন আগে প্রয়াত হয়েছেন বুধনি মেঝান। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। আজীবন'নেহরুর বউ' নামে পরিচিত ছিলেন বুধনি। শুক্রবার রাতে পাঞ্চেতের স্থানীয় আবাসনে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ১৮ নভেম্বর তাঁর অন্তোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।সালটা ১৯৫৯। মেঝানের বয়স তখন মাত্র ১৬। সেবছরের এক ঘটনা বদলে দিল তাঁর জীবন। তখন থেকেই তিনি সবার কাছে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর 'নেহরুর আদিবাসী স্ত্রী' হিসেবে পরিচিত পেলেন। তবে কিছুদিনের মধ্য়েই বহিষ্কৃত হলেন আদিবাসী সমাজ থেকে। কেন? বলব সেকথা। এই ডাকের পিছনে লুকিয়ে ছিল একরাশ শ্লেষ, অবজ্ঞা। গোটা জীবনভর বুধনিকে বয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে সেই তকমা।১৯৫৯ সালের ৬ ডিসেম্বর ডিভিসির পাঞ্চেত জলাধারের উদ্বোধনে এসেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর। বাঁধ নির্মাণের কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন আশপাশের গ্রামগুলির বেশ কয়েকজন আদিবাসী নারী পুরুষ। উদ্বোধনের আগের দিন নেহরুকে দেখার জন্য সেদিন তাঁরাও হাজির ছিলেন সেখানে। সেই দলে ছিলেন ১৬ বছয় বয়সী বুধনি। তাঁর হাত দিয়ে জওহরলাল নেহেরু পাঞ্চেত ড্যাম উদ্বোধন করিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানস্থলে ডিভিসির পক্ষ থেকে জওহরলাল নেহরুকে মালা পরিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন বুধনি। অনেকর দাবি, পাল্টা সম্মান জানিয়ে সেই মালা পুনরায় বুধনির গলায় পরিয়ে দিয়েছিলেন জওহরলাল। আর এখানে বিপত্তি বাধে। এ ঐতিহাসিক দিনেই চিরতরে পাল্টে গিয়েছিল বুধনির জীবন। পরপুরুষের সঙ্গে মালাবদলের অপরাধে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল আদিবাসী সমাজ থেকে। গ্রামছাড়াও করা হয়েছিল। কারণ আদিবাসী সমাজের নিয়মে পরপুরুষের গলায় মালা দেওয়ার অর্থই বিয়ে। কিন্তু নেহরু আদিবাসী নন। তাই 'শাস্তি' বুধনির কপালেই। সমাজ থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয় তাঁকে।এরপর আর কোনও দিন নিজের সমাজে ফিরে যেতে চাননি বুধনি। ১৯৬২ সালে বুধনি ডিভিসির চাকরিও খোয়ান। ১৯৮৫ সালে আসানসোলের তৎকালীন কংগ্রেসের সাংসদ আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ের উদ্য়োগে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বুধনি দেখা করেন। পরে আবার তাঁর চাকরি ফিরিয়ে দিয়েছিল ডিভিসি। পরে চাকরি থেকে অবসর নেন। বুধনি থাকতেন ডিভিসির আবাসনেই। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ জীবিতকালে প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি বুধনি।শনিবার তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় পাঞ্চেত শ্মশানে। তাঁকে সম্মান জানানো হয় ডিভিসির পক্ষ থেকে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও সম্মান দেওয়া হয় তাঁকে। তবে এলাকাবাসী দাবি তুলেছে, বুধনি মেঝানের নামে বৃদ্ধাশ্রম কিংবা পাঞ্চেত এলাকায় স্থাপন করা হোক মেজানের মূর্তি। বুধনির প্রয়াণে কার্যত একটি কাহিনিতে যেন দাঁড়ি পড়ল। সারা জীবন যে অপমানের বোঝা কাঁধে করে বয়ে গিয়েছেন ইতি পড়ল সেই অধ্যায়েও। বিস্মৃতির আড়ালেই চলে গিয়েছিলেন বুধনি। তবে তাঁকে ভুলতে পারেননি প্রবীণরা। তাঁর প্রয়াণে নতুন করে সামনে আসছে সেসব পুরনো কথা।
  • Link to this news (এই সময়)