• বুড়িমা থেকে মিষ্টিমা! কৃষ্ণনগরে হরেক নামে পূজিত হন জগদ্ধাত্রী, কেন জানেন?
    এই সময় | ২১ নভেম্বর ২০২৩
  • জগদ্ধাত্রী বললেই আপনার চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফরাসডাঙা অর্থাৎ চন্দননগরের কথা। কিন্তু, মা জগদ্ধাত্রীর পুজো শুরু হয়েছিল নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে, এমনটাই দাবি করেন অনেকে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে পুজোর শুভারম্ভ। তবে কৃষ্ণনগরে মা পূজিত হন একাধিক নামে। কোথাও বুড়িমা, কোথাও মেজমা বা ছোটমা নামে। কেন এই নামকরণ? কী ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে এর পেছনে? আসুন, জেনে নেওয়া যাক।রাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় রয়েছে অসংখ্য জগদ্ধাত্রী প্রতিমা। রয়েছে তাঁদের একাধিক নামকরণও। যা নিয়ে আজও দেশ-বিদেশের মানুষের মনে কৌতূহল রয়েই গিয়েছে যেমন কৃষ্ণনগরের অন্যতম জাগ্রত দেবী চাষাপাড়ার বুড়িমা। কাঁঠালপোতার ছোটমা। কলেজস্ট্রিট পাড়ার মেজমা, তাঁতিপাড়ার বড়মা। একাধিক নামে মায়ের আরাধনায় মেতে ওঠেন মানুষ।দেবী জগদ্ধাত্রীর এমন নামকরণ নিয়ে রয়েছে অনেকের মনে কৌতূহল। প্রথমেই আসা যাক কৃষ্ণনগরের চাষাপাড়ার বুড়িমার কথায়। কে দিল বুড়িমার এই নামকরণ? লোকমুখে শোনা যায়, সর্বপ্রথম কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হয় রাজবাড়িতে। তারপর কোনও এক সময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ কোষাগার থেকে খরচ হয়ে গিয়েছিল। এরপরেই তিনি দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যান। সেই সময় নাকি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে মা জগদ্ধাত্রী স্বপ্নাদেশ দেন চাষা পাড়ার যে সমস্ত লেঠেলরা আছে তাঁদের দিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করার। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর থেকে চাষা পাড়ায় প্রচলন ঘটে জগদ্ধাত্রী পুজোর। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির সঙ্গে চাষা পাড়াতেও একইযোগে প্রচলন হতে থাকে জগদ্ধাত্রী পুজোর। প্রায় আড়াইশো বছরের প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজো বলেই চাষা পাড়ার দেবীর জগদ্ধাত্রী নামকরণ হয় বুড়িমা।একইভাবে রাজবাড়ি সংলগ্ন তাতিপাড়া এলাকায় শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। যেহেতু রাজবাড়ি সংলগ্ন তাঁতিপাড়া, তাই তাঁরাও দাবি করতে থাকে তাঁদের জগদ্ধাত্রীর নাম 'বড়মা'। কলেজস্ট্রিট পাড়া বারোয়ারির জগদ্ধাত্রী পুজো দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে বলে, তাঁদের জগদ্ধাত্রীদের নামকরণ 'মেজোমা' বলে দাবি করেছেন। আর সে নামেই আজও প্রচলিত কলেজস্ট্রিট পাড়া বারোয়ারি পুজো। অন্যদিকে, কাঁঠালপোতা বারোয়ারির পুজোর সঙ্গে চাষা পাড়া বুড়িমার প্রতিমার সাদৃশ্য বা মিল পাওয়া যায়। সেই কারণে কাঁঠালপোতা বারোয়ারি দাবি করতে থাকে, তাঁদের জগদ্ধাত্রীর নাম 'ছোটমা'।এখানেই শেষ নয়। মায়ের আরও একাধিক নাম রয়েছে গোটা কৃষ্ণনগর জুড়ে। কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ে বিখ্যাত সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যাল যে পুজোর প্রচলন ঘটিয়েছিলেন তা 'আলোকেশ্বরী মাতা' নামে পরিচিত। আমিনবাজার বারোয়ারি দেবীর জগদ্ধাত্রী মূর্তি খুব সুন্দর হয়। সেই কারণেই তারাও তাঁদের জগদ্ধাত্রী নামকরণ করেছে মিষ্টি মা। এভাবেই দিনের পর দিন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শহরের সমস্ত জগদ্ধাত্রী পুজোর পুজো উদ্যোক্তারা নিজেরাই নামকরণের এই ট্রেন্ড তৈরি করতে শুরু করে।আজও পর্যন্ত কোথাও জলেশ্বরী, কোথাও অন্ন মাতা, কোথাও বাঘা মা, কোথাও আবার রুদ্রানী মা, সোনা মা, শান্ত মা এভাবেই কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রীর নামকরণ চলে আসছে। এর কোন ইতিহাস খুঁজে না পেলেও প্রতিটা বারোয়ারি বা পুজো উদ্যোক্তারা নিজেরাই তাঁদের জগদ্ধাত্রী দেবীর নামকরণ সৃষ্টি করেছে বলে জানা যায়।
  • Link to this news (এই সময়)