• সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে টোটোয় চেপে শহর ভ্রমণে হনুমান, অবাক কাণ্ড দুর্গাপুরে
    এই সময় | ২১ নভেম্বর ২০২৩
  • রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে টোটো। যাত্রীর সিটে নজর পড়তেই চমক। দিব্যি বহাল তবিয়তে বসে এক হনুমান। সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে গায়ে গা ঘেঁষে বসে এভাবেই নাকি যাতায়াত করেন বজরংবলী। নিত্য যাত্রী হনুমান তাই টোটো যাত্রীদের পরিচিত। ভয় ডরের বালাই নেই। প্রতিদিনই টোটো চেপে দুর্গাপুরের ইতিউতি ঘুরে বেড়ান তিনি।টোটোর নিত্যযাত্রী হনুমানকারও পোষা নয়, নিজের মনমর্জির মালিক বজরঙবলী। তবে শহর ভ্রমণে বাহন হিসেবে তার পছন্দ মুকেশ টোটো চালকের টোটো। ওই টোটো চালকের সঙ্গেই টোটোয় চড়ে টো-টো করে ঘুরে বেড়ানোই নেশা বজরংজির । টোটো রিক্সায় এমন যাত্রীকে দেখে অবাক। এমনই নজিরবিহীন দৃশ্য ধরা পড়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে। যাত্রীবাহী একটি টোটো রিক্সায় নিত্যদিন একটি হনুমানকে চড়ে বসে থাকতে দেখেন পথচারী থেকে যাত্রীরা। ওই টোটোতে বসেই স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করছেন আবার যাত্রীরাও। তবে যাত্রীদের তো একটা গন্তব্য রয়েছে। কিন্তু বজরংজীর গন্তব্য বলে কিছুই নেই। সকাল থেকে টোটো রিক্সায় চড়াই তার শখ। টোটো দাঁড় করিয়ে রাখলেই মেজাজ হারায় বজরংজি। টোটোয় চেপে আশপাশের এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। ওই টোটোতে যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করতেই বজরংজি লাফিয়ে এসে তার সিটের দখল নেয়। যাত্রী থেকে পথচারীরা তাঁঁকে মাঝেমধ্যেই খাবার খাওয়ায়, আদর করেন। আবার গলা জড়িয়ে ধরলেই মাথায় দু-হাত ভরা আশীর্বাদ করেন বজরংজি। স্বয়ং বজরংবলীর আশীর্বাদ নিতে পথেঘাটে টোটো রিক্সা দাঁড় করিয়ে দেয় অনেক ভক্তই। পথচারীরা আবার ভিড় করে দাঁড়িয়ে বজরঙ্গীজি'কে প্রণামও করে। টোটো চালক মুকেশ দত্তের দাবি, 'ওই হনুমানটিকে সঙ্গে নিয়ে টোটোর যাত্রা শুরু করলে বউনিটাও বেশ ভালোই হয়।' দীর্ঘদিন ধরে এই ভাবেই চলে আসছে মুকেশ ও বজরঙ্গীজির অটুট সম্পর্ক।কী ভাবে লাগল হনুমানের টোটো চড়ার নেশা?স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর এক নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর এলাকার বাসিন্দা মুকেশ দত্ত। তিনি পেশায় টোটো রিক্সা চালক। তিনি বলেন, 'আমাদের এলাকায় প্রায়ই হনুমানের দল আসে। কয়েকমাস আগে ওই দল থেকে একটা প্রাপ্তবয়স্ক হনুমান দল ছুট হয়ে যায়। আমাদের এলাকায় সে একাই ঘোরাঘুরি শুরু করে। এলাকার বাসিন্দা সহ আমিও তাকে খাবার খাওয়াতাম। একদিন দেখি আমি টোটো নিয়ে রোজগারের জন্য বের হতেই আমার টোটোর সিটে এসে বসে পরে ওই হনুমানটি। এর পরে আমি তাকে টোটো থেকে নামানোর জন্য অনেক কৌশল করি। কিন্তু বজরংজি কী আর কথা শোনে। চিন্তায় পড়ে যাই আমি। আর হয়তো কোনও যাত্রী আমার টোটোই চড়বেন না। হনুমানটিকে দেখে ভয় পাবে।'শত অনুনয় বিনয় করেও কাজ না হওয়ায়, কোনও উপায় না পেয়ে হনুমানটিকে টোটো করে এলাকায় ঘোরাতে নিয়ে যায় ওই টোটো চালক। তার পরের ঘটনা সম্পর্কে টোটো ড্রাইভার বলেন, 'অবাক বিষয় বাড়ি থেকে এলাকার প্রধান রাস্তায় যেতেই দুজন যাত্রী মেলে। তাঁরা নির্দ্বিধায় আমার টোটোতে চড়ে বসেন এবং গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বলেন। আমার মনে ভয় হলেও বজরংজি যাত্রীদের কোনও সমস্যা করেনি। সে নিজের মত ওই দুই যাত্রীদের সঙ্গেই টোটোয় বসে যেতে থাকে। কৌতুহলী যাত্রীরাও বজরংজির বিষয়ে নানান প্রশ্ন আমায় করতে থাকে। ওই দিন রোজগারও বেশ ভালোই হয়।পরেরদিন টোটো বের করতেই একই কাণ্ড, হনুমানটি আবার আমার টোটোতে চড়ে ঘুরতে বেরিয়ে যায়। এই ভাবেই চলতে থাকে। আমার অর্থ উপার্জনও বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রী থেকে পথচারীরা সবাই বজরংজির কাছে নাথা নত করে আশীর্বাদও নেয়। সে কারও কোনও ক্ষতি করেনি। যে যা খাবার দেয় সে খায়। টোটো করে ঘুরে বেড়ানো তার নেশা হয়ে দাড়িয়েছে বর্তমানে। টোটো ভ্রমণ শেষে এলাকায় ফিরে এসে সে নিজের মতো ফের ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।'স্থানীয় এক পথচারী সুভাষ বোষ বলেন, 'দেখে অবাক লাগছে যে হনুমান আবার টোটোর যাত্রী। প্রায়ই দেখি যাত্রী সহ ওই হনুমানটি টোটোতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা শুনেছি হনুমানের বাচ্চা যখন মায়ের কোল থেকে নিচে পড়ে যায়। তখন তার মা বা হনুমানের দল তাকে আর সঙ্গে নেয় না। সেই বাচ্চা হনুমানটি লোকালয়ে বেড়ে ওঠে। সেই সময় সে মানুষের মত চালচলন শুরু করে। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে অনুমান করছি। টোটোতে বসে যাচ্ছে তো মনে হচ্ছে মানুষের মত অবিকল এক যাত্রী যাচ্ছে। নজিরবিহীন দৃশ্য একেবারেই।'
  • Link to this news (এই সময়)