Uttarakhand Tunnel Collapse Updates : 'খেয়ে নিও মা, টেনশন করো না...!' উত্তরকাশীর টানেল থেকে ভেসে এল বাংলার জয়দেবের আর্তনাদ
এই সময় | ২১ নভেম্বর ২০২৩
আশঙ্কা, উদ্বেগ, কষ্ট। এই শব্দগুলো বয়ে নিয়েই এখন দিন-রাত কাটাচ্ছেন উত্তরকাশীতে নির্মীয়মান সিল্কিয়ারা টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকরা। সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের কণ্ঠে এখন একটাই বাক্য 'আর পারছি না, দ্রুত আমাদের উদ্ধার করুন।' শুধুই কি নিজের চিন্তা? কেমন আছেন অসুস্থ-বয়স্ক মা-বাবা? কেমন আছে বাড়ির আদরের ছোট ভাইটা? নাহ, সে খোঁজও তো নেওয়া হইনি অনেক দিন হল। 'কেমন আছ', 'আমি ভালো আছি'-প্রিয়জনের সঙ্গে রোজকারের অভ্যাসমতো শব্দবন্ধগুলোর বিনিময় বন্ধ বিগত ১০ দিন ধরে। অন্ধকূপের মধ্যেই আটকে রয়েছেন আরামবাগের নিমডাঙির ছেলে জয়দেব প্রামাণিক। মা-বাবার শরীর কেমন তা জানার সুযোগ নেই। তবে মাথাতেই সারাক্ষণ তাঁদের কথাই। মনে পড়ছে বাবা-মায়ের মুখ। কবে আবার পৃথিবীর আলো দেখতে পাবেন জানা নেই।সামান্য সুযোগ পেয়েছিলেন ধ্বংস্তূপ সরানোর কাজে দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলার। কয়েক সেকেন্ডের কথাতেই মা-বাবার কাছে পৌঁছে দিতে বলেছে ছোট্ট একটা বার্তা। সরু নলের মাধ্যমেই সুপারভাইজারকে জয়দেব বলেন, 'মা টেনশন করো না। আমি ঠিক আছি। টাইমে খেয়ে নেবে। বাবাকেও টাইমে খেয়ে নিতে বলবে।' আর্জি একটাই তাঁর এই ছোট্ট কথাটুকু যেন পৌঁছয় বাবা-মায়ের কান পর্যন্ত। আটকে থাকা শ্রমিকদের সাহস জোগানোর চেষ্টা করেন সুপারভাইজার। খুব শীঘ্রই তাঁদেরকে উদ্ধারের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।পরিবাবের একমাত্র ছেলে জয়দেব। মা তপতী প্রামাণিক শয্যাশায়ী। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন, মাথা তোলার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই। কবে উদ্ধার হবে বাড়ির ছেলে? দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে গোটা পরিবারকে।দিনটা ছিল ১২ নভেম্বর রবিবার, দীপাবলি। গোটা দেশ তখন দীপাবলি উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর সেই দিন দুপুরের দিকে তাঁদের জীবনে কেমন যেন ঝুপ করে সন্ধ্যা নামল। আচমকা টানেলের মধ্যে ধস নামায় আটকে পড়লেন ৪১ জন শ্রমিক। ব্যাস সেই থেকে শুরু বিভীষিকাময় সময়, এখনও কাটেনি তা। চোখের সামনে কেটে গিয়েছে ১০ দিন। অবশ্য দিন-না রাত সে বোঝার উপায় তাঁদের নেই। সুড়ঙ্গের গহীন অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। উদ্ধরকাজ চালাচ্ছে প্রশাসন। তবে ১০ দিনের মাথাতে অধরা সাফল্য। শুক্রবার থেকে কয়েক দিনের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়েছিল উদ্ধারকাজ। কারণ খননকার্য চলাকালীন হঠাৎই পুনরায় ফের ফাটলের শব্দ শোনা যায়। যান্ত্রিক ত্রুটিও ধরা পড়ে খনন মেশিনে। এরপর শ্রমিকদের উদ্ধারে বিকল্প পথের সন্ধান করে প্রশাসন।পাঁচ বিকল্প পরিকল্পনাকে অস্ত্র করে কাজ চলছে শ্রমিকদের উদ্ধারে। শুরু হয়েছে পাহাড়ের মাথার দিক কেটে খননকার্যের প্রক্রিয়াও। ৬ ইঞ্চির পাইপ প্রবেশ করানো গিয়েছে ধ্বংস্তূপের মুখে। সেই পাইপের মাধ্য়মে গরম খিচুড়ি, মোবাইল ফোন, চার্জার পাঠিয়েছে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। যতটা সম্ভব বাইরে থেকে পাইপের মাধ্য়মেই যোগাযোগ রাখা হচ্ছে শ্রমিকদের সঙ্গে। আশ্বস্ত করা হচ্ছে 'আর একটু ধৈর্য' ধরতে, মানসিক ভাবে ভেঙে না পড়তে। ঘটনাস্থলে এসেছেন আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার-পরিজনরা। পাইপের মাধ্য়মে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে শ্রমিকদের। কথাও হচ্ছে সামান্য। সুড়ঙ্গের তলা থেকে ক্ষীণ হলেও ঘরের ছেলের গলার আওয়াজে সামান্য হলেও বুকের পাথর গলছে। তবে সময় যতই গড়াচ্ছে ততই যেন আশার পারদ ফুরোতে শুরু করছে শ্রমিকদের। তাঁদের কথা শুনলেই তা স্পষ্ট। অন্ধকূপে দিন কাটাতে কাটাতে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছেন তাঁরা। এখন তাঁদের মুখে একটাই প্রশ্ন 'আর কতদিন এভাবে?'উদ্ধারকারী দলের তরফে আটকে পড়া শ্রমিকদের যতটা সম্ভব মানসিক শক্তি জোগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শ্রমিকদের এখন একটাই কাতর আর্তি তাঁদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই গহীন কূপ থেকে উদ্ধার করা হোক। সিল্কিয়ারা টানেলের ভিতের আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্য়ে রয়েছেন উত্তর প্রদেশের আটজন। সোমবার তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে যান উত্তর প্রদেশ সরকারের প্রতিনিধি অরুণ কুমার। সেই কথোপকথনেই নিজেদের মানসিক অবস্থার কথা কাতর স্বরে জানিয়েছেন আটকে এক শ্রমিক। সরু পাইপের মাধ্যমে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন অরুণ কুমার। মানসিক ভাবে পাশে থাকা বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, 'চিন্তা করবেন না, শক্ত থাকুন। গোটা দেশ আপনাদের জন্য প্রার্থনা করছে। উদ্ধার অভিযান দ্রুত সফল হবে। আমরা সকলে একসঙ্গে বাড়ি ফিরব।' কথোপকথনের সময় উত্তর প্রদেশের এক শ্রমিক অখিলেশ কুমার বলেন, 'আমরা খাবার পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। উদ্ধারকাজ কতদূর? দয়া করে আমাদের দ্রুত বের করুন। যতদিন যাচ্ছে ততই আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে দিনযাপন।'