• খুঁটিপুজো করে শাহ-সভার প্রস্তুতি শুরু পদ্মের, ১৪-র রেকর্ড ভাঙাই লক্ষ্য, ভিড়ে ১০টি বাক্স রাখার ‘চমক’
    আনন্দবাজার | ২৬ নভেম্বর ২০২৩
  • ধর্মতলায় বুধে পা অমিত শাহের। এর আগে
    কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা করেছিলেন ২০১৪
    সালের ৩০ নভেম্বর। তখন রাজ্যে বিজেপির শক্তি বলতে দুই সাংসদ, এক বিধায়ক। এখন খাতায়কলমে
    ১৭ সাংসদ আর ৭৪ বিধায়ক। তবে রাহুল সিংহের সভাপতিত্ব কালের সভাকে টপকে যাওয়াই
    লক্ষ্য সুকান্ত মজুমদার শিবিরের। রবিবার তারই চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হল। যেখানে
    মঞ্চ বাঁধা হবে, সেই জায়গায় খুঁটিপুজো হয় রবিবার। তার আগে
    সেখানে বসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শো‌নেন রাজ্য
    বিজেপির নেতারা।

    দিল্লিতে সদ্য ক্ষমতায় আসা বিজেপির ২০১৪
    সালের সভায় উল্লেখযোগ্য জমায়েত ছিল ধর্মতলায়। সে বারেও শাহ এসেছিলেন। এ বারেও
    আসছেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে শাহের সামনে বড় জমায়েত করাই এখন বিজেপির বড়
    লক্ষ্য। সেই কারণে বিজেপি রাজ্য জু়ড়ে প্রচারে নেমেছে। রবিবারই রাজ্যের বিভিন্ন
    প্রান্তে প্রচারে রয়েছেন সুকান্ত ছাড়াও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি
    দিলীপ ঘোষ-সহ দলের সাংসদ, বিধায়কেরা। রবিবার খুঁটিপুজোর
    অনুষ্ঠানে তাঁরা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তবে এসেছিলেন দুই রাজ্য সম্পাদক জগন্নাথ
    চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পাল এবং সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)
    অমিতাভ চক্রবর্তী।

    তৃণমূল ফি বছর যেখানে ২১ জুলাইয়ের সভা করে, সেখানেই মঞ্চ বাঁধা হবে।
    প্রথম থেকেই এই গোঁ ছিল রাজ্য বিজেপির। দু’দুবার পুলিশের কাছে আবেদন করেও অনুমতি
    না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে গত শুক্রবারই চূড়ান্ত অনুমোদন মিলেছে। তার পরে
    রবিবার থেকেই মঞ্চ বাঁধার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। বিজেপি সূত্রে যা জানা গিয়েছে
    তাতে, তৃণমূল ‘শহিদ দিবস’-এর সভায় যেমন মঞ্চ বাঁধে, তেমনটাই করতে চায় বিজেপি। ত্রিস্তরীয় মঞ্চে নেতাদের পাশাপাশি দলের নিহত
    কর্মীদের পরিবারের সদস্যদেরও বসার ব্যবস্থা থাকবে। শাহের বক্তব্য রাখার জায়গাও
    আলাদা হবে। যেমনটা তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য করে। লম্বা,
    চওড়া, উচ্চতায় একই রকম মঞ্চ তৈরির পরিকল্পনা
    নিয়ে অনুকরণের অভিযোগ তুলেছে। প্রসঙ্গত, ধর্মতলায় সভার আগে তৃণমূলও
    এই ভাবে খুঁটিপুজো করে থাকে। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ
    বলেন, ‘‘কাকের পিছনে ময়ূরপুচ্ছে গুঁজলেই ময়ূর হয় না। তাই বড়
    মঞ্চ বানিয়ে কিছু হবে না। জনসমর্থন না থাকলে জনসভা করে কোনও লাভ হয় না। জনসমর্থন
    রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।’’ বিজেপি অবশ্য এটাকে অনুকরণ মানতে চাইছেন না। দলের
    রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিশ্বের
    বৃহত্তম দল বিজেপি। কোনও আঞ্চলিক দলের অনুকরণের দরকার পড়ে না আমাদের। তারা কী
    বলছে, তা নিয়েও আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। তৃণমূল বরং দলের
    প্রকৃত মালিক নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলমাল মেটাক।’’

    ১০০ দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয়
    প্রকল্পের টাকা রাজ্য পাচ্ছে না বলে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব তৃণমূল। তা নিয়ে দিল্লিতেও
    বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার
    প্রেক্ষিতেই বিজেপির এই সভা। দলের লক্ষ্য রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প
    থেকে ‘বঞ্চিত’ এক লাখ মানুষকে হাজির করা। রবিবার জগন্নাথ দাবি করেন, ‘‘আমরা এক লক্ষ জমায়েতের
    কথা বলেছিলাম। কিন্তু যে ভাবে আমরা বিভিন্ন জেলা থেকে সাড়া পাচ্ছি, তাতে সংখ্যাটা অনেক বেশি হয়ে যাবে।’’ প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গ
    এবং জঙ্গলমহল থেকে লোক আনার জন্য রাজ্য বিজেপি ন’টি ট্রেন ভাড়া করেছে বলেও জানা
    গিয়েছে। একই সঙ্গে ঠিক হয়েছে বুধবার হাওড়া এবং শিয়ালদহ থেকে দু’টি মিছিল এসে
    মিশবে ধর্মতলা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, জমায়েতে যোগ
    দেওয়া মানুষেরা যে ‘বঞ্চিত’, তার প্রমাণ রাখতে বিশেষ
    ব্যবস্থা করছে দল। ধর্মতলা চত্বরে বিভিন্ন জায়গায় ১০টি বড় মাপের বাক্স রাখা
    থাকবে। সেখানে দলের সমর্থকেরা কে কোন প্রকল্প থেকে বঞ্চিত, তা
    লিখিত ভাবে জমা দেবেন। তবে সভার দিনেই শুধু নয়, আগামী দিনের
    আন্দোলনের জন্য এই অভিযোগ সংগ্রহ চালিয়ে যাবে বিজেপি। পরে তা দিল্লিতে পাঠানোর
    পরিকল্পনাও রয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগে তৃণমূলও এই ভাবে অভিযোগ
    সংগ্রহ করেছিল। তা নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন স্বয়ং অভিষেক।

    বিজেপি সূত্রে যা জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুরে কলকাতা
    বিমানবন্দরে পৌঁছে শাহ হেলিকপ্টারে রেসকোর্সে যাবেন। সেখান থেকে দুপুর ২টো নাগাদ ধর্মতলার
    মঞ্চে আসার কথা। ১২টা থেকে সভা শুরু হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিবর্তে হবে
    রাজনৈতিক নাটক। তৃণমূলকে আক্রমণ করে গান গাইবেন দলের কবিয়াল বিধায়ক অসীম সরকার।
    ব্যঙ্গ কবিতা আবৃত্তি করবেন অভিনেতা রাজনীতিক রুদ্রনীল ঘোষ। রাজ্য নেতাদের
    বক্তৃতাদের শেষে শাহ বলা শুরু করবেন দুপুর আড়াইটে নাগাদ।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)