• Mamata Banerjee: আলটপকা কথা নয়, কড়া বার্তা মমতার
    এই সময় | ১১ জানুয়ারি ২০২৪
  • লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের সর্বস্তরে ঐক্য ও কঠোর শৃঙ্খলা বজায় রাখার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের নিয়ে বুধবার কালীঘাটে বৈঠক করেন তৃণমূলনেত্রী। যদিও এদিনের বৈঠকে মমতার নির্দেশ আসলে গোটা রাজ্যেই দলের সব স্তরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতারা।সম্প্রতি দলে নবীন-প্রবীণের ভূমিকা, বয়সের ঊর্ধ্বসীমা, এক ব্যক্তি-এক পোস্টের মতো বেশকিছু ইস্যুতে তৃণমূলের কিছু নেতা বারবার বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। তৃণমূলের মুখপাত্ররাও এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করেছেন, যা নিয়ে বিতর্ক বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের সর্বস্তরে ঐক্য ও কঠোর শৃঙ্খলারক্ষার জন্য দলীয় মুখপাত্রদের টিমে রদবদল, সোশ্যাল মিডিয়ায় আলটপকা কমেন্ট বন্ধ করা-সহ একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলার সভাপতি থেকে ব্লক নেতৃত্ব যাতে সাংসদ-বিধায়কদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে না পড়েন, তারও নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বুথস্তর থেকে রাজ্য নেতৃত্ব যাতে একসুরে বিরোধীদের প্রচারের জবাব দিতে পারেন, তার জন্য একটি বুকলেট তৈরির সিদ্ধান্তও নিয়েছেন মমতা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই বুকলেট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত তৃণমূলের একাধিক নেতার বক্তব্য।তৃণমূলের মুখপাত্রদের টিম পুনর্গঠনের দায়িত্ব অভিষেকের সঙ্গে সুব্রত বক্সীকে দিয়েছেন মমতা। সূত্রের খবর, এই জোড়া দায়িত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গে বৈঠকে অভিষেক বলেন, ‘দলনেত্রী যে দায়িত্ব দেবেন, সেই দায়িত্ব পালন করব।’ এ দিনের বৈঠকে প্রথমে অভিষেক কিছু বলতে না-চাইলেও পরে নেতৃত্বের অনুরোধে তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন।যে কোনও বড় নির্বাচনের আগে দলে শৃঙ্খলারক্ষার জন্য এই ধরনের বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী। এবার সামনে লোকসভা ভোটের আগে মমতার নির্দেশ তাই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।গত পয়লা জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষ, তাপস রায়-সহ তৃণমূলের একদল নেতার বক্তব্যে প্রবল বিতর্ক হয়েছে। পরবর্তী কয়েক দিনে সৌগত রায়, নারায়ণ গোস্বামী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারাও এই ইস্যুতে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। আবার উত্তরবঙ্গে উদয়ন গুহ থেকে দক্ষিণবঙ্গে মনোরঞ্জন ব্যাপারী—তৃণমূলের বহু নেতা দলীয় কোন্দল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেসবুক পোস্ট করেন।এই প্রেক্ষাপটে বুধবার কালীঘাটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বৈঠকে মমতা বলেন, ‘দলে গণতন্ত্র রয়েছে, যা বলার দলের অভ্যন্তরে বলতে হবে। কারও কোনও প্রশ্ন থাকলে, তা দলের মধ্যেই জানাতে হবে। প্রকাশ্যে মুখ খুললে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তৃণমূলনেত্রীর নির্দেশ, কোনও নেতার ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলে তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সীকে জানাতে পারবেন। প্রয়োজনে কালীঘাটে মমতার দপ্তরের জানাতে পারবেন।বৈঠক শেষে মানস ভুঁইঞা বলেন, ‘কোনও নেতা ব্যক্তিগত অভিমত বাইরে বলতে পারবেন না। দলের মধ্যে বলতে হবে। দলের তরফে যা বলার, তা মুখপাত্ররা বলবেন।’ মমতা যে মুখপাত্রদের সকলের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন, তাও এ দিনের বৈঠকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলের মুখপাত্রদের সর্বশেষ যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানে ২৪ জনের নাম ছিল।এই মুখপাত্রদের অনেকে দলের বক্তব্য সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারছেন না বলে তৃণমূলনেত্রী মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে অভিষেক ও সুব্রত বক্সী আলোচনা করে মুখপাত্রদের নতুন টিম তৈরি করবেন বলে মমতা নির্দেশ দিয়েছেন।বৈঠকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ব্লক ধরে ধরে তৃণমূলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে মমতা তাঁর পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন। কোন ব্লকে কী ঘাটতি রয়েছে, তা চিহ্নিত করেছেন তিনি। পশ্চিম মেদিনীপুরের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরাকে মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়ার সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। সুজয়ের কাজকর্ম নিয়ে তৃণমূলনেত্রী অনেক দিন ধরেই অসন্তুষ্ট।তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘সুজয়কে সরিয়ে দেওয়ার কথাও দলনেত্রী কয়েক মাস আগে বলেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁকে সরানো হয়নি। তবে এদিন ফের সতর্ক করা হলো।’ সূত্রের দাবি, সুজয় এ দিন বৈঠকে মমতার সামনে বলেছেন, ‘আমাকে দলের একজন দিনের পর দিন গালাগালি দিচ্ছেন।’ সুজয় মেদিনীপুরের বিধায়কের দিকে ইঙ্গিত করেছেন বলে তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য।শঙ্কর দোলুই, দীনেন রায়ের মতো জেলার আরও কয়েক জন নেতা মমতার অসন্তোষের মুখে পড়েছেন। খড়্গপুরে তৃণমূলের একটি অফিস খুলতে না পারার জন্য দীনেনকে দুষেছেন মমতা। সাংসদ দেবকে নিয়ে অবাঞ্ছিত মন্তব্য করার জন্য শঙ্করকে সতর্ক করেছেন দলনেত্রী। যদিও এই বৈঠককে কটাক্ষ করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘এই সব মিটিং করে কোনও লাভ হবে না। মেদিনীপুর লোকসভা বিজেপির ছিল, এবার ঘাটালেও বিজেপি জয়ী হবে।’রাজ্য, দেশ, দুনিয়া, বিনোদন, খেলার সব খবর সবার আগে পেতে চান?'হোয়াটসঅ্যাপে ফলো করুন এই সময়কে।
  • Link to this news (এই সময়)