• রামমন্দির নিয়েও নেহরুকে আক্রমণ
    আনন্দবাজার | ১২ জানুয়ারি ২০২৪
  • চিন, কাশ্মীর সমস্যার পরে এ বার রামমন্দির উদ্বোধনে কংগ্রেসের অনুপস্থিতির জন্যও জওহরলাল নেহরুকে কাঠগড়ায় তুলল বিজেপি।

    স্বাধীনতার পরে গুজরাতে নতুন করে গড়ে তোলা সোমনাথ মন্দিরের উদ্বোধন এড়িয়ে গিয়েছিলেন নেহরু। গেরুয়া শিবিরের দাবি, সেই প্রথা মেনেই এ যাত্রায় রামমন্দির উদ্বোধন এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতৃত্বের পাল্টা মত, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের যে পথে নেহরু এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটিই সঠিক পথ। তবে সূত্রের মতে, ২২ জানুয়ারি রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিনে না গেলেও ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা যখন উত্তরপ্রদেশের উপর দিয়ে যাবে, তখন রামমন্দির দর্শনে যেতে পারেন রাহুল গান্ধী। কারণ দল ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধনের নামে যে ‘রাজনৈতিক ইভেন্ট’ হতে চলেছে, তাকে বয়কট করেছে মাত্র। রামমন্দিরকে নয়।

    রামমন্দির কর্তৃপক্ষ মন্দির উদ্বোধনের দিন কংগ্রেসের দলনেত্রী সনিয়া গান্ধী, কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জ্জুন খড়্গে ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরীকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু যাবতীয় রাজনৈতিক ঝুঁকি, বিশেষ করে হিন্দি বলয়ে হিন্দু ভোট মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও গত কাল ওই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অলোক কুমার বলেন, ‘‘আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল সনিয়া গান্ধী আসবেন। এমনও বলা হয়েছিল তিনি না আসতে পারলেও, প্রতিনিধিদল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে ওঁরা কেউ থাকবেন না। মানুষ এর বিচার করবেন।’’ বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, ‘‘কংগ্রেস বরাবরই রামমন্দিরের বিরোধিতা করে এসেছে। এ বার রামমন্দির উদ্বোধনেরও বিরোধিতায় নেমেছে। জনতার আদালতে কংগ্রেসের বিচার হবে।’’

    কংগ্রেসের এই প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্তে ফের বিজেপির আক্রমণের নিশানায় উঠে এসেছেন জওহরলাল নেহরুও। আজ বিজেপি সাংসদ সুধাংশু ত্রিবেদী বলেন, ‘‘মহাত্মা গান্ধী যে রামরাজ্যের কথা বলতেন, সেই রাস্তা ত্যাগ করেছে কংগ্রেস। স্বাধীনতার পরেই নেহরু নতুন করে তৈরি হওয়া সোমনাথ মন্দির উদ্বোধনে আপত্তি করেছিলেন।’’ সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা বলবীর পুঞ্জ আজ অযোধ্যার উপরে নিজের লেখা একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে দাবি করেন, ‘‘রামমন্দিরের বিরোধী ছিলেন জওহরলাল। ঔপনিবেশিক হীনমন্যতাবোধ থেকেই তিনি ওই বিরোধিতা করেছিলেন।’’

    অন্য দিকে কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, ধর্মনিরপেক্ষতার যে আদর্শকে সঙ্গী করে নেহরু এগিয়েছিলেন, আজও তা প্রাসঙ্গিক। যদিও রামমন্দির উদ্বোধনকে একেবারে প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয় বলে দলের উপরে চাপও রয়েছে হিন্দি বলয়ের নেতাদের। কংগ্রেসের বক্তব্য, রামমন্দির উদ্বোধনকে কার্যত রাজনৈতিক ইভেন্ট বানিয়ে ফেলেছে বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবার। তাই ওই অনুষ্ঠানে থাকছে না দল। তবে রামমন্দিরকে বয়কট করা হচ্ছে না। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা রামমন্দির ছুঁয়ে যেতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া কংগ্রেসের যে উত্তরপ্রদেশ ন্যায় যাত্রা চালু রয়েছে, সেটি ১৫ জানুয়ারি অযোধ্যা পৌঁছবে। কংগ্রেস সমর্থকেরা সরযূ নদীতে স্নান করে রামের অস্থায়ী মন্দিরে পুজো দেবেন।

    বাম-তৃণমূল-সহ ইন্ডিয়া মঞ্চের অধিকাংশ দলই ২২শের অনুষ্ঠান বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মমতা-কংগ্রেস-বাম-এসপির মতো দলগুলি যে রামমন্দির বিরোধী, সেই পোস্টার পড়েছে অনেক জায়গাতেই। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অলোক কুমার বলেন, ‘‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সভাপতিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। যদিও তিনি আসবেন কি না সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে সংবাদমাধ্যমে জেনেছি, মমতা আসছেন না।’’

    সামনেই লোকসভা ভোট। রামমন্দিরের সঙ্গে হিন্দু ভাবাবেগ জড়িত থাকায় প্রকাশ্য মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। পরিবর্তে ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ বলে মমতার পুরনো একটি বক্তব্যকে আজ আবার এক্স হ্যান্ডলে তুলে এনেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। ঘরোয়া ভাবে দলীয় নেতাদের মমতা জানিয়েও দিয়েছেন, যাওয়ার পরিকল্পনা নেই তাঁর। কিন্তু কোনও বিবৃতি দিয়ে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতে দেখা যায়নি তাঁকে। তিনি বা তাঁর দলের অন্য কেউ আমন্ত্রিত হয়েছেন কি না, তা খোলসা করেনি তৃণমূল। দলের বক্তব্য, যেহেতু অন্য দলগুলি আমন্ত্রণ পেয়েছে, ধরে নেওয়া যায় তৃণমূলও আমন্ত্রণ পেয়েছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)