• একশো বিঘার জমির মালিক প্রাক্তন ডিআই
    বর্তমান | ১২ জানুয়ারি ২০২৪
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, ময়না: শ্রীরামপুর ব্রিজ থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে বাঁশদা গ্রাম। এই গ্রামের ঢালাই রাস্তার ধারে উঁচু পাঁচিল ঘেরা বাড়ির মালিক চাপেশ্বর সর্দার। এই বাড়ির তিনদিকে গড়ময়না, চংরা এবং গড়সাফাৎ মৌজায় একশো বিঘার বেশি ভেড়ি ও চাষের জমিও তাঁরই। অভিযোগ, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে চাকরি করলেও শিক্ষক নিয়োগ এবং বদলিতে দুর্নীতির বিপুল টাকায় নামে-বেনামে জমি কিনেছেন। করেছেন একের পর এক মাছের ভেড়ি। তা লিজে দিয়ে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার আয় করতেন। এই তল্লাটে এত বেশি সম্পত্তি কারও নেই বলে এলাকার বাসিন্দাদের দাবি। গত ৩০এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক(মাধ্যমিক) অফিস থেকে অবসর নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। দুর্নীতির অভিযোগে বুধবার সিআইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

    বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ চাপেশ্বরবাবুর বাড়ির লোহার গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই এগিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী রিক্তাদেবী। তিনি স্থানীয় ৩নম্বর চংরা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। রিক্তাদেবী বলেন, বুধবার বলাইপণ্ডায় মিটিং আছে বলে স্বামী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর সারাদিন বাড়ি ফেরেনি। সিআইডি ধরেছে বলে রাতে খবর আসে। কী কারণে গ্রেপ্তার করেছে জানা নেই।

    নিজের পদের অপব্যবহার করে চাপেশ্বর আত্মীয়স্বজনদের অনেককেই প্রাথমিকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানান। এছাড়া টাকার বিনিময়েও অনেকে চাকরি পেয়েছেন। বাড়ির কাছে স্কুলে বদলির জন্য ফিক্সড রেট ছিল, চার লক্ষ টাকা। এভাবে কয়েক কোটি টাকা বাজার থেকে তুলেছেন। ওই কর্মকাণ্ডে তাঁর সহযোগী ছিলেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে খামারচক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোককুমার হাটুয়া অন্যতম। রাজ্য সরকার শিক্ষকদের পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য উৎসশ্রী পোর্টাল চালু করেছিল। অভিযোগ, র‌্যাঙ্ক জাম্প করে টাকার বিনিময়ে অনেকেই বাড়ির কাছে বদলি হয়েছেন। চার লক্ষ টাকা দিলেই পছন্দের স্কুলে বদলির ব্যবস্থা করে দিতেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার বাঁশদা গ্রামে দাঁড়িয়ে বিবেক জানা নামে এক যুবক বলেন, এই তল্লাটে  চাপেশ্বরবাবুর প্রচুর জমি রয়েছে। নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে জমি কিনেছেন। অসংখ্য ভেড়ি কিনেছেন। ময়নায় মাছের চাষের উপযোগী প্রতি শতক জমির দাম এক লক্ষ টাকা। তারপর সেই জমি রাতারাতি ভেড়ি হয়ে যাচ্ছে। ভেড়ি লিজে দিয়ে প্রতি বিঘা থেকে বছরে ৬০হাজার টাকা আয় হচ্ছে। কোনও ঝুঁকি ছাড়াই নিশ্চিত আয়ের জন্য জমি, ভেড়ি কিনে লিজে দিয়েছেন। বদলি এবং নিয়োগে তাঁর মাধ্যমে লাগামহীন দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। ময়না-১ অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি চন্দন মণ্ডল বলেন, চাপেশ্বর সর্দার কয়েক কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের নামে বিপুল জমি কিনেছেন। চাকরি এবং বদলি উভয়ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল টাকা রোজগার করেছেন। তিনি সিআইডির হাতে ধরা পড়ায় এই তল্লাটের মানুষজন খুশি।

    সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর চাপেশ্বরের সম্পত্তি এবার আতসকাচের তলায় আসতে চলেছে। তবে সবটা সামনে এলে অনেকেই চমকে যাবেন বলে তাঁর বাঁশদা গ্রামের লোকজন মনে করছেন। এখন দেখার, বেআইনি নিয়োগ এবং বদলির চক্রে আরও কেউ ধরা পড়ে কি না!  চাপেশ্বরের বাড়ি (উপরে)। (নীচে) চাপেশ্বর ও অশোককে আদালতে তোলা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)