• ‘এত ভারী কেন? মদের বোতল রয়েছে?’ ট্যাক্সিতে ব্যাগ তোলার সময় চালকের প্রশ্ন সূচনাকে
    আনন্দবাজার | ১২ জানুয়ারি ২০২৪

  • জানুয়ারি। উত্তর গোয়ার ক্যান্ডোলিমের একটি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাঁর কাছে
    ফোন গিয়েছিল জরুরি ভিত্তিতে একটি ট্যাক্সির প্রয়োজনে। তাঁকে বলা হয়েছিল এক মহিলাকে
    বেঙ্গালুরুতে পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে। ফোন পেয়ে সেই অ্যাপার্টমেন্টে ট্যাক্সি নিয়ে
    চলে এসেছিলেন চালক রে জন ডি’সুজা।

    এক
    সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “রাত তখন সাড়ে ১২টা। অ্যাপার্টমেন্টে গাড়ি নিয়ে পৌঁছেছিলাম। ১টা নাগাদ
    অ্যাপার্টমেন্ট থেকে এক মহিলা বেরিয়ে এলেন। সঙ্গে ছিল কয়েকটি ব্যাগ।
    অ্যাপার্টমেন্টের রিসেপশনের সামনেই রাখা ছিল ব্যাগগুলি। তার মধ্যে কালো রঙের একটি
    বড় ট্রলি ব্যাগ ছিল। আমাকে বলা হল রিসেপশন থেকে ব্যাগগুলি ট্যাক্সিতে তুলতে হবে।”

    সূচনা তত
    ক্ষণে ট্যাক্সিতে উঠে বসেছিলেন। চালক ডি’সুজা রিসেপশন থেকে এক এক করে ব্যাগ নিয়ে ট্যাক্সিতে তুলছিলেন। সেই সময়েই
    কালো রঙের বড় ট্রলিব্যাগটি তোলার সময় সূচনাকে চালক জিজ্ঞাসা করেন, “ম্যাডাম, এই ব্যাগটা এত ভারী কেন?” ডি’সুজা জানান, এ কথা জিজ্ঞাসা করতেও প্রথমে কোনও উত্তর দেননি
    সূচনা। তার পর আবার জিজ্ঞাসা করেন। তখন একটু রসিকতার সুরেই সূচনাকে তিনি জিজ্ঞাসা
    করেছিলেন, “ব্যাগর ভিতরে কি
    মদের বোতল আছে?” এ কথা শুনে সূচনা
    জানান, ব্যাগের ভিতরে
    মদের বোতল রয়েছে। তাই ভারী। তার পর আর কথা না বাড়িয়ে চালককে গাড়ি চালু করার জন্য
    নির্দেশ দেন।

    সেটিই ছিল
    সূচনার সঙ্গে চালকের শেষ কথা। তার পর ১২ ঘণ্টা ধরে সফর করেছেন ট্যাক্সিতে, একটি কথাও শোনা যায়নি সূচনার মুখে।
    তবে মাঝে বিচোলিমের কাছে গাড়ি দাঁড় করাতে বলেছিলেন। জলের বোতল কিনে আবার গাড়িতে
    উঠে পড়েন। ডি’সুজার কথায়, “আমরা যখন গোয়া-কর্নাটক সীমানার
    চোরলা ঘাটে পৌঁছলাম, তখন দেখি রাস্তায় বিশাল যানজট। ম্যাডামকে বলেছিলাম, যানজট পরিষ্কার হতে ৫-৬ ঘণ্টা লেগে যাবে।
    আপনাকে বরং বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়ে আসি। সেটা কাছে হবে।” ট্যাক্সিচালকের দাবি, সূচনা অপেক্ষা করতে রাজি ছিলেন, কিন্তু গাড়িতেই যাবেন বলে জানিয়ে
    দেন। আর এখান থেকেই তাঁর মনের কোণে একটা সন্দেহ উঁকি দিতে শুরু করে বলে দাবি
    ট্যাক্সিচালকের। তাঁকে বিমানবন্দরে নিয়ে যেতে চাইলেও কেন যাচ্ছেন না, কেন গাড়িতে যাওয়ার জন্য জেদ করছেন, এই প্রশ্ন যখন চালকের মনের মধ্যে
    ঘুরপাক খাচ্ছিল, সেই সময়েই গোয়া
    পুলিশের কাছে থেকে ফোন আসে তাঁর কাছে।

    ডি’সুজা জানান, ফোন
    করে পুলিশ আমাকে সতর্ক করে যে যাত্রীকে তিনি নিয়ে যাচ্ছেন, তিনি সন্দেহজনক। পুলিশের সেই ফোন পেয়ে সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু চালক জানান, সূচনার হাবভাবের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু লক্ষ করেননি। তবে পুলিশের ফোন পাওয়ার
    পরই রাস্তার ধারে একটি রেস্তরাঁর সামনে কাজের অছিলায় গাড়ি দাঁড় করান। তার পর
    তাঁর খেয়াল হয় যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, সেখান
    থেকে ৫০০ মিটার দূরেই থানা। তার পরই সোজা আয়ামঙ্গলা থানায় নিয়ে যান ট্যাক্সিকে।
    আয়ামঙ্গলা থানার সঙ্গে ক্যান্ডোলিম থানা যোগাযোগ করে। পুরো বিষয়টি বলে। সেখানে
    ট্যাক্সি পৌঁছতেই সূচনাকে গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়। ট্যাক্সির ডিকি খুলে ব্যাগগুলি
    পরীক্ষা করতেই চমকে ওঠে পুলিশ। সেই কালোরঙা ট্রলির ভিতরে লালরঙা একটি কাপড়ের নীচে
    ঢাকা এক শিশুর দেহ। ট্রলির মধ্যে ঠেসে ঢোকানো ছিল সেই দেহ।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)