শুক্রবার আদালতবান্ধব জানান, নির্যাতিত নাবালিকার একটি
শিশু রয়েছে। তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন। এই ধরনের বিয়ে আইনের চোখে অপরাধ। সরকারের প্রচার করা দরকার। অভিযুক্ত এবং নাবালিকার
মধ্যে বয়সের পার্থক্য অনেক বেশি। বিচারপতি
অভয় এস ওকা বলেন, ‘‘আগামী শুনানিতে আমরা পুরো বিষয়টিই দেখব।’’ হাই
কোর্টের রায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। তার শুনানিতেই
বিচারপতি শুক্রবার এই কথা জানালেন।
কলকাতা হাই কোর্ট একটি মামলার প্রেক্ষিতে জানিয়েছিল,
কিশোরীদের যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। গত ৪ জানুয়ারির শুনানিতে সেই রায়ের
সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট। জানায়, রায়ের প্রত্যেক অনুচ্ছেদ ‘সমস্যাযুক্ত’। পাশাপাশি, এই রায়ের নেপথ্যে কী আইনি নীতি
রয়েছে, তা-ও জানতে চায় আদালত।
একটি মামলার প্রেক্ষিতে
কলকাতা হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, কিশোরীদের যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। দু’মিনিটের
তৃপ্তির জন্য সেই নিয়ন্ত্রণ হারানো উচিত নয়। আর কিশোরদের উচিত, কিশোরী-মহিলাদের মর্যাদা
এবং তাঁদের শারীরিক স্বাধীনতাকে সম্মান জানানো। প্রসঙ্গত, এক
কিশোরীর সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ ছিল এক
যুবকের। সম্পর্কে থাকাকালীন ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে যুবকের বিরুদ্ধে। গত
অক্টোবরে পকসো আইনে ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ওই যুবককে বেকসুর খালাস করে কলকাতা হাই
কোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে
জানায়, কিশোরীদের নিজের শরীরে অধিকার, সম্মান
এবং নিজের মূল্য রক্ষা করতে হবে। যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কারণ দু’মিনিটের সুখের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারালে সে
নিজেই সমাজের চোখে ‘ব্যর্থ’ হবে। নিজের
গোপনীয়তা এবং শরীরের অধিকার নিজেকেই রক্ষা করতে হবে। কিশোরদেরও কিছু পরামর্শ দেয়
আদালত। জানায়, কিশোরী এবং মহিলাদের যে কর্তব্যের কথা হাই
কোর্ট জানিয়েছে, তাকে সম্মান করতে হবে। এক জন মহিলা, তাঁর আত্মসম্মান, তাঁর মর্যাদা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, শারীরিক অধিকারকে সম্মান করতে
হবে কিশোরদের।
এই রায়ের বিরুদ্ধে
স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সেই মামলা শুনছেন বিচারপতি অভয় এস ওঝা, বিচারপতি উজ্জ্বল ভুইয়াঁর বেঞ্চ। এর আগে রাজ্য, অভিযুক্ত
এবং মামলাকারীকে নোটিস পাঠানোর সময় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, হাই কোর্টের এই ধরনের মন্তব্য ‘আপত্তিকর’, ‘সম্পূর্ণ অন্যায্য’। গত শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানায়, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা কিশোর-কিশোরীদের যে
অধিকার দিয়েছে, তা লঙ্ঘন করছে হাই কোর্টের রায়। পাশাপাশি,
সুপ্রিম কোর্ট জানায়, পকসো ধারা সংশোধন করা
উচিত। যে হেতু তা করা নেই, তাই এই মামলায় সংবিধানের ৪৮২ ধারা
প্রয়োগ করা হবে।