• মহানগরে পুরস্কৃত শহরের সারমেয়
    আনন্দবাজার | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪
  • প্রতিযোগিতার নাম ‘অল ইন্ডিয়া ওবিডিয়েন্স ডগ শো’। জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা এটি। সেখানে প্রথম হল শহর মেদিনীপুরের এক পোষ্য। প্রতিযোগিতায় মোট ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ পেয়ে বাজিমাত করল সে। পোষ্যটির নাম ‘ভৈরব’। আদতে সে জার্মান শেফার্ড। মেদিনীপুরের বাসিন্দা শুভজিৎ রায়ের কাছে সে থাকে। শুভজিৎ বলছিলেন, ‘‘মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় গিয়ে অল-ইন্ডিয়া শো’এ পারফর্ম করা এবং সেখানে প্রথম হওয়াটা সত্যিই বড় প্রাপ্তি।’’

    এর আগেও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে এই পোষ্য। ‘ওবিডিয়েন্স শো’এ আনুগত্য দেখাতে হয়। এই ‘অল ইন্ডিয়া ওবিডিয়েন্স ডগ শো’ অনুষ্ঠিত হয়েছে কলকাতায়। আনুগত্য দেখিয়েই এই শো’এ প্রথম পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছে ‘ভৈরব’। শুভজিৎ পশুপ্রেমী। তাঁর দু’টি পোষ্য ছিল। ভৈরব এবং গোল্ডি। গোল্ডি ছিল নেড়ি কুকুর। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে তাকে নিজের কাছে রেখেছিলেন শহরের ওই যুবক। মাস তিনেক আগে গোল্ডি মারা গিয়েছে। বিভিন্ন শহরে ডগ শো হয়। সেখানে পোষ্য নিয়ে যান শুভজিৎ। তিনি এক সময়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। গোল্ডিকে আনার জন্য সে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। এখন থাকেন এক আবাসনে।

    শুভজিৎ বলছিলেন, ‘‘এক সময়ে জুগনুতলায় একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। পরে বাড়িটা ছাড়তে হয়। ক’বছর আগের ঘটনা। মার্চ মাসের এক রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। ও (গোল্ডি) রাস্তার পাশে একটা নালার মধ্যে আটকে গিয়েছিল। তখন মাসখানেক বয়স হবে। খুব ছোট ছিল। কষ্ট পেয়ে খুব চিৎকার করছিল। পরের দিন সকালে আমি নালা থেকে তুলে ওকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ওকে এনে রাখার জন্য আমাকে ভাড়া বাড়িটা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। বাড়ির মালিক এসে বলেছিলেন, কুকুর নিয়ে বাড়িতে থাকা যাবে না। আমি বলেছিলাম, ঠিক আছে ছেড়ে দেব। আমাকে শুধু একমাস সময় দেওয়া হোক।’’ তিনি আরও জুড়লেন, ‘‘মাস তিনেক আগে ও মারা গেল। ভুল চিকিৎসায়।’’

    এখন ভৈরবকে নিয়েই মেতে থাকেন শুভজিৎ। নিয়মিত তাকে প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম প্রথম আমিও ইউটিউব দেখে দেখে কী ভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হয় শিখেছি।’’ ভৈরবকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই শুভজিতের। ‘অল ইন্ডিয়া ওবিডিয়েন্স ডগ শো’এর আয়োজক ছিল ‘কেনেল ক্লাব অফ ইন্ডিয়া’।

    বৃহস্পতিবার ‘কলকাতা কেনেল ক্লাবে’ এই শোয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। পোষ্যের জন্য কেমন পরিশ্রম করতে হয়? শুভজিৎ বলছিলেন, ‘‘প্রচুর সময় দিতে হয়। দিনে তিনবার ট্রেনিং করাতে হয়। কুকুর ভয়েও কাজ করে। তবে আমার কুকুরটা একদম ভালবেসে কাজ করে। লেজ দুলিয়ে কাজ করে।’’

    ভৈরবের সারাদিনের মেনু কী? শুভজিৎ জানাচ্ছেন, সকালে সে খায় দুধ। ঘুম থেকে উঠেই। দুপুরে ডগ ফুড এবং টক দই। সন্ধ্যায় ডগ ফুড এবং সেদ্ধ চিকেন। শুভজিতের কথায়, ‘‘সন্ধ্যায় ২৫০-৩০০ গ্রাম চিকেন লাগে ওর।’’ ‘ওবিডিয়েন্স ট্রেনিং’ও দেওয়া হয়েছিল ভৈরবকে। ক’বছরে স্যালুট-সহ নানা কসরত শিখেছে সে। বসতে পারে, দাঁড়াতেও পারে। কিছু খুঁজে আনতে বললেও, আনতে পারে। শুভজিৎ বলছিলেন, ‘‘ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ পেলে কুকুর সব শিখতে পারে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)