শহরের ট্র্যাফিক যন্ত্রণায় কিছুতেই যেন স্বস্তির ‘মলম’ দিতে পারছে না কলকাতা পুলিশ। কবে, কোন রুট দিয়ে মিছিল যাবে, তা আগেভাগে জানা থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ট্র্যাফিক সার্জেন্টরা কার্যত ‘হাবুডুব’ খাচ্ছেন বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। শনিবারও তার অন্যথা হয়নি।এদিন কলকাতায় তিনটি মিটিং-মিছিল এবং চিংড়িহাটায় মেট্রোর কাজের জন্য ইএম বাইপাসের দিক থেকে ধর্মতলা-শিয়ালদহ-হাওড়ায় পৌঁছতে সাধারণ মানুষের ‘নাকের জল-চোখের জল’ এক হয়ে গিয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, মিছিল শুরুর পরে গাড়িগুলোকে কোন বিকল্প রুটে পাঠালে ভোগান্তি কমতে পারে, তার দিশা দেখাতে পারেননি রাস্তায় থাকা পুলিশকর্মীরা।এমনকী, সমস্যায় পড়ে ট্র্যাফিক কন্ট্রোলে ফোন করলেও কর্মসূচির বিষয়ে ঠিকঠাক তথ্যও পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ। যদিও কলকাতা পুলিশের দাবি, মিছিলই হোক বা পথঘাটের সমস্যা, পুলিশের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে গুগুল ম্যাপ সহ সবকিছু পোস্ট হয়। একটু নজর রাখলে সমস্যা এড়ানো সম্ভব।এদিন সল্টলেক-নিউটাউন এবং রুবির দিক থেকে ইএম বাইপাস হয়ে আসা ধর্মতলামুখী গাড়িগুলো সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়ে। দুপুরের পরে একদিকে যেমন মা ফ্লাইওভারের উপরে লম্বা গাড়ির লাইন ছিল, তেমনই আবার উড়ালপুলের নীচেও ছিল তীব্র যানজট। দুপুর দুটো নাগাদ তিলজলা থেকে একটি ধর্মীয় মিছিল বের হওয়ার কারণে এমন সমস্যা হয় বলে একাংশের যুক্তি।ওই মিছিলটি তিলজলা রোড থেকে শুরু হয়ে পিকনিক গার্ডেন রোড, রাইফেল রেঞ্জ রোড, দরগা রোড থেকে সিআইটি রোড হয়ে মৌলালি ক্রসিং-লেলিন সরণি-বিবি গাঙ্গুলী স্ট্রিট হয়ে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে যখন পৌঁছয়, তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা। এখানেই মিছিল শেষ হয়নি। এর পর, জেএল নেহেরু রোড-পার্কস্ট্রিট-পার্ক সার্কাস-দরগা রোড হয়ে ফের তিলজলায় পৌঁছয়। শহরের প্রধান প্রধান রাস্তার উপর দিয়ে ওই মিছিলটি যাওয়ার কারণে দুপুর থেকে তীব্র যানজট হয় চারিদিকে।নিত্যযাত্রীদের প্রশ্ন, ‘মিছিলটি এত বড় হবে জানা সত্বেও কেন স্বাভাবিক গাড়ি চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?’ পুলিশের দাবি, মিছিল যে ভাবে এগিয়েছে, সে ভাবে আশপাশের রুটে গাড়ির ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তা মানতে নারাজ গাড়ির চালক এবং নিত্যযাত্রীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, ‘মিছিলের জন্য অনেক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ চাকা থমকে ছিল।’এমনিতেই মেট্রোর কাজের জন্য গত ২২ তারিখ থেকে সল্টলেক-নিউটাউনগামী ছোট গাড়ি এবং বাসের রুট পরিবর্তন করা হয়েছে। এই কাজ চলবে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। গাড়ির রুট পরিবর্তনের বিষয়টি আগে থেকে জানিয়েও দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু, হঠাৎ রুট পরিবর্তনে বেলেঘাটা বা চিংড়িহাটা এলাকায় মাঝেমধ্যে যানজট হচ্ছে বলে অভিযোগ।এদিনও সমস্যায় পড়েন মানুষজন। নিউ গড়িয়া-এয়ারপোর্ট মেট্রো করিডরে কাজের জন্য চিংড়িহাটার কাছে ট্রাফিক ডাইভারশন করা হয়েছে। ফলে নিউটাউন এবং সেক্টর ফাইভের দিকে ছোট যানবাহনগুলোকে সল্টলেক স্টেডিয়াম রোড, ব্রডওয়ে, জলবায়ু বিহার আবাসনের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নিউটাউন-সেক্টর ফাইভের দিকে বাসগুলিকে (সরকারি এবং প্রাইভেট) ব্রডওয়ে পাঠানো হচ্ছে আপাতত।এদিন দুপুর একটা থেকে মধ্য এবং উত্তর কলকাতায় আরও একটি মিছিল শুরু হয়। একটি সংগঠনের মিছিল কে সি সেন স্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে আমহার্ট স্ট্রিট, বিবি গাঙ্গুলী স্ট্রিট, গিরিশ পার্ক, বিবেকানন্দ রোড হয়ে মানিকতলায় শেষ হয়। তার জেরেও যানজট হয়।