লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ভোট ময়দানে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আসন জয়ের দিক থেকে কি রেকর্ড গড়বে গেরুয়া শিবির? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এবছরের লোকসভা নির্বাচনে NDA কি ছিনিয়ে নিতে পারবে ৪০০ আসন? কী মনে করছেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর? আলোচনা করব সেসব কথাই।একাংশ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, লোকসভার আগে রাম মন্দির উদ্বোদন ও জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের মতো ইস্যু জয়ের পথ অনেকটাই মসৃণ করে দিয়েছে। নির্বাচনের আগে এই দুই বিষয়কে ঢাল বানিয়েছে বিজেপি। নির্বাচনে ৪০০ আসন জয়ে বিষয়গুলি সত্য়ি কি বড় ফ্য়াক্টর? সে উত্তরও দিয়েছেন পিকে। পাশাপাশি রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। নীতীশ কুমারের বিজেপিতে যোগদানের প্রভাব কী হবে তা নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে একাধিক বিষয়ে পিকের মতামত।পিকের মতে, 'এনডিএ-এর ৪০০-এর বেশি আসন পার করা বিজেপির নির্বাচনী স্লোগান। এটি কোনও ভাবেই জনগণের মনে কথা নয়। এবারের নির্বাচনেও মূল ফোকাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি কী ভাবে কাজ করেন সেদিকে নজর রাখবেন ভোটাররা। রাহুল গান্ধীর সফর প্রসঙ্গে প্রশান্ত কিশোর বলেন, 'এই সফরের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। এই যাত্রার সঙ্গে জনসংযোগের সুবিধা রয়েছে। তবে এই যাত্রার সুফল নির্বাচনী ফলাফলে প্রতিফলিত হবে এমন নয়।' প্রশান্ত কিশোরের সংযোজন, ' এদেশে সবচেয়ে বিখ্যাত যাত্রা ছিল লালকৃষ্ণ আডবাণীর সোমনাথ থেকে অযোধ্যা। তবে এই যাত্রা বিজেপিকে শক্তিশালী করলেও সার্বিকভাবে লাভ হয়নি।' একই ভাবে রাহুল গান্ধীর সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'কর্নাটক ও তেলঙ্গানায় যাত্রার কারণে কংগ্রেস সুফল পেলেও মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে যাত্রার কোনও সুফল পায়নি সেভাবে। এই রাজ্যগুলিকে পরাজয়ের মুখে পড়তে হয়েছে। রাহুল ভারতীয় ভারত জোড়ো ন্য়ায় যাত্রায় যে বিশেষ কোনও সুবিধা পাচ্ছেন বলে মনে হয় না। যাত্রার জন্য এই সময়টা ভুল। কে টিকিট পাবে, আসন ভাগাভাগির ফর্মুলা কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য রাহুলের জোটের সঙ্গে থাকা উচিত। তা না করে তিনি যাত্রায় ব্য়স্ত এখন। এমতাবস্থায় তার যাত্রার সময় নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।'ইন্ডিয়া জোট সঠিক সময়ে তৈরি হয়নি। এই জোটের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু করেছিল বিজেপি। এই কারণেই নির্বাচনের ঠিক আগে রাম মন্দিরের পবিত্রতার কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চয়ই এই তিন বছর আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিল।'কৃষক আন্দোলন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। এই আন্দোলন নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে? সেই বিষয়ে প্রশান্ত কিশোর বলেন, 'নির্বাচনের সময় কোনও আন্দোলন হলে অবশ্যই তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। কোনও রাজনৈতিক দল বা নেতার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। প্রধানমন্ত্রী ৩৭০ আসনের টার্গেট দিলেও এত সংখ্যক আসন পকেটে পুরতে পারবে না বিজেপি। যদি এমনটা হয় তাহলে খুবই অবাক হব।'এই প্রশ্নের উত্তরে প্রশান্ত কিশোর বলেন, 'কংগ্রেসের আসন বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। বরং আসন সংখ্যা কমতে পারে কংগ্রেসের।' বিজেপির একা ৩৭০ আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রশান্ত কিশোর বলেন, 'আমি মনে করি সেই সম্ভাবনা প্রায় শূন্য়। অমিত শাহ তার কর্মীদের জন্য এই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। বাংলায় বিজেপি ভালো ফল করতে পারে। দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে সুবিধা পেতে পারে বিজেপি। বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে তাদের ভোটের হার বাড়তে পারে।' তবে আসন সংখ্যা নিয়ে সেভাবে কিছু স্পষ্ট করেননি প্রশান্ত কিশোর।প্রশান্ত কিশোর বলেন, '১০-১৫ বছরে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের চেহারা বদলাবে। তবে ২০২৪ সালে বিহার, বাংলা, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কেরালা সহ অনেক রাজ্য ২০১৯-এর তুলনায় ভালো ফল করবে বিজেপি। তবে মোদীকে কেউ কোনও দিনও চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন না এমনটা নয়। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদীকে পরাজিত করা সহজ নয়।'