Water Conservation : স্তর নিয়ন্ত্রণে বৃষ্টির জল ভূগর্ভে পাঠানোর উদ্যোগ
এই সময় | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
কলকাতা লাগোয়া রাজপুর-সোনারপুর এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলের খোঁজ পাওয়ার জন্য ২০ বছর আগে ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত গর্ত খুঁড়তে হতো। এখন সেখানেই ভূগর্ভস্থ জল পেতে অন্তত ২০০ ফুট গভীরে যেতে হচ্ছে! যা থেকে স্পষ্ট, মাটির তলায় জলস্তর কতখানি নেমে গিয়েছে। এটা একটা উদাহরণ মাত্র। আসলে রাজ্যের সর্বত্রই সমস্যাটা কমবেশি এক। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর জেরে জলে ক্রমশ বাড়ছে আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর পদার্থ। যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।এই সমস্যার সমাধানে এ বার ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বাড়াতে নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে রাজ্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর। দপ্তরের এক কর্তার কথায়, 'যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণেই ভূগর্ভস্থ জল ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে। সমস্যা মেটাতে আমরা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে তা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপায়েই ওই জল ভূগর্ভে পাঠানো হবে বলে ঠিক হয়েছে।'সরকারি সূত্রে খবর, বর্তমানে জলস্তর সবচেয়ে নীচে নেমে গিয়েছে পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও বীরভূমে। প্রথম ধাপে এই জেলাগুলিতেই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। ধাপে ধাপে রাজ্যের অন্যত্রও তার প্রয়োগ ঘটানো হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাঁরা ওই তিন জেলার কোথায় জলস্তর কতটা নেমে গিয়েছে, তা দেখবেন। এরপর জায়গা চিহ্নিত করে রিচার্জ ওয়েল বা পারকোলেশন ট্যাঙ্কের মতো পরিকাঠামো তৈরি হবে।যার প্রতিটির খরচ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত ধরা হয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়ে জল মাটির নীচে পাঠানোর পাশাপাশি লাগানো হবে চাষের কাজে। কারণ, ভূগর্ভস্থ জলের একটা বড় অংশই ব্যবহার হয় কৃষিতে। বিশেষত বোরো ধানের মরসুমে এর ব্যবহার বেশি।সূত্রের খবর, ভূগর্ভস্থ জলের নিরিখে মাঝারি মানের বিপদ রয়েছে, রাজ্যে বর্তমানে এমন ব্লকের সংখ্যা ৭৭। স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেটের (সুইড) কর্তাদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার যেমন কমিয়ে আনতে হবে, তেমনই বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে জল রিচার্জের উপরেও জোর দেওয়া উচিত। রাজ্যের স্কুল, কলেজ এবং বড় বড় আবাসনগুলিতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে ব্যবহার বাড়ানোর ব্যাপারে প্রচারে জোর দিতে বলা হয়েছে পরিবেশ দপ্তরকেও।দীর্ঘদিন ধরেই আর্সেনিক নিয়ে কাজ করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, 'জলস্তর শুকিয়ে যাওয়ার ফলে আর্সেনিক, ফ্লুওরাইডের উপস্থিতি বাড়ছে জলে। অনেকেই ভূগর্ভস্থ জলকে পরিস্রুত না করে খান। যা থেকে নানা ধরনের রোগ ছড়াতে পারে। ফলে, ভূগর্ভস্থ জলস্তর যাতে না নামে, সে দিকে নজর দিতেই হবে।'