• বসন্তে পক্সের চোখরাঙানি কম এ বার, ভাবাচ্ছে বরং মাম্পস
    এই সময় | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • গত বছর স্বাস্থ্যকর্তাদের চিন্তার কারণ হয়েছিল চিকেনপক্স বা জলবসন্ত। ছোটদের পাশাপাশি পক্সে আক্রান্ত হচ্ছিলেন বড়রাও। হচ্ছিল নানা জটিলতা, এমনকী মৃত্যুও। তবে এ বছর সেই ছবিটা অনেক নিশ্চিন্তির। সে ভাবে পক্স নিয়ে শহরে হাসপাতালে ভর্তির নজির নেই বললেই চলে। বরং এ বছর পক্সের জায়গা নিয়েছে মাম্পস। ভ্যাকসিন না নেওয়া বাচ্চারা দেদার ভুগছে কানের নীচের প্যারোটিড গ্রন্থির এই ভাইরাল সংক্রমণে। হচ্ছে অন্যান্য জটিলতাও।২০২২-’২৩-এর শীত-বসন্তে সব হিসেব গুলিয়ে দিয়েছিলো আপাত-নিরীহ চিকেনপক্স। ২০২২-এর নভেম্বর থেকে এ রোগের দাপট এমনই বেড়েছিল যে, ২০২৩-এর মার্চ পর্যন্ত, শুধু বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালেই ভরা শীতে ৫৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক পক্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। মৃত্যু হয় ১২ জনের। শহরের অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেও কমবেশি দেখা গিয়েছিল একই ছবি।এ বছর অবশ্য ছবিটা পুরোপুরি আলাদা। আইডিতে ভর্তি হয়েছেন হাতেগোনা পক্সের রোগী। মৃত্যুর নজির এখনও তেমন নেই। কোনও বেসরকারি হাসপাতালেও সে ভাবে এই মরশুমে পক্স নিয়ে কেউ ভর্তি হননি। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, পক্সে আক্রান্ত কেউ হচ্ছেন না, এমনটা নয়। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো গুরুতর অসুস্থতা দেখা যাচ্ছে না।সকলেই প্রায় বাড়িতেই চিকিৎসা, বিশ্রামে সুস্থ হয়ে উঠছেন। এসএসকেএমের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় বলেন, ‘গত বছর নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র তিন জন পক্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। বাড়িতেই সকলে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে এ বছর চোখে পড়ার মতো মাম্পস হচ্ছে। হচ্ছে অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণও’।ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূণ গিরিও অনেকাংশে একমত।তাঁর কথায়, ‘পক্স খুবই কম এই বছর। অ্যাডিনোও হচ্ছে কিছু। তবে গত বছরের চেয়ে অন্তত ২০% কম। তবে মাম্পস হচ্ছে অনেকেরই।’ ওই হাসপাতালের আর এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রোহিত কাপুরের গলায় অবশ্য সামান্য আলাদা সুর। তিনি বলেন, ‘প্রচুর মাম্পস হচ্ছে ঠিকই। তবে এ বছর তার চরিত্রটা কিছুটা আলাদা। হাতেগোনা কয়েকটি ঘটনা ছাড়া, কারও তেমন বাড়াবাড়ি হচ্ছে না বটে। তবে উপসর্গ থাকছে লম্বা সময় ধরে। আর যাদের জটিলতা হচ্ছে, তাদের চিকিৎসা করতে হয়রান হচ্ছেন চিকিৎসক।’মাম্পস সংক্রমণটা বেশি দেখা যায় মূলত ৫-৯ বছর বয়সিদের মধ্যে। তবে এ বছর সব বয়সে, এমনকী বড়দেরও মাম্পস হচ্ছে। মাম্পস ভাইরাসের জেরে কানের নীচের প্যারোটিড গ্রন্থিতে প্রদাহ হয়। এমনিতে মারাত্মক ব্যথার সঙ্গেই থাকে জ্বর, মাথা-গা-হাত-পায়ে ব্যথা, দুর্বলতা, কারও বা কাশি। সংক্রমণ ঘটার ১৬-১৮ দিনের মধ্যে অসুস্থতা দেখা যায়। রোহিতের অভিজ্ঞতা, ‘সাধারণত দিন সাতেকে সেরেও ওঠে রোগী। তবে এই বছর দেখা যাচ্ছে, জ্বরটাই পাঁচ-সাত দিন চলছে। আর কাশি থাকছে প্রায় তিন সপ্তাহ। আর এদেরই মধ্যে কয়েক জনের প্যানক্রিয়াটাইটিস ও অর্কাইটিস হচ্ছে।’ অর্থাৎ প্যানক্রিয়াস ও টেস্টিসে প্রদাহ। এর জেরে পরে অনেকে বন্ধ্যত্বের শিকার হতে পারে বলেও সাবধান করছেন তিনি।চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ছোটদের সরকারি টিকাকরণের মধ্যে মাম্পস-মিজ়লস-রুবেলার এমএমআর ভ্যাকসিন দেওয়া হয় না। দেওয়া হয় শুধু মিজ়লস-রুবেলার এমআর ভ্যাকসিন। এমএমআর দেওয়া হয় বেসরকারিতে। এর জন্যই এত শিশুর মাম্পস হচ্ছে। সকলকে একযোগে এমএমআর ভ্যাকসিন দেওয়া গেলে সংক্রমণ তো কমে যাবেই লক্ষ্যণীয় ভাবে, ১৫-৩০% ক্ষেত্রে নিশ্চিত কমে যাবে প্যানক্রিয়াটাইটিস, অর্কাইটিসের মতো জটিলতাও।
  • Link to this news (এই সময়)