সেইন্ট অ্যান্ড মিলারের চাকরিটা জুন মাসে ছেড়ে দিল শ্যাম। চাকরি ছাড়ার কারণটা তেমন গুরুতর কিছু ছিল না। তার ড্রইংয়ে একটা ভুল থাকায় উপরওয়ালা হরি মজুমদার জনাস্তিকে বলেছিলেন, বাস্টার্ড... চাকরি ছাড়ার কথা সে ভাবতেও পারে না, কারণ এতদিনে এ-চাকরি তাকে উচ্চাশাসম্পন্ন করে তুলেছে। তবু আস্তে আস্তে শ্যামের ক্লান্তি বেড়ে চলল... অবশেষে এক ভযঙ্কর গ্রীষ্মের মাঝরাতে উঠে টেবিলল্যাম্প জ্বেলে সে তার ইস্তফাপত্রটি লিখে ফেলল।আর একটা চিঠি লিখল মাকে— আমার চাকরি গিয়াছে। আমার উপর আর খুব ভরসা করিও না। অন্তত আরও দু-তিন মাস তোমাদের কষ্ট করিয়া চালাইতে হইবে… ইত্যাদি। চিঠি লিখবার পর সেই রাতে তার গভীর ঘুম হল। ‘ঘুণপোকা’ উপন্যাস এ ভাবেই শুরু করেছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ১৯৬৬-তে লেখা। দেখা গেল, ২০২৪-এও সময়টা বিশেষ বদলায়নি। স্থান-কাল-পাত্র বদলে গেলেও মাথার ভিতর ঘুণপোকা-টা আজও জ্যান্ত অনেকেরই মধ্যে।চাকরি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেয়, দেয় বাঁচার রসদ। সঙ্গে অবশ্য টেনশন আর বসের কারণে-অকারণে মুখঝামটা আসে উপরি পাওনা হিসেবে। ‘ঘুণপোকা’ উপন্যাসে শ্যাম যেমন হঠাৎ একদিন বসের গালি মানতে পারেনি, ঠিক তেমনই বস ‘ফাক অফ’ বলায় ইমিডিয়েটলি মেল করে ইস্তফা দিয়ে দিলেন এক তরুণ কর্মী। রেডিট অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইতিমধ্যেই ভাইরাল যুবকের রেজিগনেশন লেটার। তিনি কোন দেশের, কোন সেক্টরের কর্মী জানা যায়নি।তবে মেলের স্ক্রিনশট দেখে বোঝা যাচ্ছে ‘জন’ নামের ওই কর্মী মোটামুটি বসের সব মহলের কর্তাকেই মেল পাঠিয়ে নিজের ইমিডিয়েট বসের ‘নেচার’ স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মেলের প্রথম লাইনে লেখা— ‘এফেক্টিভ ইমিডিয়েটলি, আই কুইট।’ তার পরের লাইনে রীতিমতো বসের নাম করে হুঁশিয়ারি— ‘অ্যান্টনি, খবরদার আর কাউকে ফাক অফ বলার দুঃসাহস দেখিও না।’কয়েক মাস আগে ভিডিয়ো কনফারেন্সে জুনিয়র সহকর্মীদের টার্গেট দেওয়ার সময়ে অকথ্যে গালাগালি করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ভারতেরই এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক কর্মকর্তা। সূত্রের খবর, ওই চাকরি খুইয়ে এখনও পায়ের তলায় জমি পাননি ওই ডাকসাইটে বস। রেডিটে ভাইরাল অ্যান্টনি নামের ওই বসকে নিয়েও খিল্লি শুরু হয়েছে অনলাইনে।ইস্তফা দেওয়া কর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। এক জনের কথায়, ‘চাকরি করা মানে যে আত্মসম্মান বিকিয়ে দেওয়া নয়, সেটা আরও একবার প্রমাণ করার জন্য জন আপনাকে কুর্নিশ।’ আর এক জন লিখেছেন, ‘যার জন্য চাকরি ছাড়ছি, তার লাইফ হেল করে যাওয়াটাই এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’