বর্ষা ও শরতে ফ্ল্যাটে বসেই যেন পাহাড়ের মতো মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। জানলার পর্দা সরালেই জানলা থেকে যে স্কাইলাইন দেখা যায় তা অনেকটা ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো। কিছু দূরে নীল আকাশের সীমারেখা ঢালু হয়ে যেখানে নেমে গেছে, সেখানেই বনের মতো এক-একটা সবুজ গাছ মাথা তুলে আছে।আবাসিক পায়েল বসুর কথায়, ‘বৃষ্টি, আর তার পিছুপিছু আসা দুর্গাপুজোর সময়ে ওই মনোরম স্কাইলাইন ভেদ করে যখন কবি সুভাষ স্টেশন থেকে মেট্রোগুলো ছুটে যায়, তখন মনে হয় আমরা যেন দার্জিলিংয়ে আছি।’২০১৯ সালে পাটুলি লাগোয়া গরাগাছা রোডে গড়ে ওঠে নটিক্যাল আবাসন। এ দিকে নতুন আবাসিকরা ফ্ল্যাটের পজেশন নেওয়ার পরেই শুরু হয় করোনা অতিমারি এবং লকডাউন। সেই সময়ে আবাসিকরা নিজেদের মধ্যে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ শুরু করেছিলেন। শুরু সেটাই। আজও কেউ কোনও অসুবিধায় পড়লে ফোন করে ডেকে নেন অন্য আবাসিককে। এখানকার আবাসিক কমিটির কোর গ্রুপের সম্পাদক কুন্তল বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রত্যেকের ফোন নম্বর প্রত্যেকের কাছে আছে। এখানে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোই রেওয়াজ।’নটিক্যাল আবাসনএখানকার আবাসিক চিকিৎসক অভিষেক দাসের কথায়, ‘পঁচিশে বৈশাখ বা পুজোর আগে আমরা বিভিন্ন রকমের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করি। তাতে অংশ নেন ‘আট থেকে আশি’ সকলেই। নাটক, গান, নাচের মহলায় সব আবাসিক এতটাই ব্যস্ত হয়ে ওঠেন, ভাবা যায় না।’ শুধু রবীন্দ্রজয়ন্তী বা দুর্গাপুজো নয়, এই আবাসনে কালীপুজো, সরস্বতী পুজো, দোল, বর্ষবরণের উৎসবও পালন করেন আবাসিকরা।নটিক্যাল আবাসনের ভৌগলিক অবস্থানটাই আবাসিকদের পক্ষে সবথেকে সুবিধাজনক। পা বাড়ালেই মেট্রো রেলের কবি সুভাষ স্টেশন, আর মিনিট দশেক হাঁটলেই কলকাতার লাইফলাইন ইএম বাইপাস। নটিক্যাল আবাসিক কমিটির বোর্ড মেম্বার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের এই আবাসনটার সব থেকে বড় প্লাস পয়েন্ট যোগাযোগ ব্যবস্থা। এয়ারপোর্ট হোক, আর হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশনই হোক— আমরা সহজেই ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারি।’আবাসিকরা জানান, পুরো আবাসন চত্বরটাই সিসিটিভির নজরদারির আওতায় রয়েছে। আবাসনে যাঁরা ঢুকতে চাইবেন তাঁদের মোবাইলে গেট থেকেই একটা সিকিওরিটি কোড যাবে। সেই কোড পরীক্ষা হওয়ার পরেই নিরাপত্তারক্ষীদের থেকে পাওয়া যাবে আবাসনে ঢোকার অনুমতি। নটিক্যাল আবাসিক কমিটির অফিসে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারও রয়েছে। আবাসিক কমিটির কর্তারা জানান, এই অক্সিজেন সিলিন্ডারটি অতিমারির সময়ে কেনা হয়েছিল।আবাসিকদের কারও শ্বাসকষ্টজনিত অসুবিধা হলে এই অক্সিজেন সিলিন্ডার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। তা ছাড়াও এই আবাসনের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে খানপাঁচেক বেসরকারি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল। আবাসিকরা সেই সুবিধাও পান। নটিক্যালের অধিকাংশ আবাসিক জানান, এখানে পুজোর মজার টান এমন, একান্ত প্রয়োজন না হলে পুজোর মরশুমে দূরে কোথাও যেতে চান না কেউই।