উপস্থিত থাকতে না পারলেও সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’শো বছরের অনুষ্ঠানে বার্তা পাঠালেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। যা রাজ্য-রাজ্যপাল দ্বন্দ্বের দিকেই ফের ইঙ্গিত করল বলে মনে করছেন অনেকে।কেন? বার্তায় ব্রাত্য লিখেছেন — ‘কিছু বিঘ্নকারী শক্তির ছায়া এই বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও পঠনপাঠনের উপর পড়েছে। রাজ্য সরকার অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে ফেলবে।’ নাম না করে অতীতে নানা সময়ে রাজ্যপাল বোসের সমালোচনা করে বার্তা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে দু’পক্ষের টানাপড়েনের সূত্রপাত। তারপরে দীর্ঘ ঘটনাপ্রবাহেও সংঘাতে সে ভাবে দাঁড়ি পড়েনি। রবিবারের ওই অনুষ্ঠানে ব্রাত্যর বার্তা কার্যত রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে অনেকে মনে করছেন।এ দিন অনুষ্ঠানে বোসের সামনেই বসুর বার্তা তুলে ধরা হয়। ক্রাইসিসের সময়ে রাজ্য সরকারের পাশে থাকার জন্য দু’শো বছর পূর্তি উপলক্ষে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়াদের শুভেচ্ছাও জানান ব্রাত্য। তবে আচার্য এবং তাঁর নিয়োগ করা ভারপ্রাপ্ত ভিসি রাজকুমার কোঠারির উল্লেখ নেই বার্তায়।বার্তার প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল পাল্টা কোনও মন্তব্য করেননি। এ দিন তিনি বলেন, ‘২০০ বছরের এই অনুষ্ঠানকে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে না রেখে রাজ্যের সবক’টি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে আসুক। আপনারা সবাই মিলে একটি কনক্লেভের আয়োজন করুন। দেশের সমস্ত সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে সেখানে ডাকা হোক। এই অনুষ্ঠানটি কলকাতা অথবা দার্জিলিংয়ের রাজভবনে আয়োজন করতে পারেন আপনারা।’পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যাসাগরের নামে একটি চেয়ার প্রফেসরের পদ তৈরি এবং ঈশ্বরচন্দ্রের নামাঙ্কিত একটি মেডেল দেওয়ার প্রস্তাবও রাখেন রাজ্যপাল। যেখানে দেশের ১০ জন সেরা স্কলারকে সম্মানিত করার কথা বলেছেন তিনি। এই পদকের জন্য মোট ২ লক্ষ টাকা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন রাজ্যপাল।ভারপ্রাপ্ত ভিসি রাজকুমার কোঠারির বক্তব্য, ‘রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যে সমস্যা চলছে তা রাজ্য সরকার দ্রুত মিটিয়ে ফেলবে বলে শিক্ষামন্ত্রী যে বার্তা দিয়েছেন, তাকে অত্যন্ত জরুরি বার্তা বলেই মনে করি। বাকি বিষয়ে আলাদা করে কোনও মন্তব্য নেই।’ রাজ্যপালের প্রস্তাব নিয়ে কমিটি তৈরি করে যা করার করা হবে বলে জানান কোঠারি।রবিবার দু’শো বছরে পা রেখেছে সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই এ দিন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন আচার্য-রাজ্যপাল বোস, পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, বাংলাদেশের বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ় ও পালি ভাষার বিশেষজ্ঞ সুকোমল বড়ুয়া-সহ একাধিক রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপাল নিযুক্ত কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত ভিসি। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়।কিন্তু একদিন আগে, শনিবার তাঁর লিখিত বার্তা পৌঁছয়। সূত্রের খবর, রাজ্যপালের সামনে বার্তাটি পড়া হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ কেউ। এঁদের প্রস্তাব ছিল, রাজ্যপাল বেরিয়ে গেলে বার্তা পড়া হোক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়েরই আধিকারিকদের একাংশ ও বেশ ক’জন শিক্ষক এতে আপত্তি তোলেন। মূল অনুষ্ঠানেই বার্তা পড়ার পক্ষপাতী ছিলেন এঁরা। শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার মণিশঙ্কর মণ্ডল সকলের সামনে ব্রাত্যর বার্তা পড়ে শোনান রবিবার। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেছেন — ‘ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ১৮২৪ সালে এই প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়। ২০১৬ সালে কলেজ থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করেন দূরদর্শী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক সাফল্য কামনা করি।’