গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মৃত্যু হয়েছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদলের (INLD) রাজ্য সভাপতি ও প্রাক্তন বিধায়ক নাফে সিং রাঠির। একই ঘটনায় নিহত তাঁরই সফরসঙ্গী জয়কিষান নামে এক ব্যক্তি। অন্য একটি সূত্রে খবর, আরও একজনও প্রাণ হারিয়েছেন এই অতর্কিত আক্রমণে। বাকি দু’জন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।এই ঘটনার পরেই বিজেপি-শাসিত রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। রবিবার বিকেলে ঝজ্জরের বাহাদুরগড় সফর করছিলেন নাফে। তিনি ছিলেন একটি এসইউভি-তে। সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত ভাবে নিয়োগ করা তিন নিরাপত্তারক্ষী। চালক ও আরও দু’জন দলীয় কর্মী। আচমকাই একটি গাড়ি থেকে দুষ্কৃতীরা তাঁদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে।আইএলএলডি নেতার ঘাড়, পিঠ ও কাঁধে অনেকগুলো করে গুলি লাগে। জয়কিষানেরও তাই। তাঁদের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। তবে আততায়ীদের ধরা যায়নি, তারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরেই নাফে-সব বাকিদের সকলকেই কাছের ব্রহ্ম শক্তি সঞ্জিবনী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, নাফে ও জয়কিষানকে মৃত অবস্থাতেও নিয়ে আসা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তাঁদের সিপিআর দেওয়া হয়। কিন্তু লাভ হয়নি।এক চিকিৎসকের কথায়, ‘ঘাড়ে, পিঠে ও কাঁধে এতগুলো করে গুলি লাগায় প্রবল রক্তক্ষরণ হয়। কারণ ব্লাড ভেসেল ফেটে গিয়েছিল। তার ফলে হার্ট অ্যাটাক ও মৃত্যু। তিনি জানান, বাকি যাঁরা চিকিৎসাধীন তাঁদের থাই-সহ একাধিক জায়গায় গুলি লেগেছে। ঝজ্জরের এসপি অর্পিত জৈন জানিয়ছেন, এই খবর পাওয়ামাত্র পুলিশের একাধিক দলকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।সিসিটিভি-র সব ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আততায়ীরা কোন পথে এসেছিল ও কোথা দিয়ে পালিয়েছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আশাবাদী যে, খুব তাড়াতাড়িই আততায়ীরা ধরা পড়বে। তবে এই নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।আইএনএলডি নেতা অভয় চৌতালা বলেন, ‘আমাদের রাজ্য সভাপতি একাধিক বার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী রাখতে হয়।’ রাঠির উপর যে আক্রমণ হতে পারে বা তাঁকে খুন করা হতে পারে — এই তথ্য আগেই ছিল ও সেই মতো রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছিল বলে দাবি তাঁর।নাফের হত্যায় হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা ভূপিন্দর সিং হুডা বলেন, ‘রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কী অবস্থা তা এই ঘটনায় পরিষ্কার। এখানে কেউ নিরাপদ নন।’ আপের সুশীল গুপ্তার কথায়, ‘এখানে জঙ্গলরাজ চলছে। খাট্টার সরকারের রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার কথা বলা বৃথা।’সব বিরোধী দলই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অভিযোগে ও রাঠিকে নিরাপত্তা দিতে না পারায় মুখ্যমন্ত্রী খাট্টার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিজদের পদত্যাগ দাবি করেছে। একটি সূত্রের দাবি, লরেন্স বিষ্ণোয় গ্যায়ের সঙ্গে নাফের সম্পত্তি নিয়ে ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল।সেখান থেকেই এই ঘটনা। তা ছাড়া এক রাজনৈতিক নেতার সন্তানের আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ছিল নিহত নেতার নামে। তিনি আগাম জামিনে মুক্ত ছিলেন। তবে এই বিষয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি।