জেলা পরিষদে অর্থই অনর্থ, নজরে আনা হবে মুখ্যমন্ত্রীর?
এই সময় | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
লোকসভা নির্বাচনের দিন গোনা শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মাসখানেক ধরে চরম অচলাবস্থা চলছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদে। আর সেই অচলাবস্থার পিছনে রয়েছে টাকা। এমনকী পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আজ জঙ্গলমহল সফরে দুর্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে পৌঁছলে তাঁর কানেও বিষয়টি তোলা হতে পারে।গত ২৯ জানুয়ারি অর্থ দপ্তরের স্থায়ী সমিতির বৈঠকে কর্মাধ্যক্ষরা জেলা পরিষদের নিজস্ব ফান্ডে কোন খাতে কত টাকা রয়েছে তা জানতে চান। বর্তমানে জেলা পরিষদের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তার জবাব পাননি কর্মাধ্যক্ষরা। জানা যায়নি জেলা পরিষদে সম্পত্তি বা টোল বাবদ জমা পড়া টাকার পরিমাণ।কোনও প্রশ্নেরই জবাব না মেলায় সভা শেষ না করেই কর্মাধ্যক্ষরা মিটিংয়ের মাঝেই বেরিয়ে আসেন। তার পর থেকে কোনও কর্মাধ্যক্ষ বা সদস্যরা কেউ জেলা পরিষদে পা রাখেননি। এই বিষয়ে জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ কালোবরণ মণ্ডল বলেন, ‘কর্মাধ্যক্ষদের চাহিদা অনুযায়ী তথ্যগুলো না দিয়ে কেন অন্ধকারে রাখা হবে। সেদিনের বৈঠকে আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। পূর্ত দপ্তরের কাজকর্ম কী হচ্ছে তা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ জানেন না, রানিগঞ্জে যে বাজার, তার উন্নয়নেরই বা কী হলো, অথবা সেখান থেকে কোনও টাকা আসছে কি না, এসব জানতে চেয়েছিলাম।’যোগ করেন, ‘যে টোল ট্যাক্স জেলা পরিষদের আওতায় আছে তাতেই বা কত অর্থ আসছে, বা আদৌ আসছে কিনা, এসব জানতে চাওয়ার অধিকার নির্বাচিত সদস্যদের সকলেরই আছে। আমি রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক সহ দলীয় নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছি। অচলাবস্থা চলার কথাও জানিয়েছি।’হুমকির সুরে তিনি বলেন, ‘যদি এভাবে অন্ধকারে রেখে জেলা পরিষদ চলে তাহলে আমি অধ্যক্ষর পথ থেকে পদত্যাগ করব। তখন শুধু দলের হয়ে কাজ করে যাব।’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউড়িকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এগুলো প্রশাসনিক ব্যাপার। এ নিয়ে আমি সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছু বলব না।’পূর্ত দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যা কিছু অভিযোগ সেটা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষকে জানিয়েছি।’ একই ভাবে জনস্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ আরমান বলেন, ‘২৯ জানুয়ারির পর আর জেলা পরিষদে যাচ্ছি না। এই সব বিষয়ে যা বলার দলের উচ্চতম নেতৃত্বকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে বলা হয়েছে।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক কর্মাধ্যক্ষ বলেন, ‘জেলা পরিষদের নিজস্ব ফান্ডে কোথায় কত অর্থ পড়ে রয়েছে তা আমরা জানি না। কর্মাধ্যক্ষদের জেলা জুড়ে কাজ করতে হয়। তাহলে তাঁরা যাতায়াত করলে ট্রাভেলিং অ্যালাউন্স পাওয়ার কথা। সেটা নিয়ে গত ৬ মাসে কোনও আলোচনা হয়নি। সেটাও তাঁরা করছেন না। একদিকে ঝাড়খণ্ড-বাংলা অন্য দিকে পূর্ব বর্ধমানের সীমানা পর্যন্ত এলাকায় বাসে ঘুরে দপ্তরের কাজ করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।’কর্মাধ্যক্ষরা মুখে বলছেন, লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের কেন্দ্রে তাঁরা দলকে ভালো লিড এনে দেবেন কিন্তু, বাস্তব ছবি আদৌ সুখকর নয়।