আর চার দেওয়ালের ঘেরাটোপে নয়, সংসারে আসা নতুন প্রজন্মের সঙ্গে এ বার প্রকৃতির উন্মুক্ত পরিবেশেই নিশ্চিন্তে সংসার পাততে শুরু করল ওরা। হরিয়ানার পিঞ্জরের পর এ বার বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়া কৃত্রিম শকুন প্রজনন কেন্দ্র থেকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া এক জোড়া ‘হোয়াইট ব্যাকড’ শকুন দম্পতি বক্সা বাঘবনের উঁচু গাছের মগডালের বাসায় নিশ্চিন্তে বড় করে তুলছে শকুন ছানাদের।রবিবার বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ওই শকুনের বাসার ছবি প্রকাশ করেছে। দেশের মধ্যে প্রথম প্রকৃতিতে প্রজননের ঘটনাটি ঘটেছিল হরিয়ানার পিঞ্জরে ২০২৩ সালে। সেগুলিও ছিল প্রকৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা ‘হোয়াইট ব্যাকড’ শকুনের নিজস্ব বাসায়। আর দেশের মধ্যে দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে এ বার সামনে এল বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের এই প্রাকৃতিক প্রজনন।রাজাভাতখাওয়া কৃত্রিম শকুন প্রজনন কেন্দ্র থেকে গত তিন বছরে বেশ কয়েকটি ধাপে মোট ২৩টি ‘হোয়াইট ব্যাকড’ মাঝবয়সী শকুনকে আমেরিকা থেকে আমদানি করা উপগ্রহ নিয়ন্ত্রিত ‘প্ল্যাটফর্ম টার্মিনেটেড টারমিনাল’ পরিয়ে প্রকৃতিতে ছাড়া হয়েছিল, যাতে ২৪ ঘণ্টার জন্য ওই শকুনদের গতিবিধির উপর কড়া পর্যবেক্ষণ চালানো যায়।বন দপ্তরের দাবি, এখন সেই শকুন ছানারাই প্রজননে সক্ষম হয়ে উঠেছে। আদর্শ পরিবেশের কারণে এখন সুফল মিলতে শুরু করেছে। সামগ্রিক ঘটনাপ্রবাহে উচ্ছ্বসিত বনকর্তারা। কারণ ২০০৬ সাল থেকে রাজ্যের একমাত্র কৃত্রিম শকুন প্রজনন কেন্দ্র রাজাভাতখাওয়ায় স্লেন্ডার বিল্ড, লং বিল্ড, হোয়াইট ব্যাকডের মতো প্রায় অবলুপ্ত শকুনদের নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে আসছেন দেশের একমাত্র শকুন সংরক্ষক সংস্থা বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির বিশেষজ্ঞরা।বারবার এখানে ছুটে আসেন অধ্যাপক বিভুপ্রকাশ ও সচিন রানাডের মতো পৃথিবী বিখ্যাত শকুন বিশেষজ্ঞরা। অবশেষে কৃত্রিম পরিবেশের বদলে প্রকৃতিতে প্রজননে সাফল্য আসায়, রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্রের গুরুত্ব এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গেল বলে দাবি রাজ্য বন দপ্তরের।ওই শকুন প্রজনন কেন্দ্রের দেখভালের দায়িত্বে থাকা শকুন বিশেষজ্ঞ সৌম্য চক্রবর্তী বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদি এই পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল কঠোর পর্যবেক্ষণের উপর। শুধুমাত্র উপগ্রহের সংকেতের উপর নির্ভর না করে আমরা ২৪ ঘণ্টা ধরে গভীর নিরীক্ষণ চালিয়েছি। প্রয়োজন মনে করলেই পৌঁছে গেছি গ্রাউন্ড জিরোয়। অবশেষে সাফল্য মেলায় প্রকৃতিতে শকুন প্রজননের এক নতুন দিগন্ত খুলে গেল।’অধ্যাপক বিভুপ্রকাশ বলেন, ‘প্রকৃতিতে শকুনদের নতুন ঠিকানা গড়ে দেওয়ার কাজটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণটা ডাইক্লোফেনাক। গবাদিপশুদের দেহে ব্যথা কমানোর ওষুধ ডাইক্লোফেনাক প্রয়োগ করা হয়। পরে কোনও কারণে তাদের মৃত্যু হলে সেই দেহাবশেষ খেলে শকুনের শরীরেও ডাইক্লোফেনাক ঢুকে পড়ে। এর প্রভাবে কিডনি বিকল হয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বসেছিল ঝাড়ুদার পাখিরা। ডাইক্লোফেনাক মুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বহু খড়কাঠ পোড়াতে হয়েছে।’বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প পশ্চিমের উপক্ষেত্র অধিকর্তা প্রবীণ কাসোয়ান বলেন, ‘গভীর জঙ্গলের উঁচু গাছে একজোড়া হোয়াইট ব্যাকড শকুন দম্পতি যে ডিম পেড়েছে, তা আমরা একমাস আগে থেকেই জানতাম। এখন ওরা একদম সুস্থ ছানাদের নিয়ে সুখেই আছে নিশ্চিত হওয়ার পর ছবি প্রকাশ্যে আনা হলো। এটা একটা বড় মাইলস্টোন।’