লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচনে যাতে কেউ কোনও প্রভাব ফেলতে না পারে সেই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। একই লোকসভা কেন্দ্রে পুলিশ আধিকারিকদের বদলি করা যাবে না। লোকসভা ভোটের আগেই এই মর্মে দেশের সব রাজ্যে জাতীয় নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে।বেশ কিছু রাজ্যে নির্বাচনের সময় ঘুরিয়ে কমিশনের নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল রাজ্য সরকারগুলির বিরুদ্ধে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে একশ্রেণির আমলাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। মূলত এই অভিযোগ করতে দেখা গিয়েছে বিরোধী দলগুলিকে। তারপরই নির্বাচন কমিশন নড়েচড়ে বসে। শনিবার এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের একটি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন জানিয়েছে, বদলির ক্ষেত্রে পুলিশ আধিকারিকদের একই লোকসভা কেন্দ্রে পাঠাতে পারবে না রাজ্যগুলি। দেশের লোকসভা কেন্দ্রগুলির সীমানা পুনর্বিন্যাস হওয়ার পর অনেক আসনই তৈরি হয়েছে দুই বা তার বেশি জেলার অংশ নিয়ে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রাজ্য প্রশাসনের পছন্দসই পুলিশ আধিকারিকদের অন্য জেলায় বদলি করা হলেও একই লোকসভায় রয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। যেসব অফিসারদের এক জায়গায় তিন বছর হয়ে গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের অন্যত্র বদলি করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের বার্তা, একই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পার্শ্ববর্তী জেলায় বদলি করা যাবে না পুলিশ অফিসার বা ভোটের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের। যে পুলিশ আধিকারিকেরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে নির্বাচনী কাজে যুক্ত থাকেন তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এই নিয়ম।কমিশনের নিয়মবিধিকে ফাঁকি দিতেই অনেক সময় পছন্দের আধিকারিকদের একই লোকসভা কেন্দ্রের রেখে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে। অনেক সময় তাঁরা একাধিক জেলা নিয়ে গঠিত লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে অন্য জেলায় বদল হয়েও একই ভাবে সেখানেই থেকে যান। এবার সেই নিয়মভঙ্গের সঙ্গে আপস করা হবে না স্পষ্ট করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের যুক্তি, এই ধরনের নিয়মভঙ্গ হলে সুবিধা পায় কোনও একটি দল বা পক্ষ। এই নির্দেশ জাতীয় নির্বাচন কমিশনের রুটিন নিয়মাবলীর মধ্যেই পড়ে। এমনকী, যে আধিকারিকরা 'হোম ডিস্ট্রিক্ট'-এ নিযুক্ত আছেন তাঁদেরও বদলি করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কমিশনের এই নিয়মবিধি প্রযোজ্য হবে না সেই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে যেগুলিতে সর্বোচ্চ দু'টি লোকসভা আসন রয়েছে।উল্লেখ্য, আগামী ৩ মার্চ লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসছেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা। তার আগে শনিবার পরিস্থিতি পর্যোলোচনায় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব সব জেলাশাসক (ডিএম) ও পুলিশ সুপার (এসপি)-দের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন ডিএম, এসপিদের। অভিযোগ পেলে দ্রুত পদক্ষেপের বার্তাও দিয়েছেন তিনি। সূত্র মারফত খবর, লোকসভা ভোটের আগে চলতি মাসেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর একাংশ রাজ্য়ে চলে আসতে পারে। লোকসভা নির্বাচনের আগে জেলা স্তরের আমলাদের বদলি করার নিয়ম আছে। উল্লেখ্য, কোনও আমলা যদি সংশ্লিষ্ট জেলায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে নিযুক্ত থাকেন, সেই ক্ষেত্রে এই বদলি বাধ্যতামূলক। যাতে ভোটে সেই আমলা প্রভাব খাটাতে না পারে, তার জন্যেই নির্বাচন কমিশনের এই নিয়ম। তবে অনেক ক্ষেত্রেই সেই নিয়মের ফাঁক গলে পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকারগুলি।