বড়দিনের ছুটিতে যখন সমবয়সিরা আনন্দ করছে, তখন মরণ-বাঁচনের লড়াই লড়ছিল একরত্তি। বাবা-মায়ের সঙ্গে বাইকে চড়ে যাওয়ার সময়ে ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে রাস্তায় পড়েছিল পাঁচ বছরের বালিকা। পথদুর্ঘটনায় তার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মুখমণ্ডল। রক্তে ভেসে যাওয়া মুখের ডান দিকের টিস্যু ও মাংস আলাদা হয়ে গিয়েছিল হাড় থেকে। ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ত্বক, চামড়া, নাক ও চোখ।একযোগে নানা শাখার চিকিৎসকদের অসাধ্য সাধনে পাঁচ বছরের সেই বালিকার সফল ফেসিয়াল রিকনস্ট্রাকশন করে তাকে নবজীবন দিলো শহরের এক বেসরকারি হাসপাতাল। সোমবার কলকাতায় আয়োজিত একটি সাংবাদিক বৈঠকে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত ছিল সেই বালিকাও। গত ২৫ ডিসেম্বর বাবা-মায়ের সঙ্গে ক্রিসমাস উদযাপনে বেরিয়েছিল ঝাড়খণ্ডের গিরিডির বাসিন্দা, ক্লাস ওয়ানের গীতাঞ্জলি কুমারী। সে সময়েই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সে।ট্রাকের ধাক্কায় তিন জনে বাইক থেকে ছিটকে পড়লেও বাবা-মায়ের তেমন কোনও চোট-আঘাত লাগেনি। কিন্তু মারাত্মক জখম হয় গীতাঞ্জলি। স্থানীয় হাসপাতালে তাকে কোনও ক্রমে একটু স্থিতিশীল করার পরেই চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, অত্যাধুনিক মাল্টি সুপার-স্পেশ্যালিটি চিকিৎসার প্রয়োজন বালিকার। দেরি না করে তিনি কলকাতায় রেফার করেন গীতাঞ্জলিকে। ২৬ ডিসেম্বর তার পরিবার তাকে ভর্তি করে মুকুন্দপুরের মেডিকা সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। দু’ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে প্লাস্টিক সার্জেন অখিলেশকুমার আগরওয়ালের হাতযশে মুখমণ্ডল স্বাভাবিক করা হয় বালিকার।সফল অস্ত্রোপচারের পরেও অবশ্য সবটা স্বাভাবিক হয়নি চট করে। সুস্থ হয়ে উঠতে গীতাঞ্জলির সময় লেগেছে যথেষ্টই। পাঁচ সপ্তাহ ধরে চলেছে রিহ্যাব প্রোগ্রাম। অখিলেশের পাশাপাশি ব্রেন-স্পাইন সার্জেন সুনন্দন বসু ও শিশুরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক নিকোলা জুডিথ ফ্লিনের তত্ত্বাবধানে চলেছে চিকিৎসা। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় ছুটি পেয়েছে গীতাঞ্জলি। এদিন চেক-আপে এসেছিল সে।সাংবাদিক বৈঠকে গীতাঞ্জলির পাশাপাশি মেডিকা কর্তৃপক্ষ হাজির করেছিলেন তার বাবা বিকাশ গুপ্তা ও মা পাম্মি দেবীকেও। তাঁরা বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলেন না যে তাঁদের মেয়ে এত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। পেশায় হকার বিকাশ বলছিলেন, ‘মেয়ের চিকিৎসায় যে অর্থ বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ মেডিকার কাছে।’