পথকুকুরদের প্রাণ বাঁচাল গুগল! পাড়ার ৬টি পথকুকুরকে বিষ খাইয়ে দিয়েছিল কে বা কারা! টের পেয়ে যান এলাকাবাসী। কুকুরদের বাঁচাতে গুগলের শরণাপন্ন হন তাঁরা। ইন্টারনেট খুঁজে সেই মতো চারকোল এবং ঘাস খাওয়ানো হয় কুকুরদের। কুকুররা বমি করায় কেটে যায় বিষের প্রভার। একটি মারা গেলেও অন্তত চারটি কুকুর প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। পরে প্রাণী চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দিব্যি সুস্থও হয়ে উঠেছে তারা। মঙ্গলবার সকালে এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবার শালতলার বাসিন্দারা।এদিন সকাল পৌঁনে ন’টা নাগাদ শালতলা এলাকায় পুলিশকর্মী মৌসুমি মাহাতোর বাড়ির সামনে কয়েকটি কুকুর শুয়ে ছটফট করতে থাকে। তাদের মুখ থেকে গ্যাঁজলা বের হচ্ছিল। এ দৃশ্য দেখে মৌসুমি তাঁর প্রতিবেশীদের ঘটনাটি জানান। পথকুকুরগুলির এমন আচরণের কারণ কিছুক্ষণে মধ্যেই বুঝতে পারেন সকলে। রিঙ্কি বিশ্বাস, তনুশ্রী চক্রবর্তী, মানিক চক্রবর্তীরা বলেন, ‘কেউ কুকুরগুলোর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে বুঝতে পারি। ওরা অসহায় ভাবে ছটফট করছিল।’বছরভর পাড়ার পথকুকুরগুলিকে তিনবেলা খেতে দেওয়ার পাশাপাশি অসুস্থ হলে চিকিৎসাও করান শালতলার বাসিন্দারা। পথকুকুরদের দাপটে এলাকায় চুরি-ছিনতাই নেই বললেই চলে। মৌসুমি বলেন, ‘ওদের যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বিষ দেওয়া হয়েছে বুঝতে পেরে গুগলে সার্চ করি। জানতে পারি, কুকুরদের চারকোল, ঘাস এ সব খাওয়ালে ওরা বমি করবে। তাতে বিষ বেরিয়ে গেলে ওরা সুস্থ হতে পারে।’ এর পরে তাই করা হয়।শালতলার বাসিন্দা সৌমিতা ঘোষ, জয়দেব দাসরা বলেন, ‘ছয়টি কুকুরকে খাবারের সঙ্গে বিষ খাইয়ে ছিল। এরমধ্যে সকালে একটি কুকুর মারা গিয়েছে। বিকেল পর্যন্ত একটি কুকুরের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বাকি চারটি কুকুর একাধিকবার বমি করেছে। পরে পশু চিকিৎসক শঙ্কর পাল এসে ওষুধ ও ইনজেকশন দেন। বাকি চারটে কুকুর আপাতত অনেকটাই সুস্থ।’ঝাড়গ্রাম জেলার প্রাণীসম্পদ দপ্তরের সহ-অধিকর্তা তথা পশু চিকিৎসক চঞ্চল দত্ত বলেন, ‘মেডিকেটেড চারকোল, ঘাসের রস খাওয়ালে বিষকে অনেকটা অ্যাবজ়রব করে ফেলে এবং বমির মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে আসে এটা ঠিক। তবে শুধুমাত্র গুগুল সার্চ করে এভাবে কিছু খাইয়ে দেওয়া হিতে-বিপরীত হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে কোনও পশু হাসপাতাল বা পশু চিকিৎসকের মতামত নেওয়া জরুরি।’এলাকার পথ কুকুরদের বিষ খাওয়ানোর কথা জানতে পেরে সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে গণস্বাক্ষর করে একটি দাবিপত্র তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। পুলিশ ওই দাবিপত্রের ভিত্তিতে ঝাড়গ্রাম থানায় একটি জেনারেল ডায়েরি রুজু করেছে। তার ভিত্তিতে তদন্তও শুরু করেছে পুলিশ। কে বা কারা পথকুকুরকে বিষ খাইয়েছিল, তা জানতে এলাকায় থাকা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি থেকে পুলিশ ফুটেজও সংগ্রহ করছে।