রেশন দুর্নীতির পরে এবার জব কার্ড কেলেঙ্কারি! কেন্দ্রীয় সংস্থার সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়তে চলেছেন সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান।জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিরকুটের জেরে রেশন দুর্নীতির মামলার তদন্তে সরবেড়িয়ায় শাহজাহানের ডেরায় গিয়েছিল ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসারেরা মার খেয়ে সেখান থেকে ফিরে আসার পরে পরিস্থিতি রাতরাতি পাল্টে যায়। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ নথিভুক্ত করার জন্য সরকারি উদ্যোগে খোলা হয় অভিযোগ কেন্দ্র। এবার সেখানেই জমা পড়া জব কার্ড দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের তদন্তে নামতে চলেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।সন্দেশখালি-১ এবং ২ ব্লকের মোট কতজন বাসিন্দার সঙ্গে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে এভাবে দুর্নীতি করা হয়েছে, আপাতত সেই তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই বেড়মজুরের কাঠপোল, সন্দেশখালির থানা এবং বিডিও অফিসের কন্ট্রোল রুম ছাড়াও আরও পাঁচটি জায়গায় সাধারণ মানুষের লিখিত অভিযোগ জমা নেওয়া হচ্ছে।প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সেখানে অন্তত চল্লিশ শতাংশ অভিযোগ শুধুমাত্র জব কার্ড নিয়ে। আর প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাহজাহান, সিরাজুদ্দিন, শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দারের নামে। এরাই শুধু নন, এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এদের সঙ্গীদের বিরুদ্ধেও।কাঠপোলের ক্যাম্পে নিজের জব কার্ডের টাকা পাওয়ার জন্য সোমবার এসেছিলেন সোমরা ভুইয়া, দেবাশিস দাসেরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘আমরা কাজ করেছি। কিন্তু টাকা জমা পড়ার পরে হাতে একশো, দুশো টাকা দিয়ে বাকি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নিয়েছেন নেতারা। এখন সেই টাকা ফেরত পেলে আমাদের উপকার হয়।’অভিযোগ উঠেছে কোড়াকাটি গ্রাম থেকেও। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শাহাজাহানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সেলিম গাজি কৃষকদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ বিঘা জমি জোর করে দখল করেন। এরপর তিনি সেই জমির মালিকদের ১০০ দিনের প্রকল্পে যুক্ত করে নেন। সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে চাষিদের দিয়েই ‘খাল কেটে কুমির’ (এক্ষেত্রে নোনা জল ঢুকিয়ে নিজেরই জমির সর্বনাশ করা) আনার কাজটাও করানো হয়।’অদ্ভুত বিষয় হলো, মালিকদের কাউকেই জমি নেওয়ার বিনিময়ে ‘জল-কর(জমির বিনিময়ে টাকা) কিংবা ১০০ দিনের প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টাকাও দেওয়া হয়নি। এভাবেই স্থানীয় প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য রবিউল ইসলাম গাজি, আলি গাজি, মুস্তাফা কামাল গাজি এবং প্রাক্তন প্রধান শ্রীদাম হাউলিরা এলাকায় জোর করে জমি হাতিয়ে নিতেন বলেও অভিযোগ।বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, ‘অনেক ক্ষেত্রে আবার একশো দিনের টাকা গ্রামবাসীদের অ্যাকাউন্টে ঢুকলে সেখান থেকে নেতাদের ভাগ দিতে হতো। পাশাপাশি ভুয়ো নামেও জব কার্ড বানিয়ে টাকা তুলে নিতেন এই নেতারা।’গ্রামবাসীদের দাবি, ‘আমাদের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে প্রথমে তা জোর করে দখল করা হতো। এরপর সেই জমিতে জেসিবি মেশিন দিয়ে খাল কেটে সেখানে মাছচাষ করতেন নেতারা। প্রতিবাদ করে কোনও কাজ হয়নি। উল্টে পার্টি অফিসে ডেকে আমাদের মারধর করা হয়েছে। আশপাশে একাধিক গ্রামে একইভাবে জমি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।’শেখ শাহজাহান আত্মগোপন করার পরে প্রশাসন জমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেই এখন রোজ গড়ে অন্তত ৫০-৬০টি করে অভিযোগ জমা পড়ছে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে। প্রশ্ন উঠেছে, নিজেদের ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য কী করে সরকারি প্রকল্পে গ্রামবাসীদের দিয়ে কাজ করানো হতো?প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, ‘যে ভাবে অভিযোগ জমা পড়ছে তা থেকে স্পষ্ট, বিঘার পর বিঘা জমি দখল করে সেখানে গ্রামবাসীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিত শিবু,উত্তমরা। পরে আর টাকা দেওয়া হতো না।’ ইডি সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে থেকে তারা ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল।কিন্তু শুধুমাত্র সন্দেশখালি থেকে যেভাবে ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়া শুরু করেছে, তাতে খুব দ্রুত সেখানকার বিষয়টিও তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে চলেছে সাধারণ মানুষের জমা দেওয়া একাধিক অভিযোগপত্র। যেখানে ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে শাহজাহান শেখ এবং তাঁর বাহিনীকে।